ডায়াবেটিকদের জন্য সকালের নাস্তা

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর জন্য সকালের নাস্তার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় নজরে রাখা ‍উচিত।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2020, 02:59 PM
Updated : 1 Sept 2020, 06:11 AM

দিনের তিনবেলা খাওয়ার মধ্যে সকালের নাস্তা সবচাইতে জরুরি। আর একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর জন্য এর গুরুত্ব কয়েকগুন বেশি। কারণ রক্তে শর্করার মাত্রা খুব শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে এই রোগে আক্রান্তদের।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে জানানো হল ডায়াবেটিকদের জন্য সকালের নাস্তা কেন জরুরি এবং কোন খাবারগুলো খাওয়া উপকারী হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত।

যে কারণে সকালের নাস্তা আবশ্যক

শিকাগোর ‘রেজিস্টার্ড’ পুষ্টিবিদ মেলিসা জয় ডবিনস বলেন, “একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর রক্তে শর্করার মাত্রা ওঠানামা করতে পারে দ্রুত। তাই এর স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে দিনে যতটুকু খাবার খাবেন তা কয়েক ঘণ্টার অনেকগুলো বিরতি দিয়ে খেতে হবে।”

“এই অবস্থায় কেউ এক বেলার খাবার বা সকালের নাস্তা একেবারেই বাদ দিলে রক্তে শর্করার মাত্রা যেমন মারাত্বক হারে কমে যেতে পারে তেমনি অতিরিক্ত ক্ষুধার কারণে অন্যবেলায় বেশি খাওয়া হয়ে যাবে। তাই সকালের নাস্তা কোনোভাবেই বাদ দেওয়া চলবে না এবং প্রতিদিন প্রায় একই সময়ে নাস্তা খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।”

প্রোটিন থাকতেই হবে

খাওয়ার পর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর শর্করার মাত্রা অল্প সময়ে অনেকটা বেড়ে যায়। তবে ওই বেলার খাবারে প্রোটিনের মাত্রা বেশি হলে এই আকস্মিক শর্করা বেড়ে যাওয়া সামলানো সহজ হয়।

তবে মজার ব্যাপার হল এই কাজটি আসলে প্রোটিন করে না।

যুক্তরাষ্ট্রের আরেক পুষ্টিবিদ মেলিন্ডা মেরিনিক বলেন, “সকল প্রোটিনের সঙ্গে আসে বিভিন্ন পরিমাণে চর্বি। এই চর্বিই মূলত রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে এবং লম্বা সময় ক্ষুধা অনুভূত হতে দেয় না।”

তিনি আরও বলেন, “সকালের নাস্তায় নুন্যতম পাঁচ গ্রাম প্রোটিন থাকতে হবে। একটি ডিম, আধা কাপের সামান্য কম দুধ, দেড় টেবিল-চামচ পিনাট বাটারেই এইটুকু প্রোটিন পাওয়া যাবে। এই প্রোটিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সঙ্গে যোগ করতে পারেন বাদাম, ওটমিল, সূর্যমুখীর বীজ দেওয়া দই ইত্যাদি।”

প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইডেট বাদ দিতে হবে

শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ হোক অথবা ওজন নিয়ন্ত্রণ, কার্বোহাইড্রেইট এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে সকল ‘কার্বোহাইড্রেইট’য়ের প্রভাব সমান নয়। প্রক্রিয়াজাত ‘কার্বোহাইড্রেইট’ যা পাউরুটি, সিরিয়াল ইত্যাদিতে পাওয়া যায়, তা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। তাই ফল, শষ্য ইত্যাদি প্রাকৃতিক খাবার বেছে নিতে হবে।

বাইরে সকালের নাস্তা

সবার সকালের নাস্তা ঘরে খাওয়া সুযোগ হয় না। সেক্ষেত্রে রেস্তোরাঁয় রাজকীয় নাস্তা খেলে অনেক বেশি ক্যালরি গ্রহণ করে ফেলতে পারেন। তাই বলে যে না খেয়ে থাকবেন সেটাও উচিত নয়। তাই বুঝে শুনে যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিতে হবে। সেখানে থাকতে হবে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট আর চর্বির স্বাস্থ্যকর মাত্রার মিশ্রণ।

খাদ্যাভ্যাসে ভোজ্য আঁশ থাকতে হবে

ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ‘কোলোরেক্টাল ক্যান্সার’ ইত্যাদি মরণব্যাধি আশঙ্কা ১৬ থেকে ২৪ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে খাদ্যাভ্যাসে সঠিক মাত্রায় ভোজ্য আঁশের উপস্থিতি। এজন্য খেতে হবে তাজা ফল, খাবারের ওপর ছিটিয়ে দিতে পারেন ‘ফ্লাক্সসিড’। ইসবগুলের ভুষিও ভোজ্য আঁশের আদর্শ উৎস।

ওটমিল

সকালের নাস্তায় একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর জন্য ওটমিল হতে পারে আদর্শ খাবার। প্রতিকাপ ওটমিলে থাকে চার গ্রাম ভোজ্য আঁশ, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ কার্যকর।

তবে ‘ফ্লেইভার’যুক্ত ওটমিল খাওয়া চলবে না। কারণ সেগুলোতে থাকে চিনি ও লবণ এবং তা প্রক্রিয়াজাত। বরং বেছে নিতে হবে ‘স্টিল-কাট ওটস’।

এই ওটস রান্না করতে ৫০ মিনিট সময় লাগে। তাই সময় বাঁচাতে প্রয়োজনে একসঙ্গে দুই দিনের সমান রান্না করে ফ্রিজে রেখে খেতে পারেন। এর সঙ্গে স্বাদমতো, কিশমিশ, বাদাম, ফল ইত্যাদি যোগ করতে পারেন।

ননীমুক্ত দুধ ও টকদই

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার যত বেশি খাওয়া হবে, বিপাক ক্রিয়াজনীত সমস্যার আশঙ্কা ততই কমবে। তবে সেজন্য ব্যবহার করতে হবে ননীমুক্ত দুধ, দইয়ের মধ্যে টকদই। টকদইয়ের মধ্যে ‘ফ্লেইভার’যুক্ত টকদই খেলে আবার কোনো লাভ নেই, বরং ক্ষতিই বেশি।

‘সিরিয়াল’ থেকে বেরোতে হবে

আমাদের দেশে সিরিয়ালের প্রচলন তুলনামূলক কম হলেও অনেক মানুষই সকালের নাস্তায় সিরিয়াল খান ঝামেলা এড়াতে এবং স্বাস্থ্যকর মনে করেই। তবে সকালের নাস্তায় আগের রাতের বেঁচে যাওয়া তরকারি দিয়ে লাল আটার রুটিও খেতে পারেন সকালের নাস্তায়। সিরিয়াল ছাড়াও আরও অনেক খাবার আছে যা কম সময়েই তৈরি করে ফেলা যায়।

ফল খান, শরবত নয়

ফলের শরবতে ভোজ্য আঁশ প্রায় মেলে না বললেই চলে। আরও থাকতে পারে প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেইট।

বরং সকালের নাস্তায় আস্ত একটি ফল খেলে হজম করতে সময়ও বেশি লাগে। তাই তুলনামূলক বেশি সময় ক্ষুধা দূরে থাকবে।

আর ফল খেলে রক্তে শর্করার মাত্রাও হুট করেই বেড়ে যাবে না।

অন্যদিকে শরবত যদি পান করতেই হয়ে তবে স্বাভাবিকের থেকে পাতলা করে খাওয়া ভালো।

আরও পড়ুন