চোখে দেখা না গেলেও, হাড়ের ওপর শরীরের অনেক কিছু নির্ভর করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ’ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেল্থ’ অনুযায়ী- হাড় জীবন্ত, ক্রমবর্ধমান এবং এর সুস্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
হাড় ভঙ্গুর বা ফাটলযুক্ত হলে ’অস্টিওপোরসিস’ হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে।
প্রতি বছর অনেক নারী বিশেষ করে ‘মেনোপজের’ পরে নারীদের ’অস্টিওপোরসিস’ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রিয় রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা’ অনুমান করে যে, ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সি ২০ শতাংশ নারীরা হাড় ভঙ্গুর আক্রান্ত হয় যেখানে একই বয়সের পুরুষদের মধ্যে মাত্র পাঁচ শতাংশ এই সমস্যায় ভুগতে পারে।
রিয়েলসিম্পল ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে লস অ্যাঞ্জেলেস ভিত্তিক নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ ম্যাগি মুন বলেন, “আমরা যা খাই তা সরাসরি হাড়ের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব রাখে। কিছু খাবার পুষ্টি সরবারহ করে হাড়কে পূর্ণ করে এবং শক্তিশালী করে, আবার অনেক খাবার হাড়ের স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ভঙ্গুর করে তোলে।”
হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় কিছু খাবার এড়িয়ে চলা বা পরিমাণে কম খাওয়া উচিত।
ব্যাখ্যায় করে তিনি বলেন, “অতিরিক্ত সোডিয়াম, ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল হাড়ের ক্ষতি করতে পারে।”
দুধের তৈরি খাবার ক্যালসিয়ামের উৎস, তাই হাড়ের সুস্থতায় ছোটবেলা থেকেই দুধ খেতে উৎসাহিত করা হয়।
হার্ভার্ড টি. এইচ চান স্কুল অব পাবলিক হেল্থ অনুযায়ী, দেহের ৯৯ শতাংশ ক্যালসিয়াম হাড়ে সঞ্চিত থাকে।
আর ভিটামিন ডি দেহের জন্য উপকারী। এটা ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে বলে জানান, মুন।
তিনি বলেন , “ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি ছাড়াও আরও কিছু পুষ্টি উপাদান হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।”
এসব ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের মধ্যে আছে:
প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ফ্লোরাইড, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, বোরন, লৌহ, জিংক, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, ভিটামিন সি এবং বি।
মুন বলেন, “সম্পূরকের তুলনায় প্রাকৃতিক উৎস থেকে বিভিন্ন রকমের পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় খাবার থেকে ।”
সয়া মিল্ক
যাদের দুধে এলার্জি, ল্যাক্টোজ অসহিষ্ণুতা বা অন্যান্য দুধের তৈরি খাবারে অ্যালার্জি আছে তাদের জন্য সয়া দুধ। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ সয়া দুধ হাড়ের জন্য উপকারী।
মুন বলেন, “অনেক সয়া দুধকে শক্তিশালী হাড়ের জন্য ক্যালসিয়াম দিয়ে মজবুত করা হয় এবং সয়া সম্পূর্ণ প্রোটিন যা হাড়ের জন্য উপকারী।”
প্রতি পরিবেশনে ১০ শতাংশ ক্যালসিয়াম নিশ্চিত করতে মোড়কের গায়ে আটকানো লেবেল ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ’ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেল্থ’ অনুযায়ী, প্রাপ্ত বয়স্কদের দৈনিক ১৩০০ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। তাই প্রতি পরিবেশনে ১৩০ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়াম প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, সয়া দিয়ে তৈরি খাবার হাড়ের গঠন উন্নত করে এবং এর ক্ষয়ের ঝুঁকি কমায়।
২০২০ সালের কোরিয়ার কিউংসাং বিশ্ববিদ্যালয়ের, পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সয়া ধরনের খাবার মেনোপোজ হওয়া নারীদের জন্য বেশি উপকারী। সয়া প্রোটিন হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় এবং হাড় ভঙ্গুর সমস্যার মতো জটিলতা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
