যুক্তরাষ্ট্রে তিন দশকে স্তন ক্যান্সারে মৃত্যু কমেছে ৪৩%

যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ নারীর চেয়ে কালো নারীরা স্তন ক্যান্সারে কম আক্রান্ত হন। কিন্তু তাদের বেলায় মৃত্যু হার ৪০ শতাংশ বেশি। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2022, 07:17 AM
Updated : 13 Oct 2022, 07:17 AM

স্তন ক্যান্সারে মৃত্যুর হার অনেকটাই কমে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রে, এমনটা জানাচ্ছে নতুন এক গবেষণা।

তবে সংখ্যায় কম হলেও কালো নারীদের বেলায় মৃত্যুর ঘটনা এখনও দেখা যাচ্ছে।

আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির এ গবেষণা প্রতিবেদন এ সপ্তাহে প্রকাশ করেছে সিএ: এ ক্যান্সার জার্নাল ফর ক্লিনিশিয়ানস।

গবেষণায় বলা হচ্ছে, ১৯৮৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত স্তন ক্যান্সারে মৃত্যুর হার কমে এসেছে ৪৩ শতাংশ। এই তিন দশকে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন চার লাখ ৬০ হাজার রোগী।

গায়ের রঙের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শ্বেতাঙ্গ নারীর চেয়ে কালো নারীরা স্তন ক্যান্সারে কম আক্রান্ত হন। কিন্তু কালো নারীদের বেলায় মৃত্যু হার ৪০ শতাংশ বেশি। 

আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির সারভেইলল্যান্স রিসার্চের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক পরিচালক রেবেকা সিজেল বলেন, “কালো নারীদের মৃত্যু হারও কমছে। যেমন অন্যান্য ক্ষেত্রেও তাদের অবস্থানের উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু এরপরও ওই পার্থক্যটুকু চোখে পড়ছেই।”

রেবেকা সিজেল এই গবেষণার জ্যেষ্ঠ লেখকও। তিনি বলেন, “স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা নিতে গিয়ে স্বাস্থ্যখাতের প্রতিটি পর্যায়ে কালো নারীরা যে অবহেলার শিকার হন, তার নমুনা আমরা দেখেতে পেয়েছি। নিম্নমানের ম্যামোগ্রাফি রিপোর্ট থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসার মাঝের সময়টুকুতে বিলম্বের মত ঘটনাও এর মধ্যে রয়েছে।

“তাছাড়া রোগ ধরা পর পর তারা ভালো মানের চিকিৎসাও পান না অনেক সময়। মোদ্দা কথা হল, কালো নারীদের সঙ্গে যে বৈষম্যমূলক আচরণ আমরা করে যাচ্ছি, তার অবসান ঘটাতে আমাদের কঠোর হতে হবে।”

আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির পাশাপাশি এমোরি ইউনিভার্সিটি এবং উইল করনেল মেডিসিনের গবেষকরা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন।

এসব তথ্য মিলেছে ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট এবং ইউএস সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেশনের ১৯৭৫ সালের রেজিস্ট্রি থেকে।

দেখা গেছে, ২০০৪ সাল থেকে স্তন ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি বছর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করে বাড়ছিল। আসলে স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক পর্যায়ে ও দ্রুততার সঙ্গে স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব হওয়ায় ক্যান্সার ধরা পড়ার হার বেড়েছিল সে সময়।

অন্যদিকে ১৯৮৯ সালে স্তন ক্যান্সারে মৃত্যু সংখ্যা চূড়ায় ওঠার পর আবার কমতে শুরু করে। গবেষকরা বলছেন, ২০০২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১ দশমিক ৯ শতাংশ হারে কমেছে এ রোগে মৃত্যু। এরপর ২০১১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর কমেছে এক দশমিক তিন শতাংশ হারে।

প্রতিবেদনে সাদা ও কালো নারী মধ্যে বৈষ্যম্যের যে চিত্র এসেছে, তাতে মোটেই অবাক নন চ্যাপেল হিলের ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনা স্কুল অফ মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. ম্যাসুয়েল সাইকার্ট। নতুন এই গবেষণায় কোনো রকম সম্পৃক্ততা না থাকলেও, ক্যান্সার চিকিৎসায় বর্ণ বৈষ্যম্য নিয়ে গবেষণা রয়েছে তার।

ডা. সাইকার্ট বলেন, “বৈষম্য যে রয়েছে, এখনও এ তথ্য জেনে আমি মোটেও অবাক হই না। কারণ এই জায়গায় গুরুত্ব দিয়ে কিছু করার কথা ভাবেনি কেউ।”

তিনি বলেন, “সত্তরের দশকের শেষ দিকেও পরিস্থিতি এরকম ছিল। কারণ ওই সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষার অবস্থা একেবারে হযবরল ছিল, চিকিৎসার কোনো মান ছিল না। ফলে কারোরই ভালো চিকিৎসা হয়নি। যে কারণে মৃত্যুহারও সাদা ও কালো নারীর সমান ছিল।

”এরপর ১৯৭৬ ও ১৯৮৫ সালের লেখচিত্রে তাকালে দেখা যাচ্ছে সাদা নারীর বেলায় আগের চেয়ে কম মৃত্যু হচ্ছে। কালো নারীর বেলাতেও মৃত্যুহার কমছে, কিন্তু ততটা নয়। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে আজ পর্যন্ত এই পার্থক্য একেবারে একই রকম দেখা যাচ্ছে।”

সাইকার্ট বলেন, ক্যান্সার রোগীদের বেলায় এই বর্ণ বৈষ্যম্য দূর করতে নিশ্চিত করতে হবে যেন কালো নারীরাও সমানভাবে চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা পান। কালো নারীদের বেলাতেও স্তন ক্যান্সার পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকতে হবে, সাদা নারীদের মতই।

“দুটো বিষয় দরকার হবে এখানে– ব্যবস্থাপনায় বদল আনা, যেখানে স্বীকার করতে হবে যে বৈষ্যম্য রয়েছে। অন্যদিকে যত্ন ও এর ফলাফল দেখানো।”

সামাজিক তৎপরতার উপরেও গুরুত্ব দেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, এতে করে প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য বোঝা সহজ হবে এই সমাজে কী ধরনের বাধা রয়েছে। এর সঙ্গে জবাবদিহিতাও থাকতে হবে সবার।

“স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোকে ডিজিটাল তথ্য বিশ্লেষণ করে জানতে হবে রোগীয় চিকিৎসায় অগ্রগতি কতটুকু হচ্ছে। গুরুতর রোগীর ক্ষেত্রে দক্ষ চিকিৎসক যোগ করে সেবা দেওয়ার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে।”