বয়সের ঘড়ির কাঁটা পেছনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, এমন পণ্যের কাটতি বাজারে সব সময়ই বেশি। আর সেখানেই কোলাজেনের গুরুত্ব।
ত্বক টানটান রাখার জাদুকরী প্রোটিন হল এই কোলাজেন। মানুষের শরীরে কোলাজেন প্রোটিন প্রচুর পরিমাণে থাকে। তরুণাস্থির ৬০ শতাংশ এই প্রোটিন দিয়েই তৈরি হয়। অন্যান্য যোজককলা, পেশি ও হাড়ের মতো সন্ধিকলাতেও কোলাজেন রয়েছে।
মুখে ও গায়ের ত্বক পেলব ও সুগঠিত রাখতে কোলাজেন খুব জরুরি।
কিন্তু বয়স বাড়তে থাকলে শরীরে কোলাজেন উৎপাদনের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে গায়ে ব্যথা ও যন্ত্রণা বাড়তে থাকে। শরীরে, বিশেষ করে মুখে বার্ধ্যক্যের ছাপ আসে ও বলিরেখা দেখা দেয়।
প্রখর রোদ, ধূমপান, দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক চাপে ভোগা, রাত জাগা এবং ব্যায়ামে ঘাটতি এই বুড়িয়ে যাওয়ার গতি ক্রমশ বাড়িয়ে তোলে।
চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ মুছে ফেলার ইচ্ছে হয় সবারই; এই আকাঙ্ক্ষাই ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী ৪০০ কোটি ইউএস ডলারের বাজার গড়ে দিয়েছে।
২৮ রকম কোলাজেনের মধ্যে বাজারে সুস্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যর জন্য বিভিন্ন কোলাজেন পণ্য মিলছে।
শুকর, মুরগী ও মাছ থেকে কোলাজেন সংগ্রহ করা যায়।
বাজারে ৩৪ শতাংশ কোলাজেনের উৎস অবশ্য গরু।
এর কারণ ব্যাখ্যা করে গ্র্যান্ড ভিউ রিসার্চ বলছে, কম খরচে ব্যাপক সংখ্যক গবাদিপশু পাওয়া যায়।
যদি কেউ ত্বকের নমনীয়তা হারাতে দেখে বিলাপ করেন, তার জন্য রয়েছে দারুণ মোড়কে একটি কোলাজেন ভরপুর ক্রিম।
এই পদ্ধতি একবার পরখ করে দেখা যেতেই পারে, তবে সময় এভাবে কার্যকারিতা পুরোপুরি পাওয়া যায় না।
কোলাজেন কাজ করে মূলত ত্বকের তলদেশের স্তরে। কোলাজেন ক্রিমের বড় ফাইবার ত্বকের উপরের স্তর ভেদ করে নিচে পৌঁছতে পারে না।
এরপরও বড় বড় ব্র্যান্ডগুলোর কোলাজেন সমৃদ্ধ ক্রিমের জনপ্রিয়তা বাড়ছেই।
ত্বক এবং হাড়, পেশি, অস্থিসন্ধির জন্য জন্য কোলাজেন I, II, III ধরন বেশ কার্যকর।
ক্যাপসুল অথবা পাউডার হিসেবে এই কোলাজেন বাজারে পাওয়া যায়।
মুখে সেবন করলে ‘হাইড্রোলাইজড কোলাজেন’ ও ‘কোলাজেন পেপটাইডস’ ধরনের কোলাজেন শরীরের ভেতরে সহজেই ভেঙে যায়; সহজে হজমও করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রে অভিনয়শিল্পী জেনিফার অ্যানিস্টন কোলাজেনের অপর নাম দিয়েছেন, ‘বিশেষ রকম আঠা, যা সবকিছু একসঙ্গে বেঁধে রাখতে সক্ষম।’
এই তারকা ভাইটাল প্রোটিন ব্র্যান্ডের চিফ ক্রিয়েটিভ অফিসার। তিনি এই ব্র্যান্ডের কোলাজেন পাউডার নিজে সেবন করছেন বহু বছর ধরে।
যদিও গার্ডিয়ান সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, নেসলের এই ব্র্যান্ডের সরবরাহকারীদের খামারের সঙ্গে বন নিধনের যোগসূত্র রয়েছে।
বলিরেখা মুছে ফেলতে ও ঠোঁট মোটা করতে ইনজেকশন দিয়ে ত্বকে কোলাজেন বাড়ানো হতো।
এখন অবশ্য কোলাজেনের বদলে হাইয়ালুরোনিক এসিড দিয়ে ত্বকের ঘাটতি ভরপুর করা হয়; যা কয়েক মাসের মধ্যেই ভেঙে যায়। কারও কারও বেলায় ত্বকে চুলকানিও হয়।
ভিগান কোলাজেন নামে এক ধরনের সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায় বাজারে। এতে আসল কোলাজেনের উপস্থিতি নেই। উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে সংগ্রহ করা ভিটামিন ও মিনারেল দিয়ে এ ধরনের সাপ্লিমেন্ট বানানো হয়, যা শরীরের কোলাজেন উৎপাদন বাড়াতে ভূমিকা রাখে।
অথবা উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে অ্যামাইনো এসিড সংগ্রহ করা যায়, যা কোলাজেনেও থাকে।
ইনসুলিন যেভাবে বানানো হয়েছিল, গবেষকরা এখন কয়েক ধরনের ইস্ট ও ব্যাকটেরিয়ার জিনগত পরিবর্তন থেকে মানুষের উপযোগী টাইপ ওয়ান কোলাজেন বানানোর চেষ্টা করছেন।
গার্ডিয়ান বলছে, এখন শুধুই অপেক্ষার পালা।