সয়া পণ্য যেমন- এডামেম, টেম্ফ, মিসো ও টফুর মতো খাবার হাড়ের জন্য উপকারী।
দই
দই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ পুষ্টিকর দুগ্ধজাত পণ্য যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)’য়ের সমীক্ষা অনুযায়ী- এক কাপ দইয়ে আছে ২৯৬ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়াম যা দৈনিক চাহিদার ২৩ শতাংশ পূরণ করে।
দই হাড় গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন- প্রোটিন, ফসফরাস, জিংক ও ভিটামিন বি সমৃদ্ধ এবং গ্রীক দই অন্ত্রের উপকারী ব্যাক্টেরিয়া সমৃদ্ধ।
তাছাড়া দই গাঁজানো পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় যা দেহের জন্য উপকারী। এতে থাকা প্রিবায়োটিক ও প্রোবায়োটিক হাড়ের বিপাকের মাধ্যমে ক্যালসিয়ামের শোষণ বাড়িয়ে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণে সতর্ক করে দিয়ে মুন বলেন, “একবারে শরীর কেবল ৫০০ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়াম শোষণ করতে পারে। তাই প্রয়োজনীয় ১৩০০ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ সারাদিনে একাধিকবারে তা গ্রহণ করতে হবে।”
শরীরের জন্য ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। তবে অধিক ক্যালসিয়াম গ্রহণে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ হাড়ের জন্য ক্ষতিকর, সম্পূরক হিসেবে বেশি ক্যালসিয়াম গ্রহণ হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায়।
সার্ডিন
সার্ডিন উপকারী সাম্পদ্রিক খাবার। এর ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের জন্য উপকারী।
মুন বলেন, “এটা ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও প্রোটিন সরবারহ করে যা হাড় সুস্থ রাখে।”
টিনজাত খাবার হিসেবে সার্ডিন পাওয়া যায়। যা সহজলভ্য, স্থিতিশীল এবং পুষ্টির সাশ্রয়ী উৎস।
ইউএসডিএ’র সমীক্ষা অনুযায়ী, এক ক্যান সার্ডিনে ৩৫১ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়াম বা দৈনিক চাহিদার ২৭ শতাংশ থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেল্থ সুপারিশকৃত ১৫ মাইক্রো গ্রাম ভিটামিন ডি এর মধ্যে ৪.৪২ মাইক্রো গ্রাম ভিটামিন ডি পাওয়া যায় এতে, যা দৈনিক চাহিদার ২৯ শতাংশ।
ডিম
প্রোটিন ও ভিটামিন ডি’র ভালো উৎস যা হাড়ের জন্য খুবই দরকারী।
মুন বলেন,”হাড়ের জন্য সহজলভ্য পুষ্টি উপাদান যেমন- ভিটামন ডি, ভিটামিন কে, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায় ডিমে। এতে থাকা লুটেইন ও কোলিন হাড়ের পাশাপাশি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সহায়তা করে।”
২০২১ সালে ইটালির ম্যাগনা গ্রেইসা-বিশ্ববিদ্যলয়ের একটা গবেষণায় ডিম খাওয়া ও হাড়ের ভরের ঘনত্বে মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক পাওয়া গেছে যার প্রধান কারণ হল উচ্চ মাত্রার ‘কোলিন’।
এই সমীক্ষা অনুযায়ী, কম কোলিন গ্রহণ অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
ডিম কোলেস্টেরলের ঘনীভূত উৎস তাই ‘আমেরিকান হার্ট হেল্থ অ্যাসোসিয়েশন’ দিনে একটা বা দুইটার বেশি ডিম না খাওয়ার পরামর্শ দেন।
যাদের উচ্চ কোলেস্টেরলের ঝুঁকি আছে তাদের এই বিষয়য়ে বেশি সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ফল ও সবজি
প্রতিদিন ফল ও সবজি খাওয়ার নানান কারণ রয়েছে। এগুলো শরীরে পুষ্টি যোগায় ও হাড় সুস্থ রাখে।
‘দ্যা বোন হেল্থ অ্যান্ড অস্টিওপোরোসিস ফাউন্ডেশন’- ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ভিটামিন সি এবং ভিটামন কে সমৃদ্ধ ফল ও সবজি খাওয়ার পরামর্শ দেয়।
এমন কয়েকটি খাবার হল-
গাঢ় পাতাবহুল শাক, মিষ্টি আলু, ক্যাপ্সিকাম, কপি, কমলা, কলা, টমেটো, স্ট্রবেরি ইত্যাদি।
বিভিন্ন রকমের ফল ও সবজি খাওয়া হাড়ে পুষ্টি যোগাতে উপকারী ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন