বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী হিজবুল মুজাহেদিনের হুমকিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের কথা স্বীকার করেছে জম্মু ও কাশ্মিরের রাজ্য সরকার।
Published : 26 Sep 2018, 03:56 PM
শুক্রবারের পর থেকে চার দিনেই পদত্যাগকারী পুলিশ কর্মকর্তার সংখ্যা চল্লিশ ছাড়িয়ে গেছে বলে এক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে এনডিটিভি।
পুলিশের বিশেষ কর্মকর্তাদের (এসপিও) পদত্যাগের বেশ কয়েকটি ভিডিওকে ‘সন্ত্রাসীদের মিথ্যা প্রচার’ হিসেবে উড়িয়ে দেওয়ার কয়েকদিনের মাথায় রাজ্য সরকারের এ স্বীকারোক্তি এল।
যে হারে প্রচার চলছে, সে তুলনায় পদত্যাগকারী কর্মকর্তার সংখ্যা বেশ কম বলেও দাবি তাদের।
“রাজ্যে ৩০ হাজারেরও বেশি এসপিও আছে। যদি আপনি এর সঙ্গে পদত্যাগকারীদের তুলনা করেন, তাহলে তা খুবই নগণ্য,” বলেছেন জম্মু ও কাশ্মিরের মুখ্য সচিব বিভিআর সুব্রাম্মনিয়াম।
রাজ্যের তিন পুলিশ সদস্যকে অপহরণ ও হত্যার পর হিজবুল মুজাহেদিনের বিচ্ছিন্নবাদীরা ‘পদত্যাগ না হয় মৃত্যু’-র যে হুমকি দিয়েছিল তার প্রেক্ষিতে কর্মকর্তাদের এসব পদত্যাগের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল।
এনডিটিভি জানায়, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ভোরের আগেই দক্ষিণ কাশ্মিরের শোপিয়ানের বাড়ি থেকে তিন এসপিওকে তুলে নিয়ে হত্যা করেছিল। গ্রামের কাছের একটি বাগানে পাওয়া তিন পুলিশ সদস্যের মৃতদেহেই একাধিক গুলির চিহ্ন ছিল।
বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে পুলিশ সদস্যদের পদত্যাগে বাধ্য করছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের ভিডিওগুলোতেও দাবি করা হয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মিরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশ কর্মকর্তাদের ওই পদত্যাগের ভিডিওগুলোকে প্রথমে উড়িয়ে দেয়। ভিডিওতে দেখা যাওয়া ব্যক্তিরা এসপিও নন বলেও অনেক কর্মকর্তা সেসময় দাবি করেছিলেন।
“কিছু কিছু গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জম্মু ও কাশ্মির পুলিশের বিশেষ কর্মকর্তাদের (এসপিও) পদত্যাগের খবর দেওয়া হয়েছে। ওইসব প্রতিবেদন যে ভুয়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তা নিশ্চিত করছে জম্মু ও কাশ্মির পুলিশ। ক্ষতিকর উপকরণের মিথ্যা প্রচারের ওপর ভিত্তি করে ওই প্রতিবেদনগুলো করা হয়েছে,” বিবৃতিতে জানিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের পদত্যাগের ভিডিও ঠেকাতে দক্ষিণ কাশ্মিরের ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ করে দেয় রাজ্য সরকার।
কাশ্মিরের মধ্যে পুলওয়ামা, শোপিয়ান ও কুলগামের পরিস্থিতিই সবচেয়ে শোচনীয়, বলছে এনডিটিভি।
শোপিয়ানের কাচডোরা গ্রামের কনস্টেবল মুখতার আহমাদ জানান, পরিবারের সদস্যরাই তাকে পদত্যাগ করতে অনুরোধ করেছেন।
তিন পুলিশ কর্মকর্তার নির্মম হত্যাকাণ্ড তাদেরকে আতঙ্কিত করেছে, জানিয়েছেন মুখতার।
“আমি হুমকি পাচ্ছি। এখানকার পরিস্থিতি ভয়ানক। আমার স্ত্রী এবং বাবা-মা আমাকে পদত্যাগ করতে বলছেন, কারণ তারা তাদের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত। আমি এই হলফনামা ও পদত্যাগের জন্য যে ফরম জমা দিতে হয় তাও পেয়েছি,” দুটি কাগজ দেখিয়ে বলেন এ কনস্টেবল।
গত সপ্তাহে এক ভিডিওতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য বিশেষ করে এসপিওদের পদত্যাগ না করলে হত্যার হুমকি দিয়েছিল হিজবুল মুজাহেদিন।
“ইন্টারনেটে তোমাদের পদত্যাগ আপলোড কর, নাহলে পরিণতির মুখোমুখি হও,” ভিডিওতে এমনটাই বলেছিলেন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনটির শাখা উমর মাজিদ গোষ্ঠীর এক স্থানীয় প্রধান।
গোষ্ঠীটি অনেক গ্রামে পুলিশ সদস্যদের হুমকি দিয়ে পোস্টারও লাগিয়েছে, জানান নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।
নিরাপত্তা বাহিনীগুলোতে কাজ করা, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তথ্যের গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হিসেবে বিবেচিত স্থানীয় এসপিওদেরই মূলত এ হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদেরও।
পুলিশের বেশ কয়েকটি সূত্র পরে জানায়, দক্ষিণ কাশ্মিরেরই তিন হাজারের বেশি এসপিও আছে। এদের অনেককে ও তাদের পরিবারগুলোকে অন্যত্র নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে।
বাহিনীর যেসব সদস্যদের বাড়ি সমস্যা-সঙ্কুল এলাকায়, তাদের বাড়িতে না যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ ও বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা ।
পদত্যাগের হিড়িক ঠেকাতে এবং বিপজ্জনক এ প্রবণতা পাল্টে দিতে এসপিওদের প্রণোদনা দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।
পুলিশের বিশেষ কর্মকর্তাদের বেতন ৬ হাজার থেকে এক লাফে ১০ হাজার রুপি করারও প্রস্তুতি চলছে, জানিয়েছেন জম্মু ও কাশ্মিরের মুখ্য সচিব।
“সব এসপিওকে তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসপিওদের বেতনও কয়েক দিনের মধ্যেই বেড়ে যাবে,” বলেছেন সুব্রাম্মনিয়াম।