সারাদিনে গুরুত্বপূর্ণ খাবার হল সকালের নাস্তা- এই কথা নতুন নয়।
তবে সময়ের অভাব, আরও ঘুমানো দরকার বা সকালে ক্ষুধা বোধ না করার কারণে অনেকেই সকালের নাস্তা খেতে চান না। আবার অনেকে ওজন কমাতে গিয়েও সকালে খাওয়া বাদ দেন।
তবে এর খারাপ দিক যেমন রয়েছে। তেমনি কিছু ভালো দিকও আছে।
যে কারণে সকালের নাস্তা করা হয়
‘ব্রেকফাস্ট’ শব্দের মধ্যেই অন্তর্নিহিত সত্যটা লুকিয়ে আছে। অর্থাৎ সারারাতের স্বাভাবিক উপবাস সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাঙা হয় খাবার খেয়ে। তাই ‘ব্রেকফাস্ট’ বা দিনের প্রথম উপবাস ভাঙার গুরুত্বপূর্ণ কারণও রয়েছে।
এই বিষয়ে নিউ ইয়র্ক’য়ের পুষ্টিবিদ মারিসা মেশুলাম বলেন, “সকালে নাস্তা করার মানে হল, সারারাতের গ্লুকোজের ঘাটতি পুরণ করা। যা কিনা শরীরে শক্তি সরবরাহ করে।”
“তাছাড়া সারাদিন স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করে সকালের নাস্তা। দিনের শুরুতে পুষ্টিকর খাবার খেলে শারীরিক ও মানসিকভাবেও সুস্থ থাকা নিশ্চিত করা যায়”- রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন তিনি।
আর পুষ্টিকর খাবার মানে সেখানে থাকতে হবে- প্রোটিন (ডিম), স্বাস্থ্যকর চর্বি (অলিভ অয়েল), আঁশ (লাল আটা রুটি) ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (যে কোনো ফল) সমৃদ্ধ খাবার।
যেসব কারণে সকালের নাস্তা না খাওয়া ফলপ্রসু হতে পারে
সকালের নাস্তা তৈরি করতে সময় খরচ হয়। যাদের সকালেই ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়, তাদের ক্ষেত্রে সময় বাঁচাতে সকালের নাস্তা না করাটা উপকারী হতে পারে- একই প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন নিউ ইয়র্ক’য়ের আরেক পুষ্টিবিদ ম্যাডি পাসকুয়ারিলো।
সকালের নাস্তা গুরুত্বপূর্ণ হলেও জীবনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না থাকায় অনেকেই সকালে নাস্তা করা বাদ দেন। সেটা হতে পারে ঝামেলা এড়াতে বা টাকা বাঁচাতে।
সকালে ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক পদ্ধতি হতে পারে সকালে নাস্তা না করা। এক্ষেত্রে পাসকুয়ারিলো’র পরামর্শ হল- যদি ৬টায় উঠে ৭টা পর্যন্ত ব্যায়াম করা হয়, তবে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা না করাটা সুবিধাজনক হতে পরে। কিন্তু ব্যায়ামের পর নাস্তা না করলে শরীর খারাপ করার সম্ভাবনা থাকে। তাই কলা ও ওটমিল বেছে নেওয়া উচিত হবে।
সকালের নাস্তা এড়িয়ে যাওয়র সম্ভাব্য ক্ষতি
আইবিএস’য়ের সমস্যা: মেশুলাম বলেন, “যদি ইরিটেবল বাওল সিন্ড্রোম (আইবিএস)’ থাকলে সকালে না খাওয়ার কারণে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।”
পুষ্টিকর সকালের নাস্তার মধ্যে- উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খেলে অন্ত্রের উপকার হয়। ফলে আইবিএস’য়ে ভোগার পরিমাণ কমতে পারে।
হৃদরোগ: “গবেষণায় দেখা গেছে সকালের নাস্তা করলে সারাদিন খিদা কম লাগে আর ইন্সুলিনের সঠিক মাত্রা বজায় থাকে” – বলেন মেশুলাম।
মানে যারা সকালে খান না তাদের মধ্যে ইন্সুলিনের সহ্য করার প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় যা হৃদরোগের দিকে নিয়ে যেতে পারে। সেই সাথে উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের ভারসাম্যহীনতার ঝুঁকি বাড়ে।
ক্ষুধা বাড়ায়: যে কোনো বেলার খাবার খাওয়া বাদ দেওয়া মানে পরে ক্ষুধা বেশি লাগা। আর সকালের নাস্তার ক্ষেত্রে এটা বেশি প্রযোজ্য।
প্রাতরাশের ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুধা বোধ করার হরমোন ‘ঘ্রেলিন’য়ের মাত্রা কমে। আর সারাদিন পরিপূর্ণ থাকার অনুভূতি দেয় তৃপ্ত থাকার হরমোন।
সকালে নাস্তা না করলে স্বাভাবিকভাবেই সারাদিনে বেশি খিদা লাগবে, কাজে শক্তি পাওয়া যাবে না আর মনোযোগে ঘাটতে দেখা দেবে।
রক্তে শর্করার মাত্রায় কু-প্রভাব: সকালের নাস্তা করা বাদ দিলে ‘হাইপোগ্লাইসেমিয়া’, ‘ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স’, খাবার ইচ্ছের পরিবর্তন হওয়া (বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে)- এই ধরনের সাংঘাতিক সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে জানান- পাসকুয়ারিলো।
যেসব লক্ষণ দেখা দিলে সকালে নাস্তা খাওয়া বাদ দেওয়া যাবে না
যদিও সকালে নাস্তার বিষয়টা ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে। তবে কিছু বিষয় বা উপসর্গ দেখা দিলে কোনো মতেই দিনের প্রথম খাবারটা বাদ দেওয়া যাবে না।
দুপুরে গড়াতে না গড়াতে ক্লান্ত লাগা।
মন মেজাজের নিম্ন মুখিতা।
মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগা (ব্রেইন ফগ)।
মাথাব্যথা।
প্রচণ্ড ক্ষুধা লাগা, বিশেষ করে মিষ্টি কিছু খাওয়ার ইচ্ছা করা।
অযাচিত ওজন কমা।
খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন।
ঘুমে ব্যঘাত।
হজমে সমস্যা।
একইভাবে কোনো খাবার খেলে বা কফি পানে যদি সমস্যা দেখা দেয় তাহলেও সকালের নিয়মিত নাস্তা করতে হবে।
পাসকুয়ারিলো বলেন, “সব সময় ক্ষুধার সংকেত বোঝা আর শরীর কী চায়- সেটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”
ধরা যাক রাতে বেশি খাওয়া হয়ে গেছে, সকালেও উঠেও পেটভরা লাগছে তবে নাস্তা না করলেও হয়।
“অন্যদিকে রাতে ভারী খাবার খাওয়ার পরও যদি সকালে খিদা লাগে তবে দয়া করে নাস্তা করুন” পরমর্শ দেন এই পুষ্টিবিদ।
রাতে কী খাবার কতটা খাওয়া হয়েছে সেটার ওপর নির্ভর করে সকালের নাস্তা খাওয়া বা না খাওয়া নির্ভর করে না। শরীরের যখন খাবার দরকার হয় তখন খিদা লাগবেই। আর এসব ইঙ্গিত মানা উচিত।
ছবি: পেক্সেলস ডটকম।
আরও পড়ুন