বিল পরিশোধের অর্থ কোথা থেকে আসবে সেটা হিসাব না করে ইচ্ছে মতো খরচ করলে ওই ক্রেডিট কার্ডই ডেকে আনবে নানান বিপদ।
Published : 28 Aug 2022, 01:11 PM
শুধু খাওয়ার ক্ষেত্রে নয়, টাকা খরচ করতে গেলেও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়তে হয়।
আর তা যদি হয় ক্রেডিট কার্ডে তবে অবশ্যই এই ব্যাপারে আরও সতর্ক থাকতে হবে।
কারণ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে জানলে ক্রেডিট কার্ড হতে পারে ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনার একটি দারুণ হাতিয়ার। হাতে নগদ অর্থ না থাকলেও সহজেই ছোট বড় খরচ করে ফেলা যায় ক্রেডিট কার্ড দিয়ে। বড় খরচগুলো মাসিক কিস্তিতে বদলে ফেলা যায়, যার কোথাও সুদ দিতে হয়, কোথাও আবার বিনা সুদেই কিস্তি চালানো যায়।
তবে এইসব সুবিধার উপভোগের পর বিপদে না পড়ার জন্য শর্ত একটাই, মাসের বিল সময়মতো পরিশোধ করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের মিজোরি’র ‘ফাইনানশল প্ল্যানার’ এবং ‘হ্যারিসন ফাইনানশল প্ল্যানিং’য়ের প্রতিষ্ঠাতা ডেনিয়েল হ্যারিসন বলেন, “নিজের আয়ের সঙ্গে সমতা রেখে ব্যবহার করতে পারলে ক্রেডিট কার্ড খুবই উপকারী। তবে বিল পরিশোধের অর্থ কোথা থেকে আসবে সেটা হিসাব না করে ইচ্ছে মতো খরচ করলে ওই ক্রেডিট কার্ডই ডেকে আনবে নানা বিপদ।”
‘রিয়েল সিম্পল’ ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে ক্রেডিট কার্ডের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে পরামর্শ দেন ডেনিয়েল হ্যারিসনসহ অন্যান্য অর্থ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা।
ব্যালেন্স সম্পর্কে সচেতন থাকা
যুক্তরাষ্ট্রের কার্সন গ্রুপ’য়ের ‘ওয়েল্থ সল্যুশন’ বিভাগের ‘ম্যানেজিং পার্টনার’ জেইম হপকিন্স বলেন, “ক্রেডিট কার্ড বেহিসেবি খরচ করার একটা প্রবণতা তৈরি করে। ডেবিট কার্ডে আপনি ততটাই খরচ করতে পারেন যতটুকু অর্থ আপনার অ্যাকাউন্টে জমা আছে। কিন্তু ক্রেডিট কার্ডের ‘লিমিট’ সাধারণত আপনার মাসিক বেতনের কয়েক গুন বেশি হয়, যার পুরোটাই আপনি খরচ করতে পারবেন এবং একমাসে সেই পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব নয়।”
বর্তমান অনলাইন কেনাকাটার যুগে পয়সা খরচ করতে বাইরেও যেতে হয় না, বিছানায় শুয়ে আঙুলের ছোঁয়া দিয়েই নিজের আর্থিক বিপর্যয় ডেকে আনা সম্ভব।
“ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার অনেক চড়া। তাই এই ঋণ দিয়ে কী কিনবেন, কতটুকু খরচ করবেন, মাস শেষে বিল কত হবে- এসব হিসাব মিলিয়ে তবেই খরচ করা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বড় খরচ করে তা কিস্তি করে ফেলার একটা উপায় মনে হতে পারে। তবে সেই কিস্তির অংকটা সুদসহ প্রতিমাসে কত দাঁড়াবে সেটা আগেই ভেবে নিতে হবে। কারণ সময় মতো বিল পরিশোধ না হলেই চড়া হারে সুদ গুনতে হবে”, বলেন এই অর্থ ব্যবস্থাপক।
সুবিধার সীমাবদ্ধতা
হপকিন্স বলেন, “মাসের বাজার ও অন্যান্য টুকিটাকি খরচ ক্রেডিট কার্ড দিয়ে করলে খরচের হিসাব মেলানো সহজ হয়ে যায়। কারণ পুরো খরচের তালিকা থাকে কার্ডের ‘স্টেটমেন্ট’য়ে। এভাবে চিন্তা করলে নগদ অর্থ খরচের তুলনায় ক্রেডিট কার্ড সুবিধাজনক। আবার এই খরচগুলো থেকে ‘রিওয়ার্ড পয়েন্ট’ আসবে, মিলতে পারে মূল্যছাড়।”
“তবে এই সুবিধার সীমাবদ্ধতাও আছে। সন্তানের স্কুলের বেতন, চিকিৎসা খরচ ইত্যাদি বড় খরচের জন্য ক্রেডিট কার্ড মোটেই উপযোগী নয়। প্রতি মাসেরটা ওই মাসেই পরিশোধ করে ফেলা যাবে এমন খরচের বাইরে যে কোনো বড় খরচ ক্রেডিট কার্ড দিয়ে করলে তা ভবিষ্যতের জন্য একটা ঝুঁকি তৈরি করে। হয়ত সেটা পরিশোধ করার পয়সার হিসাবে আপনি মিলিয়ে ফেললেন, তবে বিপদ আপদের কথা বলা যায় না।”
“কার্ডের বিল পরিশোধের সময় আসার আগেই যদি জরুরি কোনো কাজে খরচ করতে হয় তখন এই ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধের অর্থ কমে যেতে পারে। আবার ক্রেডিট কার্ড থেকে খরচ করে বিলাশবহুল ভ্রমণে যাওয়া বোকামি হতে পারে একইভাবে।”
তিনি আরও বলেন, “ক্রেডিট কার্ডের মাসিক বিল পরিশোধ করতে যদি না পারেন তবে নিজের ভুল উপলব্ধি করার দারুণ একটা উপায় হবে বিল পরের মাসে পরিশোধ করার সুযোগের জন্য বাড়তি কত সুদ দিতে হল সেটা দেখা।”
কোন ব্যাংকের কার্ডে কী সুবিধা
হপকিন্স বলেন, “ক্রেডিট কার্ডের সাধারণ সুবিধাগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংক বাড়তি বিভিন্ন সুবিধা দেয় যা সবার জানা থাকে না। যেমন কার্ডের বাৎসরিক চার্জ কোথাও ১৮ বার লেনদেনে মাফ হয়, আবার কিছু ব্যাংকের চার্জ মাফ হয় ‘রিওয়ার্ড পয়েন্ট’ দিয়ে। কিছু ব্যাংকের কার্ডে শূন্য শতাংশ ইএমআই পাওয়া যায় তিন মাসের আবার কিছু ব্যাংকের কার্ডে তা হয় ছয় কিংবা ১২ মাস পর্যন্ত। ‘ডুয়াল কারেন্সি কার্ড’য়ের ক্ষেত্রে ‘প্রাইস প্রোটেকশন’ একটি ভালো সুবিধা যেখানে ‘এক্সচেঞ্জ রেট’য়ের তারতম্য কম হয়।”
আরও পড়ুন
ক্রেডিট কার্ডের হিসাব রাখার উপায়
যেভাবে তৈরি করবেন পরিবারের জন্য আর্থিক বিধিনিষেধ
আর্থিক বিষয় নিয়ে সাংসারিক বিবাদ- সমাধানের পন্থা