প্রোটিন ও আঁশ আছে এরকম খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা হুট করে বাড়ায় না।
Published : 24 Oct 2022, 11:19 AM
দিনের শুরুতে কিছু অভ্যাস রক্তে শর্করার মাত্রার ওপর স্থায়ী প্রভাব ফেলে।
তাই সকালে কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে এর প্রভাবও সারাদিন উপভোগ করা যায়।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ে আলোচনায় খাদ্যাভ্যাসকে সবসময় প্রধান প্রভাবক ধরা হলেও সবসময় সঠিক নয়। দৈনন্দিন জীবনযাত্রার আরও অনেক বিষয় আছে যা ঘুম থেকে ওঠা আর ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত এবং ঘুমের মধ্যেও রক্তে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করে। যেমন- শরীরচর্চা, মানসিক চাপ, পানি পানের মাত্রা, ঘুমের পরিমাণ ইত্যাদি।
পানি পান
খুব সাধারণ বিষয়ও শরীরের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন- পানি পানের অভ্যাস। পর্যাপ্ত পানি পান রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়। আসলে রক্তের শর্করা ওই পানিতে মিশেই হালকা হবে। সেই হিসেবে রক্তে শর্করার উচ্চমাত্রা আর পানিশুন্যতা গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।
কানাডা’র টারন্টো’র পুষ্টিবিদ ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করেন, “পর্যাপ্ত মাত্রায় পানি পান করলে সেই পানি রক্তে থাকা শর্করার ঘনত্ব বেড়ে যাওয়াকে দমন করে। ফলে মাত্রা কমে। ক্ষুধাও নিয়ন্ত্রণ করে পানি পান। কমায় চিনিযুক্ত পানীয় পানের মাত্রা।”
সকালে নাস্তা করা
উল্টো মনে হলেও কিছু খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রায় ভারসাম্য আনে। যত লম্বা সময় মানুষ অনাহারে থাকবে, রক্তে শর্করার মাত্রা ততই বাড়তে থাকবে। চিকিৎসা শাস্ত্রে একে বলা হয় ‘গ্লুকোনিওজেনেসিস’।
রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তা যকৃতে সঞ্চয় করে রাখে শরীর এই প্রক্রিয়াতে, যাতে বিনা খাবারেও কর্মশক্তি না কমে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি’র পুষ্টিবিদ প্যাট্রিসিয়া কোলেসা একই প্রতিবেদনে বলেন, “লম্বা সময় না খেয়ে থাকলে শরীরের ওপর চাপ পড়ে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে। ঘুম থেকে ওঠার পর তাই রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকতে পারে। আর সকালের নাস্তাটা ভারসাম্যপূর্ণ হলে তা শর্করা মাত্রাতেও ভারসাম্য আনবে।”
“সকালের নাস্তায় ভোজ্য আঁশ ও প্রোটিন থাকলে হুট করেই শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমবে, কারণ তা হজম হবে ধীরে”, পরামর্শ দেন ভার্জিনিয়া’র পুষ্টিবিদ কর্টনি জনসন।
প্রোটিনে জোর বেশি
সকালের নাস্তায় প্রোটিন বেশি থাকলে দিনভর রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকে। কারণ প্রোটিন হজম হতে সময় লাগে বেশি। ফলে শর্করার মাত্রা হুট করে বেড়ে যায় না।
নিউ জার্সি’র পুষ্টিবিদ মিশেল কারাভেলা বলছেন, “সকালের নাস্তায় ডিম, দই ও পরিপূর্ণ শষ্যজাতীয় খাবার থাকলে খাওয়ার পর রক্তে শর্কার মাত্রা হুট করে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।”
নাস্তার পর হাঁটাহাঁটি
ডালাস’য়েল পুষ্টিবিদ ব্রিটানি ক্রাম্প বলেন, “দিনের শুরুতে শারীরিক পরিশ্রম করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিচে নামতে শুরু করে। আমাদের পেশির জ্বালানি হল শর্করা। তাই শরীরচর্চার সময় আমরা রক্ত থেকে শর্করা বের করে কাজে লাগাচ্ছি। সকালের নাস্তার পর মাত্র দুই মিনিট হাঁটাও রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় অনেকটা।”
কফিতে সাবধান
কফিতে থাকা ‘ক্যাফেইন’ই রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। মানসিক চাপ সৃষ্টি করে এমন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ‘ক্যাফেইন’ যা আমাদের সকালে চাঙা অনুভূতি দেয়। আর সেটাই আবার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়।
কফি যদি চিনি ছাড়াও পান করা হয় তবুও একই প্রভাব ফেলতে পারে।
এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য পানি পানের মাত্রা বাড়াতে হবে, ভারসাম্যপূর্ণ নাস্তা খেতে হবে। দিনে ৪০০ মি.লি. গ্রামের বেশি ‘ক্যাফেইন’ গ্রহন করা যাবে না।
ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ জুলিকানিংহাম বলেন, “কফি পান করা অভ্যাস ডায়াবেটিস ঝুঁকি কমায় ঠিক। তবে আমার অনেক রোগীর মাঝে দেখেছি কফি পান করলে তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে। বিশেষ করে কফির সঙ্গে যদি কার্বোহাইড্রেট’য়ের মাত্রা বেশি এমন খাবার খাওয়া হয় তবে প্রভাব আরও তীব্র হয়।
আরও পড়ুন