যেভাবে তৈরি করবেন পরিবারের জন্য আর্থিক বিধিনিষেধ

সাহায্যপ্রার্থী কাউকে না বলাটা কিছু মানুষের জন্য খুব কঠিন।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2021, 12:46 PM
Updated : 12 Sept 2021, 01:18 PM

আর সেই সাহায্যপ্রার্থী যদি হয় পরিবারের সদস্য আর তার চাওয়াটা যদি হয় টাকা, তবে বিষয়টা অত্যন্ত জটিল হয়ে ওঠে।

তবে যারা এমন সাহায্য করেছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশই বলবেন, এমন পরিস্থিতিতে না বলার কথা। পরিবারের মানুষের মাঝে আর্থিক লেনদেন আসলে সম্পর্কে জটিলতা তৈরি হবেই হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পেশাদার আর্থিক-বিষয়ক পরামর্শদাতা লিনেট খালফানি-কক্স বলেন, “কিছু মানুষ নিজে ধার করে পরিবারের মানুষকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেন। আর্থিক সিদ্ধান্ত হিসেবে এটা বড় ধরনের ভুল।”

‘রিয়েল সিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “এসব ক্ষেত্রে আপনাকে শক্ত বিধিনিষেধ তৈরি করতে হবে যে আপনি কাকে কতটুকু সাহায্য করবেন এবং সেটা কোন পরিস্থিতিতে। আর পরিবার মানে পুরো পরিবার। দূর সম্পর্কের আত্মীয় থেকে শুরু করে নিজের সন্তান, ভাইবোন, বৃদ্ধ বাবা-মা সবার জন্য একথা প্রযোজ্য।”

কখন না বলতে হবে: সবার জীবনেই খারাপ সময় আসে। অসুস্থতা, দুর্ঘটনা, নোংরা বিবাহ বিচ্ছেদ ইত্যাদি সবই জীবনের অংশ। এমন সময় আর্থিক সাহায্যের প্রার্থণা ফিরিয়ে দেওয়ার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন, যে কারণে মানুষটা আপনার কাছে সাহায্য চাইছে সেটা কি তার জীবনের কোনো অভূতপূর্ব ঘটনার প্রেক্ষিতে। না কি তার অভ্যাসই এমন।

খালফানি বলছেন, “পরিবারের কেউ প্রচণ্ড বিপদে পড়েছে, যে বিপদটা হতে পারে এমনটা চিন্তাও করা যেত না, এমন পরিস্থিতিতে আপনি আর্থিক সহযোগিতা করতে পারেন। তবে যে সাহায্য চাইছে সে যদি অর্থ কাজে লাগাতে না জানে, অপচয় অপব্যয় করে এবং তার আশপাশের মানুষ জানতো সে আজ না হয় কাল বিপদে পড়বে, সেই মানুষগুলো আপনার যতই আপন হোক না কেনো তাকে আর্থিক সাহায্য করাটা বোকামি হবে।”

“কারও সাহায্যের প্রার্থণা যদি আপনি ফিরিয়ে দিতে না পারেন তবে নিজেকেই প্রশ্ন করুন কেনো এমনটা হয়। নিজের তৈরি নিয়মের বাইরে গিয়ে, জেনে বুঝে কেনো একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিতে আপনি মানসিক চাপ অনুভব করেন। নিজেকে অন্য কারও আর্থিক সমস্যার সমাধান মনে করবেন না কখনই। আর আপনি সাহায্য না করলে যে আরও খারাপ কিছু ঘটে যাবে এমনটা ভেবে নেওয়াও অবাস্তব।”

যেভাবে না বলতে পারেন: আপনি কাউকে সাহায্য করবেন না, তো করবেন না, কথা শেষ। কেনো করবেন না তার কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

খালফানি– কক্স বলেন, “কাউকে না বলার কারণে যদি সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় তবে হতে দিন। সরাসরি বলতে পারেন, তোমাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করা তোমার এবং আমাদের সম্পর্কের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। আমি তোমাকে আঘাত দিতে চাই না, তবে আর্থিক দিক দিয়ে আমি শক্ত কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলি।”

ন্যাশভিল’য়ের সনদস্বীকৃত ‘ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট’ ক্রিস্টিন ম্যানলি বলেন, “কোনো বন্ধু কিংবা আপনার জীবনসঙ্গীর সঙ্গে মিলে কাউকে না বলার আলাপটা অনুশীলন করতে পারেন। আপনি হয়ত ভাবছেন এই আলাপ দীর্ঘ একটা আলাপ হবে, যেখানে আপনি কেনো সাহায্য করতে অপারগ তার ব্যাখ্যা দেবেন। আসলে তা নয়। যে সাহায্যগুলো মানুষ চাইলে আপনি অস্বস্তি অনুভব করেন, সেই চাওয়াগুলো যখনই আপনার সামনে আসবে, তখনই না বলে দিতে হবে।”

ম্যানলি আরও বলেন, “সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর যদি বাবা-মায়ের ওপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল রয়ে যায়, তবে সেখানেও বাবা-মায়ের শক্ত অবস্থানে যেতে হবে। প্রয়োজনে সন্তানকে আর্থিকভাবে সাবলম্বী হওয়া পথ দেখাতে পারেন, তাকে পথ তৈরি করে দিতে পারেন।”

অপরাধবোধ রাখা যাবে না: পরিবারের কাউকে আর্থিক সঙ্কটের কথা না বলার পর অপরাধবোধ কাজ করাটা স্বাভাবিক। নারীদের ক্ষেত্রে এমনটা হয় বেশি।

ম্যানলি বলেন, “অপরাধ বোধ কাজ করা মানে এই নয় যে আপনি কোনো অপরাধ করছেন। আপনার যা ভালোলাগেনি তাকে না বলা দোষের নয়। তাই এই অপরাধবোধ পুষে রাখা যাবে না। অন্যথায় সেটাই আপনাকে পরে হতাশাগ্রস্ত করে তুলবে।”

খালফানি বলেন, “পরিবারের ক্ষেত্রে সম্পর্কগুলো অনেক গভীর। সেখানে না বলা, সীমাবদ্ধতা তৈরি করতে গেলে অপরপক্ষের মন খারাপ হবেই। তবে অন্যের মন খারাপের কথা চিন্তা না করে ভবিষ্যত সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আজকে আর্থিক লেনদেন থেকে বিরত থাকতে হবে। আর কেউ যদি আর্থিকভাবে সাহায্য না করার কারণে পারিবারিক বন্ধন ত্যাগ করে তবে এমন পারিবারিক সম্পর্ক না থাকাই ভালো।”

আরও পড়ুন-