আর্থিক বিষয় নিয়ে সাংসারিক বিবাদ- সমাধানের পন্থা

কথায় বলে, ‘টাকা কথা বলে’। আবার আর্থিক কারণেও সংসারে ঝগড়া লাগে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2022, 06:53 AM
Updated : 8 May 2022, 06:53 AM

সাংসারিক জীবনে ঝগড়া বাঁধবেই। আর আর্থিক বিষয় নিয়ে কলহের জের ধরেই বিচ্ছেদ হয় বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘জেমেনেজ ল’ফার্ম’য়ের জরিপের ফলাফলের উদ্ধৃতি দিয়ে রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো, বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে জোড়ালো একটা কারণ হয় আর্থিক বিষয়, আর এর পেছনে কারণ থাকে অবিশ্বাস।”

খরচের অভ্যাস নিয়ে মতবিরোধ

স্বামীর পছন্দ গাড়ি, গ্যাজেট অপরদিকে স্ত্রী পছন্দ জুতা, গয়না, প্রসাধনী, পোশাক ইত্যাদি। সবখাতেই মিতব্যয়ী এবং অপব্যয়ী দুটোই হওয়া সম্ভব।

গাড়ি, গ্যাজেট কিনতে গিয়ে একসঙ্গে অনেকটা অর্থ খরচ হয়। সেই তুলনায় জুতা, গয়না, প্রসাধনী, পোশাকের খরচ কম হলেও ঘন ঘন কেনার অভ্যাস থাকলে এগুলোও আর্থিক ব্যবস্থাপনা ধ্বংস করতে পারে সহজেই।

এই অবস্থায় দুজনার মধ্যে কে বেশি খরচ করে, কাকে খরচের লাগাম টানতে হবে সেই আলোচনায় বসলে একে অপরকে দোষারোপ হবেই, কলহ বাঁধবে। আর সেই ঝগড়ার মাঝে এমন অনেক কথাই চলে আসে যা সম্পর্কে ভাঙন ধরানো জন্য যথেষ্ট।

উপায় কী তাহলে?

‘ব্রোক মিলেনিয়াল টকস মানি’ বইয়ের রচয়িতা এরিন লওরি বলেন, “দুজনের জন্য একই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিন। সেই অর্থ দুজনই দুজনার ইচ্ছেমতো খরচ করবে, কেউ কোনো মন্তব্য করবে না। এজন্য প্রথমেই নিজের আবশ্যক খরচগুলোর অর্থ আলাদা করে নিতে হবে। যেমন- বাড়িভাড়া, খাওয়ার খরচ, কোনো কিস্তি দেওয়ার থাকলে, সন্তানদের শিক্ষার খরচ ইত্যাদি। বাকি যে অর্থ থাকবে সেটা থেকে দুজনার সেই বরাদ্দ ভাগ করে নিতে হবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের এই পারিবারিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, “এরপর যদি একজনের খরচের অভ্যাস নিয়ে অপরজনের মনে রাগ হয়, কলহ বাঁধে তবে নিজেকেই প্রশ্ন করুন, আপনাদের আবশ্যক প্রয়োজন মিটে যাওয়া পরও কেনো আরেকজনের খরচ নিয়ে কলহ বাঁধাচ্ছেন, কি লাভ সেই কলহের পেছনে।”

পরিবারে আর্থিক সহায়তা নিয়ে ঝগড়া

একটি পরিবারে সব সদস্যই আর্থিকভাবে সচ্ছল হয় না। ফলে যারা সচ্ছল তাদের ঘাড়ে পরিবারের আর্থিকভাবে নড়বড়ে সদস্যদের সাহায্য করার একটা দায়িত্ব কম বেশি বর্তায়।

আবার বৃদ্ধ বয়সের আমাদের দেশে প্রায় সব বাবা-মা তার সন্তানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। পরিবারের কোনো সদস্যকে আর্থিকভাবে সাহায্য করা, কারও ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়া দাম্পত্য কলহের কারণ হয়ে দাঁড়ায় প্রায়শই।

সমাধানের পন্থা

“এই পরিস্থিতির সমাধান আলোচনা”, বলেন যুক্তরাস্ট্র ভিত্তিক ফাইনান্সিয়াল থেরাপিস্ট অ্যামান্ডা ক্লেম্যান।

