মোড়কজাত শিশুদের খাবারে চিনি বেশি পুষ্টিকম

শিশুদের আকর্ষণ করে এরকম বেশিরভাগ মোড়কজাত খাবারে পুষ্টিমান কম থাকে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2023, 09:55 AM
Updated : 10 May 2023, 09:55 AM

রঙিন মোড়কে মোড়া খাবার ও পানীয় দেখে শিশুরা আকর্ষিত হয়।

তবে এসব খাবারে যে তেমন কোনো পুষ্টি উপাদান থাকে না, সে বিষয়ে প্রায় সবার জানা থাকলেও এবার গবেষণা করে সেটা প্রমাণ করছে ‘ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টো’র ‘নিউট্রিশনাল সায়েন্সেস’ বিভাগের গবেষকরা।

বুধবার ‘পিএলওএস ওয়ান’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, শিশুদের আকর্ষণ করতে বাজারজাত করা পণ্যে সব ধরনের পুষ্টি থাকে কম, চিনির পরিমাণ থাকে বেশি।

গবেষণায় শিশুদের লক্ষ্য করে বাজারজাত করা প্রায় ৬ হাজার মোড়কজাত খাবারের পুষ্টিবিষয়ক তথ্য পর্যালোচনা করা হয়।

সিএনএন’কে এই গবেষণার প্রধান ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টো’র ‘নিউট্রিশনাল সায়েন্সেস’ বিভাগের ‘পোস্ট-ডক্টোরিয়াল রিসার্চার’ ডা. ক্রিস্টিন মালিগান বলেন, “দোকানে বহু পণ্যই রয়েছে যেগুলো শিশুদের লক্ষ্য করে অতি মাত্রায় বাজারজাত করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত আমরা দেখেছি যে, শিশুদের উদ্দেশ্য করে বাজারজাত করা হলেও এসব পণ্যের পুষ্টিমান যেমন খারাপ তেমনি অস্বাস্থ্যকর।”

এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত না থেকেও ক্যালিফোর্নিয়াতে অবস্থিত ‘স্ট্যানফোর্ড স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের শিশুরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ‘হেল্থ মিডিয়া ইনোভেইশন’ বিভাগের পরিচালক ডা. মায়া অ্যাডাম একই প্রতিবেদনে বলেন, “শিশুদের উদ্দেশ্য করে প্রচার করার কৌশলকে প্রতিষ্ঠানগুলোর আকর্ষণীয় পন্থা হিসেবে বিবেচনা করা যায়। কারণ শিশুরা বেশিরভাগ সময় ‘ব্র্যান্ড-ভক্ত’ প্রাপ্তবয়স্ককের সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠে।”

তিনি বলেন, “যখন শিশুদের কোনো বিষয় সামনে আসবে তখন সারাবিশ্বেই প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। আমাদের সন্তানদের গাড়িতে নিয়ে ঘোরা সময় সতর্ক থাকি, বাইকে ওঠালে হেলমেট পরাই। কিন্তু মোড়কজাত খাবার সরবরাহ করা প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক উল্টো কাজটা করছে। আসলে স্বাস্থ্যকর নয় এরকম খাবার প্রচারকারীরা হল সমাজে সবচেয়ে ক্ষতিকর সদস্য।”

নতুন এই গবেষণায় মাত্র একটি বিষয়ের ওপর কেন্দ্র করে গবেষণা করা হয়েছে, আর তা হল মোড়ক।

মালিগান বলেন, “এই একটা বিষয় ছাড়াও আমরা গবেষণায় দেখিয়েছি যে, শিশুদের উদ্দেশ্য করে বাজারজাত করা এসব পণ্যগুলোর প্রচারণার পন্থাগুলো সবদিক দিয়েই আছে। হতে পারে সেটা টেলিভিশন কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম; অথবা খেলাধূলার জায়গায় এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।”

তিনি আরও বলেন, “এই বিষয়টার গুরুত্ব সবাইকে বুঝতে হবে। কারণ বাজারজাতকরণের এই প্রভাবে শিশুদের মাঝে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠে। আর সারা জীবনে সেটার প্রভাব থেকে যায়। ফলে দীর্ঘমেয়াদে তাদের স্বাস্থ্যের ওপর বাজে প্রভাব পড়ে।”

ব্র্যান্ডিং এড়িয়ে পুষ্টির চাহিদা মেটানোর উপায়

মালিগান বলেন, “গবেষণাটি কানাডা’তে করা হলেও সমস্যাটা বিশ্বব্যাপি। এক্ষেত্রে সরকারিভাব এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারী বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে শিশুদের উদ্দেশ্য করে অস্বাস্থ্যকর খাবার প্রচার না চালায়।”

তিনি আরও বলেন, “এই ব্যাপারে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শুধু বাজারে নয়, শিশুরা যেখানে খেলে, খায়, পড়ে- সব জায়গায়।”

এছাড়া ঘর থেকেও এই পরিবর্তন আনা শুরু করতে হবে। এসব পণ্যের বিজ্ঞাপনে আকর্ষিত হয়ে অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি ঝুঁকে পড়া রোধ করতে শিশুদের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

ডা. অ্যাডাম বলেন, “সহজ পদ্ধতি হল ঘরে রান্নার পরিমাণ বাড়ানো। আর ঘরে রান্না করা শিশুদের খাবারে চর্বি, মিষ্টি ও লবণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।”

এছাড়া ঘরে রান্না ও খাওয়ার অভ্যাস গড়ার মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য ও অবেগ অনুভূতির উন্নতির পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক কাজেও সমৃদ্ধি ঘটে।

এছাড়া শিশুদের নিয়ে বাজার করতে গিয়ে, তাদেরকে স্বাস্থ্যকর পণ্য বেছে নেওয়ার বিষয়ে উৎসাহ দিতে হবে।

মালিগান বলেন, “এর ফলে পারিবারিকভাবে শিশু যেমন বাজার করা শিখবে তেমনি কীভাবে সুস্বাদু স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিতে হবে সে বিষয়েও ধারণা পাবে।”

আরও পড়ুন

Also Read: স্থূলকায় শিশু মানেই সবল নয়

Also Read: যেসব খাবার শিশুর ওপর বাজে প্রভাব ফেলে

Also Read: শিশুকে শক্ত খাবার খাওয়াতে