মিয়ানমারে নিপীড়ন থেকে রক্ষায় রোহিঙ্গাদের পাশে না দাঁড়ানোয় অং সান সু চি মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন বলে মনে করেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি।
Published : 16 Feb 2018, 05:16 PM
মিয়ানমারে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা লির মতে, অপরাধ সংঘটনে সহযোগিতা বা তা রোধে কিছু না করার জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়।
যুক্তরাজ্যের সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল ফোরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একথা বলেছেন ইয়াংহি লি। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর যা হয়েছে, তা কোনো জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্যবস্তু করে নিপীড়ন চালানো- একথার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেন তিনি।
সেখানে কি রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নিধনের চেষ্টায় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে কি না সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “একদম।”
“গণহত্যা নিরূপনে আইনিভাবে নির্ভূল হতে হবে এবং এটা একটা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হতে হবে। তাই আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, সেখানে গণহত্যার বৈশিষ্ট্য রয়েছে।”
রাখাইনে যে কয়জন রোহিঙ্গা নিহতের খবর প্রকাশ হয়েছে তার চেয়ে এই সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করেন ইয়াংহি লি।
বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ওপর সমীক্ষার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা বিষয়ক দাতব্য সংস্থা মিতসঁ সঁ ফ্রঁতিয়ে (এমএসএফ) বলেছে, মিয়ানমারে ২৫ অগাস্ট সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর একমাসেই অন্তত ৬ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।
এ বিষয়ে সু চির অবস্থান নিয়ে তার মনোভাব জানতে চাইলে লি বলেন, “হয় তিনি বিষয়টি অস্বীকার করছেন অথবা প্রকৃত ঘটনা থেকে তিনি অনেক দূরে আছেন।”
সাক্ষাৎকারগ্রহীতা মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী অং সান সু চিকে ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের দেবী’ অভিহিত করলে জাতিসংঘের বিশেষ দূত লি বলেন, “তিনি কখনোই মানবাধিকারের দেবী ছিলেন না। তিনি একজন রাজনীতিক ছিলেন এবং এখনও তিনি একজন রাজনীতিক।”
সু চির বিরুদ্ধে ‘গুরুতর অপরাধ’ প্রমাণিত হবে কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অপরাধ সংঘটনে সহযোগিতাও জবাবদিহির আওতায় থাকে।
এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে লি বলেন, “তারা বলে, আমি ন্যায়নিষ্ঠ নই এবং পক্ষপাতিত্ব করি। প্রতিবার আমি জিজ্ঞেস করেছি, কোন বিষয়ে আমি পক্ষপাতিত্ব ও অন্যায্য কিছু করেছি বা বলেছি, তার কোনো স্পষ্ট জবাব আসেনি।”
“যখন আমি বলেছি, রোহিঙ্গাদের এটা-ওটা, তখন মিয়ানমার সরকার বলেছে, ‘আমাদের কোনো রোহিঙ্গা নেই’। আমি নীতিগতভাবে এটা মেনে নিতে পারিনি। তাই কি পক্ষপাতিত্ব?
“যখন আমি বলেছি, সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নিবর্তনমূলক গ্রেপ্তার বা ধর্ষণ হয়েছে, তারা (মিয়ানমার সরকার) তখন বলে, ‘না, আমরা কখনও এটা করিনি।”
“আমি বলছি যে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে সব বৈষম্য ও নিপীড়নমূলক আইন আছে সেগুলো বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আপনারা আবারও একই ঘটনা ঘটতে দেখবেন। এমনকি, তারা ফিরে যাওয়ার পর।”
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার বছরের পর বছর মুসলিম রোহিঙ্গাদের ‘কানা গলিতে গবাদি চরানোর’ মতো আচরণ করছে বলে মনে করেন ইয়াংহি লি।
“এবং বাস্তবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে এটাই হচ্ছে। মানসিক ও শারীরিকভাবে তাদের খুব ক্ষুদ্র এলাকায় বিচারণ করতে হয়।”