তার কথায়, “মানুষ যখন মানসিক চাপে থাকে, তখন সে তার চারপাশকে সাদা-কালো দৃষ্টিতে দেখে, সবকিছুই তার কাছে নেতিবাচক মনে হয়। ফলে তার আত্মত্যাগের আগ্রহ কমে যায়।”

পরিবারের একজন সদস্যকে কিংবা শ্বশুর শাশুড়িকে বিপদের সময়ে আর্থিকভাবে সাহায্য করা হবে কি-না তা কখনই আলোচনা বিষয়বস্তু হওয়া উচিত নয়। বরং চিন্তা করা উচিত কীভাবে দুজনের মিলিত চেষ্টায় খরচ কমিয়ে কিংবা উপার্জন বাড়িয়ে অর্থের পরিমাণ বাড়ানো যায়।

ক্লেম্যান পরামর্শ দেন, “তবে এই আলোচনা আবেগের বশবর্তী অবস্থায় করার মতো নয়, বাস্তবমুখী মনভাব নিয়ে এই আলোচনা করতে হবে এবং এমন সমাধানে আসতে হবে যাতে স্বামী-স্ত্রী দুজনে সেচ্ছায়, খুশি মনে সম্মত হন।”

“আলোচনার শুরুতেই ঠিক করে নিতে হবে কোন বিষয়গুলো জরুরি। কারও আর্থিক দারভার নেওয়া কয়েক দিন, মাস কিংবা বছরের ব্যাপার নয়, লম্বা সময়ের আত্মত্যাগ। সেই দায়িত্ব নেওয়ার আগে তার প্রতি দুজনের মনভাব কেমন সেটা বোঝা ও ব্যক্ত করা জরুরি।”

তবে সাহায্য করার ইচ্ছেটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকা উচিত নয়। সাহায্য করবো কি-না সেটা আলোচনার বিষয় হবে না। আলোচনা হবে আমরা কতটুকু সাহায্য করতে পারবো তা নিয়ে।

আর্থিক বিষয় নিয়ে সন্দেহ

আর্থিক বিপর্যয়ের বিভিষিকায় কমবেশি সবাইকে ভুগতে হয়। প্রচণ্ড আর্থিক দূরাবস্থা থেকে নিজের চেষ্টায় একটা স্থিতিশীল অবস্থায় যারা উঠে এসেছেন তাদের আর্থিকভাবে কারও ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার ক্ষেত্রে কিছু হলেও দ্বিধা, শঙ্কা কাজ করে।

আবার কারও সঙ্গী সারাজীবনের জন্য জুটি বাঁধার আগে ওই ব্যক্তির আর্থিক অবস্থার যাচাই করে দেখা হয়ই। যদি কেউ স্থিতিশীল না হয়, তবে তার সঙ্গে জীবন জুড়ে নিতেও দ্বিধা আসতে পারে।

সমাধানের পন্থা

“এখানেও উপায় খোলামেলা আলোচনা”, বলেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরেক ‘ফাইনান্সিয়াল থেরাপিস্ট’ লিন্ডসে ব্রায়ান-পডভিন।

আর্থিক টানাপোড়েনে থাকা মানুষগুলো কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো অবস্থায় যাওয়ার পর নতুন করে আর্থিকভাবে কারও ওপর নির্ভরশীল হওয়াকে আতঙ্ক মনে করাটাই স্বাভাবিক।

এক্ষেত্রে যার সঙ্গে জুটি বাঁধতে চান, তার অর্থ ব্যবস্থাপনা কিংবা ক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান থাকলে, সরাসরি বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।

আবার তৃতীয় কোনো বিশেষজ্ঞের সঙ্গেও আলাপ করতে পারেন। একজন মানুষ অর্থকে কীভাবে মূল্যায়ন করে, কীভাবে খরচ কিংবা সঞ্চয় করে, আর্থিক বিষয় নিয়ে তার অনুভূতি কী, আর্থিক টানাপোড়ন তার সম্পর্কের ওপর কী রকম প্রভাব ফেলে- সেইসব বিষয়ে আমলে নিয়েই পরামর্শ দেবেন সেই বিশেষজ্ঞ।”

আরও পড়ুন