গুজরাটে ২০০২ সালে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গার সময় বর্বর হত্যাকাণ্ডের দায়ে ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে ভারতের একটি আদালত।
Published : 17 Jun 2016, 02:10 PM
গুলবার্গ সোসাইটি হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ২৪ জনের মধ্যে ১২ জনকে সাত বছরের ও একজনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আহমেদাবাদের বিশেষ আদালত শুক্রবার রায় ঘোষণার সময় ওই ঘটনাকে ‘সভ্য সমাজের ইতিহাসে অন্ধকারতম দিন’ বলে আখ্যায়িত করেন।
প্রায় দেড় দশক আগের ওই হামলার ঘটনায় ৬৯ জন মানুষকে কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করে উম্মত্ত একদল লোক।
একটি ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে ৬০ হিন্দু পূণ্যার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় উসকে দেওয়া ওই দাঙ্গায় সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যু হয়, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন মুসলিম।
সেসময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই দাঙ্গা বন্ধে তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি সমালোচনা রয়েছে।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমার চোখের সামনে এহসান জাফরিকে খুন করা হয়েছে, এটা মোটেই ন্যায়বিচার হয়নি।”
গুলবার্গ হত্যাকাণ্ডের বেঁচে যাওয়া অনেকে বলেন, উম্মত্ত লোকেরা বাড়িতে হামলা চালালে আত্মরক্ষার জন্য তিনি নিজের অস্ত্র থেকে গুলি ছুড়েছিলেন।
মিসেস জাফরি বলেন, তার স্বামী নরেন্দ্র মোদীর কাছে সাহায্য চেয়েও পাননি।
ওই হত্যাকাণ্ড বন্ধে পদক্ষেপ না নেওয়ায় সমালোচিত মোদি বরাবরই অপরাধের দায় অস্বীকার করে আসছেন। এমনকি ওই দাঙ্গার জন্য মুখমন্ত্রী হিসেবে তিনি একবারের জন্যও ক্ষমা চাননি।
২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টও পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকায় তার বিচার করতে রাজি হয়নি।
এই গুলবার্গ সোসাইটি গণহত্যার মধ্যে দিয়েই গুজরাটজুড়ে জ্বলে উঠে সংখ্যালঘু মুসলিমবিরোধী দাঙ্গার আগুন, যার সূত্রপাত হয় ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গোধরা স্টেশনে সবরমতী এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ডে ৬০ জন করসেবকের প্রাণহানির মধ্য দিয়ে।
পর দিন সকাল সকালে আহমেদাবাদের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ চমনপুরা এলাকায় মুসলিমবিরোধী স্লোগান দিতে দিতে হাজির হয় এক বিশাল বাহিনী, তারা গুলবার্গ হাউজিং সোসাইটিতে হামলা চালায়।
চল্লিশটি বহুতল ভবনের এই আবাসিক এলাকার প্রায় সবগুলো উচ্চ-মধ্যবিত্ত মুসলিম ব্যবসায়ী পরিবার। হামলায় ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে তাদের অনেকেই ওই দিন আশ্রয় নিয়েছিলেন সাংসদ এহসান জাফরির বাড়িতে।
থানায় ফোন করে অভিযোগ করেও কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি। হিংস্র হয়ে ওই বাহিনী একের পর এক বাড়িগুলোর দরজা বন্ধ করে দিয়ে সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়, সঙ্গে চলতে থাকে মারধর। পাশাপাশি বাড়িগুলোর অর্থ ও মালামাল লুটপাট করে হামলাকারীরা।
প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে চলা ওই নৃশংস গণহত্যাকাণ্ডে সাংসদ জাফরিসহ ৩৫ জন জীবন্ত পুড়ে মারা যান; খুন করা হয় আরও ৩৪ জনকে।
এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব প্রথমে গুজরাট পুলিশকে দেওয়া হলেও ২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট একটি স্বাধীন বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠন করে।
বিশেষ এই তদন্ত দলের অনুসন্ধানের আওতায় থাকা দাঙ্গার সময় সংঘটিত ১০টি প্রধান ঘটনার মধ্যে গুলবার্গ হত্যাকাণ্ড অন্যতম। বাকিগুলোর মধ্যে কয়েকটিতে দণ্ড দেওয়া হয়েছে।
গুলবার্গ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোট ৬৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ২০০৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বিচার শুরু হয়। এদের মধ্যে মামলা চলাকালীন ছয় জনের মৃত্যু হয় এবং একজন পলাতক রয়েছে।
এই মামলায় আট নারীসহ ৩৩৮ জনের সাক্ষ্য নেওয়ার পর গত ২ জুন বাকিদের মধ্য থেকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) নেতা অতুল বৈদ্যসহ ২৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।