ত্বক আর্দ্র রাখতে পানি পান ছাড়াও প্রসাধানী ব্যবহারেও গুরুত্ব দিতে হয়।
Published : 14 Dec 2023, 04:30 PM
তাপমাত্রা কমলে ত্বকে শুষ্কতার লক্ষণ যেমন- লালচে ও খসখসে ভাব এমনকি চুলকানি দেখা দিতে পারে।
এতে ত্বকে কেবল বাহ্যিক পরিবর্তনই আসে না বরং ত্বকে ফুটে ওঠে বয়সের ছাপ।
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘অ্যালেভেন স্কিনকেয়ার’য়ের প্রতিষ্ঠাতা সেলিয়া ফর্নার বলেন, “সারা বছর ধরেই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের প্রয়োজন রয়েছে। তবে শীতকালে এটা আবশ্যক। কারণ এই সময়ে ত্বক আরও বেশি পানিশূণ্য হয়ে পড়ে এবং ভাঁজ ও বলিরেখা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা ত্বকের আর্দ্রতা শুষে নিয়ে ত্বক আরও বেশি শুষ্ক করে তোলে।”
শীত মৌসুমে হায়ালুরনিক অ্যাসিড সেরাম খুব ভালো কাজ করে। ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে আর্দ্রতা রক্ষা করে এবং উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সহায়তা করে।
সাপ্লিমেন্ট ব্র্যান্ড ‘ভিডা গ্লো’য়ের প্রতিষ্ঠাতা অ্যানা লাহে বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে, ত্বক কোমল ও মসৃণ রাখতে প্রয়োজনীয় ফ্যটি অ্যাসিড শীতকালে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।”
ব্যাখা করে তিনি বলেন, “পরিচর্যার ফলে ত্বকের মাত্র তিন শতাংশ পর্যন্ত কাজ করে। তাই আর্দ্রতা রক্ষাকারী উপাদান সমৃদ্ধ উন্নত ক্রিম ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।”
প্রয়োজনীয় প্রসাধনী
ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষায় হায়ালুরনিক অ্যাসিড এমন একটা উপাদান যা গভীরে গিয়ে কাজ করে। এই সেরাম ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে, সুরক্ষার স্তরকে সুস্থ রাখে এবং ‘স্কুয়ালান’ লুব্রিকেন্ট হিসেবে কাজ করে ত্বকে মসৃণ ও কোমলভাব ধরে রাখে।
ফর্নার বলেন, “তুলনামূলক কম পরিচিত এমন আরেকটি আর্দ্রতা রক্ষাকারী উপাদান হল ‘ক্লোরেলা ভাল্গারিস’য়ের নির্যাস যা ত্বক আর্দ্র রাখে ও আরাম দেয়। নিয়াসিনামাইড এমন আরেকটি জনপ্রিয় উপাদান যা ত্বক সুস্থ রাখতে প্রয়োজনীয় কোলাজেন ও কেরাটিনের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে।”
ত্বক বিশেষজ্ঞরা শুষ্ক সময়ে ত্বকে কড়া ক্লেঞ্জার এড়িয়ে চলা, হালকা লোশনের পরিবর্তে ভারী ক্রীম ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে।
ইঞ্জেকশন যোগ্য ময়েশ্চারাইজার
কস্মেটিক ডার্মাটোলজি ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ইঞ্জেক্ট করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন যা ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে আর্দ্রতা ধরে রাখে।
‘স্কিনভাইভ’ এমন একটা চিকিৎসা- যার মধ্যে রয়েছে হায়ালুরনিক অ্যাসিড, এটা ছয় মাস ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে।
লস আঞ্জেলস ভিত্তিক সৌন্দর্য-বিশেষজ্ঞ আনুশ মোভসেসিয়ান বলেন, “এটা কোনো ফিলার নয় বরং ‘স্কিন বুস্টার’ যা ত্বকে সতেজ, প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ও স্থিতিস্থাপকতা দান করে।”
সম্পূরক
পুষ্টি দেহের ভেতর থেকে ত্বক ভালো রাখে। সম্পূরকের ধারণা যদিও নতুন নয় তবে আর্দ্রতা রক্ষাকারী উপাদান সম্পূরক হিসেবে গ্রহণ করা ত্বককে গভীর থেকে আর্দ্র রাখতে সহায়তা করে।
অ্যানা লাহে বলেন, “কোলাজেন এমন একটা সম্পূরক যা হায়ালুরনিক অ্যাসিডের মতো অণুর উৎপাদন বাড়ায়, ফলে ত্বকে জলীয় অণুর বন্ধনী সৃষ্টি হয় যা আর্দ্রতা রক্ষায় সহায়তা করে।”
তিনি আরও বলেন, “অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যেমন- ফ্যাটি অ্যাসিড, ত্বকের সুরক্ষার স্তর উন্নত করে, ভিটামিন সি২ সেরামাইডের উৎপাদন বাড়ায় ফলে ত্বক সুরক্ষিত থাকে।”
অন্যান্য গবেষণায় দেখা যায় যে, হায়ালুরনিক অ্যাসিড ত্বকের আর্দ্রতা বাড়ায় এবং সুরক্ষার স্তর উন্নত করতে পারে।
পানি পান
ত্বক ভালো রাখতে দেহের ভেতর ও বাইরে আর্দ্র রাখতে হবে।
ফর্নার বলেন, “পানি পান করা হলে তা পাকস্থলিতে প্রবেশ করে এবং রক্তপ্রবাহে শোষিত হয়। পরে বৃক্কে পরিশোধিত হয়ে দেহ কোষে পৌঁছে, যা আর্দ্র রাখে।”
“সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের মতো ইলেক্ট্রোলাইট অত্যাবশ্যকীয় খনিজ পদার্থ”- বলেন তিনি।
নিউ ইয়র্ক’য়ের বোর্ড প্রত্যয়িত ত্বক বিশেষজ্ঞ ড্যান্ডি ইঙ্গেলম্যান বলেন, “পানি পানের মাত্রা বৃদ্ধি ত্বকের পানিশূণ্যতার জন্য খুব একটা কার্যকর নয়। পর্যাপ্ত পানি পান ত্বকের দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সহায়তা করে।”
কঠিন আর্দ্রতার রুটিন দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় এবং প্রদাহ দূর করে ফলে ত্বক ভালো থাকে।
ডা. ইঙ্গেলম্যান বলেন, “প্রদাহ বৃদ্ধি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়। ফলে ব্রণ, একজিমা ও সিরোসিসের মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।”
দৈনিক পর্যাপ্ত পানি পান নানাবিধ উপকার করে যেমন- হজমে সহায়ত, দুশ্চিন্তা ও মাথা ব্যথা হ্রাস। শীতকালেও পর্যাপ্ত পানি পান করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন