হঠাৎ হৃদযন্ত্রে গণ্ডগোল

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Feb 2023, 06:16 AM
Updated : 15 Feb 2023, 06:16 AM

‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ ও ‘হার্ট অ্যাটাক’য়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

যে কারও হৃদযন্ত্র হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যাকে বলা হয় ‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’। আর দ্রুত চিকিৎসা দিতে না পারলে মৃত্যু নিশ্চিত।

তবে ‘হার্ট অ্যাটাক’ আর ‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ এক নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিক জানাচ্ছে, “হৃদযন্ত্রের কোনো অংশে রক্ত প্রবাহ আটকে যাওয়াকে ‘হার্ট অ্যাটাক’ বলে। তবে ‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ রক্ত প্রবাহ বন্ধ না হওয়া থেকেও হতে পারে। আর হার্ট অ্যাটাকের কারণে হৃদযন্ত্রের বৈদ্যুতিক প্রক্রিয়ার পরিবর্তন থেকেও ‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হতে পারে।”

ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন না করা, স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখা, ডাক্তারের কাছে বাৎসরিক পরীক্ষা করানো ইত্যাদির মাধ্যমে ‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’য়ের ঝুঁকি কমানো যায়।

‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ সম্পর্কে যা জানা দরকার

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্যাপটিস্ট হেল্থ মায়ামি কার্ডিয়াক অ্যান্ড ভাস্কুলার ইন্সটিটিউট’য়ের স্পোর্টস কার্ডিওলজি বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. এলি ফ্রায়েডম্যান ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “যে কোনো মানুষের, যে কোনো সময়, যে কোনো জায়গায় ‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হতে পারে। এর পেছনে কারণ থাকতে পারে হৃদস্পন্দনের বিপজ্জনক গতি অথবা হৃদস্পন্দন একেবারে থেমে যাওয়া। এক্ষেত্রে ৩ মিনিটের মধ্যে (সিপিআর) বা কৃত্রিমভাবে শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যবস্থা না করা গেলে মৃত্যু নিশ্চিত।”

আটলান্টার ‘পাইডিমন্ট হসপিটাল/ হেল্থকেয়ার’য়ের কোভিড টাস্ক ফোর্সের ক্লিনিকাল পরিচালক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জেইন মর্গান এই বিষয়ে আরও বলেন, “ব্যবস্থাপত্রে উল্লেখ থাকা বিভিন্ন ওষুধ অনিয়মিতভাবে খাওয়া ও বিনোদনের জন্য বিভিন্ন ওষুধ গ্রহণ করার কারণে স্বাস্থ্যবান মানুষেরও ‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হতে পারে।”

যে কারণে ‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হয়

ডা. মর্গান ব্যাখ্যা করেন, “হৃদযন্ত্রের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে ‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হয়। আর এটা হতে পারে হার্ট অ্যাটক হলে।”

আবার হার্ট অ্যাটাকের বিভিন্ন কারণ রয়েছে- হৃদযন্ত্রে রক্তপ্রবাহ আটকে যাওয়া, কোষে আঘাত, হৃদযন্ত্র বড় বা ছোট থাকা, দেহের ইলেক্ট্রোলাইটস যেমন- পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামের আকস্মিক পরিবর্তন ইত্যাদি।

ডা. ফ্রায়েডম্যান বলেন, “উপরের বিষয়গুলো ছাড়াও বিভিন্ন কারণে এই সমস্যা হতে পারে। আসল বিষয় হল ‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হলে হৃদযন্ত্র থেমে যাবে, আর মৃত্যু হবে।”

জন হপকিন্স মেডিসিন জানাচ্ছে, “অবস্থার প্রেক্ষিতে হৃদযন্ত্র বন্ধ হতে পারে আবার আকিস্মিক থেমে যেতে পারে। তবে ‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’য়ের তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে-

অ্যারিদমিয়া অ্যান্ড ভেন্ট্রিকুলার ফাইব্রেলেইশন: হৃদযন্ত্রে বৈদ্যুতিক সংকেতের ব্যাঘাতের কারণে অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন থেকে অ্যারিদমিয়া হয়।

অ্যারিদমিয়া’র খুবই সাধারণ একটি ধরন হল ভেন্ট্রিকুলার ফাইব্রেলেইশন। এর ফলে হৃদপিণ্ড স্বাভাবিকের তুলনায় দুর্বলভাবে রক্ত পাম্প করে। যে কারণে ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হয়।

হৃদযন্ত্র বড় হয়ে যাওয়া (কার্ডিওমায়োপ্যাথি): হৃদযন্ত্রের পেশি বৃদ্ধি পেলে বা মোটা হয়ে গেলে হৃদযন্ত্রের সংকোচন প্রসারণে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।

করোনারি আর্টারি ডিজিজ: ‘প্লাক’ জমে হৃদপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালনের ধমনী বা শিরা মোটা বা সরু হয়ে গেলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এর ফলে হৃদপিণ্ডে রক্ত প্রবাহ বাধা পায়।

যদি চিকিৎসা না করা হয় তবে ‘করোনারি আর্টারি ডিজিজ’ থেকে হৃদযন্ত্র থেমে যাওয়া বা ‘আরিদমিয়াস’ দেখা দেয়। যা থেকে হয় ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’।

প্রতিটা সেকেন্ড গুরুত্বপূর্ণ

ডা. মর্গান বলেন, “কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’য়ের কারণে হৃদযন্ত্র ও শ্বাস প্রশ্বাস থেমে যায়। ফলে সাধারণত ছয় সেকেন্ডের মধ্যে মানুষ জ্ঞান হারায়।

তাৎক্ষণিক সিপিআর দিতে পারলে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

বেঁচে গেলে নানান স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগতে হতে পারে

ডা. মর্গান জানান, ‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষের বেশিরভাগ সময় স্নায়ূতন্ত্রের নানান সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়।”

এছাড়াও কথা বলা, খাওয়া, পোশাক পরা, হাঁটাতে সমস্যা হওয়া ছাড়াও স্মরণশক্তিতে প্রভাব ফেলে।

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার পূর্বাভাস

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানাচ্ছে, কোনো প্রকার উপসর্গ ছাড়াই ‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হতেই পারে। তারপরও কিছু লক্ষণের দিকে নজর দেওয়া যায়-

অজ্ঞান হওয়া, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, বুকে ব্যথা, মাথা ঘোরা বা ঝিমঝিম করা, মাথা হালকা লাগা, নিঃশ্বাসে সমস্যা বা শর্টনেস অফ ব্রেথ, পাকস্থলীতে অস্বস্তি ও বমি করা।

এসব দেখা দিলে ধরে নিতে হবে হৃদস্পন্দনে হয়ত অস্বাভাবিকতা দেখা দিচ্ছে। আর ‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হওয়ার পরের লক্ষণগুলো হল-

হঠাৎ পড়ে যাওয়া, কোনো নাড়ি বা হৃদ স্পন্দন না থাকা, শ্বাসপ্রশ্বাস না থাকা, জ্ঞান না থাকা। তবে জ্ঞান থাকতে থাকতে দেখা দিতে পারে- বুকে অস্বস্তি, নিঃশ্বাসে সমস্যা, দুর্বলতা, হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া বা বুক ধড়ফড় করা যাকে বলে ‘পালপেটেইশন্স’।

আরও পড়ুন

Also Read: হৃদরোগের বড় কারণ অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

Also Read: হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে যেসব খাবার

Also Read: হার্ট অ্যাটাকের যে উপসর্গ অনেকেরই অচেনা

Also Read: ‘হার্ট অ্যাটাক’য়ের নিশ্চিত পূর্বাভাস