ক্যাফেইন ছাড়াও মন মেজাজ ভালো রাখার উপায়

পান করে নয়, কাজের মধ্যে থেকেও চাঙা অনুভব করা যায়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2023, 02:09 PM
Updated : 12 Feb 2023, 02:09 PM

সকালের জড়তা কাটাতে এক কাপ চা বা কফি বেশ কাজ করে।

কিংবা দুপুরের পর চাঙা বোধ করতে কাপুচিনো বা দুধ চা’য়ে চুমুক দেওয়াটা আনন্দদায়ক বিষয়।

তবে মেজাজ ফুরফুরে রাখতে শুধু ক্যাফেইনের ওপর নির্ভর না করলেও হয়।   

এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামা নিবাসী পুষ্টিবিদ ‘হ্যাপি ইটিং পডকাস্ট’য়ের উপস্থাপক এবং ‘মিলস দ্যাট হিল: ওয়ান পট’ বইয়ের লেখক ড. ক্যারোলিন উইলিয়ামস মনে করেন নিজেকে চাঙা রাখতে ঘন ঘন কফি পান মোটেও ঠিক নয়। এটা মানুষের শারীর ও মনের ওপর প্রভাব রাখে। 

ওয়েলঅ্যাণ্ডগুড ডটকমে প্রকাশত প্রতিবেদনে উইলিয়ামস বলেন, “ক্যাফেইন সরাসরি মস্তিষ্কের ওপরে প্রভাব রাখে। একারণেই আমরা সকালে কফি পান করে থাকি। তবে অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ দুর্বলতা, উদ্বেগ এবং অস্তিরতা বাড়ায়।”

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “অ্যাডেনোসিন’ একটি ‘নিউরোট্রান্সমিটার’, যা দিন বাড়ার সঙ্গে উদ্দিপ্ত হতে থাকে। আবার বেলা শেষে ঝিমিয়ে পড়তে শুরু করে। ফলে ক্লান্তি ও ঘুম আসে। ক্যাফেইন এক্ষেত্রে প্রতিরক্ষক হিসেবে কাজ করে দেহকে সচল রাখতে সহায়তা করে।”

একই কারণে সন্ধ্যার পরে কফি পান, রাতে ঘুম ব্যাঘ্যাত ঘটায়। অনেকের ক্ষেত্রে শক্তি হ্রাস বা মেজাজের ভারসাম্যহীনতা ঘটায়।  

তাই সন্ধ্যার পরে মেজাজের উন্নতিতে ক্যাফেইনের পরিবর্তে অন্যান্য বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেন এই পুষ্টিবিদ।

আর্দ্র রাখা

মন ভালো করার দ্রুততম একটা উপায় হল আর্দ্রতা রক্ষা। দেহকে সচল রাখতে পানি পান জরুরি। তবে উইলিয়ামস ইলেক্ট্রোলাইট সম্রৃদ্ধ পানি পানে উৎসাহিত করেন। 

তিনি বলেন, “ইলেক্ট্রোলাইট দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং পান করা পানি শোষণে সহায়তা করে।”

প্রয়োজনে বাড়তি চিনি ছাড়া ইলেক্ট্রোলাইট পাউডার গ্রহণ করা যেতে পারে। এটা রক্তের শর্করা না বাড়িয়ে শক্তি বাড়াতে ও মন ভালো রাখতে সহায়তা করে।

অল্প সময়ের জন্য হলেও বাইরে যাওয়া

সকালে ঘুম থেকে উঠে দুপুরের খাবার পরে যখনই সময় পান না কেন কিছুটা সময়ের জন্য বাইরের আলো বাতাসের সংস্পর্শে যাওয়া উপকারী। এতে শরীর ও মন ভালো থাকে।

উইলিয়ামস বলেন, “সূর্যের আলোতে কেবল ২০ মিনিট হাঁটা এমনকি বাইরে বসে থাকা মন ভালো রাখে ফলে ঘুমও ভালো হয়। তাছাড়া প্রাকৃতিক সবুজের সংস্পর্শ, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে উপকারী।”

পোষা প্রাণীকে নিয়ে হাঁটতে যাওয়া অথবা বাইরে বসে চা খাওয়া- মন ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে বলে জানান, উলিয়াম।

পছন্দের শরীরচর্চা খুঁজে বের করা

দেহকে গতিশীল রাখতে পছন্দের শরীরচর্চা খুঁজে বের করার পরামর্শ দেন উইলিয়ামস। ব্যায়াম মানেই ভারী ভারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার নয়। বাইরে হাঁটতে যাওয়া, ওয়ার্ক আউট প্রোগ্রাম অনুসরণ করা ইত্যাদি বেশ কার্যকর।

তবে যে ব্যায়ামই করা হোক না কেনো নিজেকের আর্দ্র রাখার কথা ভুললে চলবে না।

উইলিয়ামস বলেন, ”বাইরে কেবল ১০ মিনিট চলাফেরা করা ও প্রকৃতি উপভোগ করা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে।”   

স্বাস্থ্যকর নাস্তা খাওয়া

ঘুমের ঘাটতি দেখা দিলে বা কাজের চাপে দিন পার করলে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।

ইউলিয়াম বলেন, “প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং জটিল কার্বোহাইড্রেইট ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন।”

রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং পেট ভরা রাখে এমন কিছু খাবারের মধ্য উইলিয়ামসসের পছন্দের তালিকায় রয়েছে- বাদাম, পনির, সুসিদ্ধ ডিম, আপেল, ও নাশপাতি।

এগুলো ব্যাগে, অফিসের ডেস্ক বা জিমের ব্যাগে, সহজ কথায় হাতের নাগালেই রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

সকালের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস রপ্ত করা

উইলিয়ামসস বলেন, “দৈনন্দিন স্বাভাবিক রুটিন অনুসরণ করা উচিত। বিশেষ করে যদি ঘুম কম হয় বা না হয়। যেমন- সকালে যদি এক কাপ কফি পানের অভ্যাস থাকে, তাহলে তা উপভোগ করা উচিত। তবে নিজের কর্মচঞ্চল রাখতে সারাদিন কফির ওপর নির্ভর করলে চলবে না।“  

তিনি নিয়মিত স্বাভাবিক শরীরচর্চা করা পরামর্শ দেন। যতই ব্যস্ততা থাকুক, মাঝে একটু সময় বের করে ব্যায়াম করা ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।

যদি সকালের কোনো রুটিন বা সপ্তাহিক চলাফেরার কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকে তবে সহজেই ওজন কমানোর নতুন কোন লক্ষ্য ঠিক করে নেওয়া যায়।

শুরুতে সকালে ১০ মিনিট করে হাঁটা, নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়া ও সপ্তাহে চলাফেরার পরিমাণ বাড়িয়ে শরীর, মন ও শক্তি বৃদ্ধি করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন

Also Read: উজ্জ্বল ঘরে ফুরফুরে মেজাজ

Also Read: প্রতিদিন সঞ্চয় করার পন্থা

Also Read: খোশমেজাজের খাবার

Also Read: ক্ষুধায় যখন ক্ষুণ্ন মেজাজ