সাদা চালের ভাত খাওয়ার উপকারী ও অপকারী, দুই দিকই রয়েছে।
পৃথিবীতে সবচাইতে বেশি খাওয়া হয় এমন শষ্যের মধ্যে বিশেষ স্থান দখল করে আছে চাল বা ভাত। বহুমুখী ব্যবহার আছে এই শষ্যের, যা থেকে স্বাদও মেলে বিভিন্ন ধরনের। আর চালের জাতও আছে অসংখ্য।
‘ফুড অ্যান্ড ওয়াইন’ ম্যাগাজিনের এক সমীক্ষার বরাত দিয়ে ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিশ্বব্যাপি মানুষ যত ক্যালরি গ্রহণ করে তার এক পঞ্চমাংশই আসে চাল বা ভাত থেকে।
বিশ্বব্যাপি যে চাল ব্যাপক সমাদৃত তা হল সাদা চাল। এই চাল পরিশোধিত। ‘রাইস মিল’গুলো ধানের বাইরের আবরণ, যবের আস্তর ও ‘জার্ম’ অপসারণ করে সাদা চাল তৈরি করে।
এই পরিশোধনের কারণে সাদা চালের আবার কুখ্যাতি আছে। কেউ বলে তা বাজে কার্বোহাইড্রেইট, কেউ আবার বলে এতে শুধুই ক্যালরি থাকে। উপকারী বলা হয় বাদামি কিংবা লাল চালকে।
আসলেই কি তাই? এই চাল খাওয়া কি বাদ দেওয়া উচিত একেবারেই।
উত্তর দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ, ‘দ্য ফার্স্ট টাইম মম’স প্রেগনেন্সি কুকবুক’, ‘দ্য সেভেন ইনগ্রিডিয়েন্ট হেলদি প্রেগনেন্সি কুকবুক’ এবং ‘ফুয়িলিং মেল ফার্টিলিটি’র রচয়িতা লরেন মানাকার।
কর্মশক্তি বাড়ায়
মানাকার বলেন, “সাদা চাল হল কার্বোহাইড্রেইট’য়ের উৎস। আর শরীরের প্রধান জ্বালানি হল এই কার্বোহাইড্রেইট। পাশাপাশি সাদা চালের কিছু ধরনের সঙ্গে যোগ করা ‘বি-ভিটামিনস’। সব মিলিয়ে সাদা চাল দৈনিক কর্মশক্তির যোগান দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।”
‘নিউট্রিয়েন্ট’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার সূত্র ধরে তিনি আরও জানান, ‘ফোলাট’ বাদে সকল ‘বি ভিটামিনস’ কোষের কর্মশক্তি তৈরির প্রক্রিয়ার এক বা একাধিক ধাপের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত।
অর্থাৎ, কর্মশক্তি পেতে হলে ‘বি ভিটামিনস’ লাগবেই। শরীরের এই অভাব থাকলে কর্মশক্তিরও অভাব দেখা দেবে।
শরীরে যেতে পারে আর্সেনিক
মানাকার বলেন, “নিয়মিত শরীরে ‘আর্সেনিক’ প্রবেশ করলে তা বিষক্রিয়া তৈরি করে। চালে এই রাসায়নিক উপাদানটি পাওয়া যায়। ফলে চাল থেকে হওয়া ভাত খেলে শরীরে তার সঙ্গে আর্সেনিক’ও প্রবেশ করবে।”
সাদা চালে আর্সেনিক’য়ের মাত্রা বাদামি চালের তুলনায় কম। চাল থেকে ‘আর্সেনিক’ গ্রহণের মাত্রা কমাতে হলে খাদ্যাভ্যাসে বিভিন্ন শষ্য যোগ করতে হবে।
চাল কোন অঞ্চলে উৎপাদন হয়েছে তার ওপর আর্সেনিক’য়ের মাত্রা নির্ভর করে।
যেমন- ক্যালিফোর্নিয়া, ভারত ও পাকিস্তানে উৎপাদিত বাসমতি চালে আর্সেনিক’য়ের মাত্রা তুলনামূলক কম।
হাড় শক্ত করে
মানাকারের ভাষায়, “সাদা চালের ভাত বা যে কোনো পদ হাড়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। হাড়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য ক্যালসিয়াম আর ভিটামিন ডি জরুরি, এটা সবারই জানা। কিন্তু আরেকটি উপাদান নীরবে হাড়ের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করে, তা হলো ম্যাঙ্গানিজ। আর সাদা চালের ভাত থেকে মেলে এই উপাদান।”
বিপাকে সমস্যা হতে পারে
পুরোপুরি তথ্যসিদ্ধ না হলেও কিছু গবেষণা বলে, সাদা চালের ভাত খাওয়া থেকে বিপাকক্রিয়ার সমস্যা দেখা দেওয়া সম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্রের দাতব্য প্রতিষ্ঠান মায়ো ক্লিনিকের মতে, “মেটাবলিক সিন্ড্রোম’ হল বিভিন্ন বিপাকীয় সমস্যার সমষ্টি যা একসঙ্গে দেখা দেয়। পাশাপাশি হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ডায়াবেটিস’য়ের ঝুঁকি বাড়ায় এই সমস্যার সমষ্টি।
সমস্যাগুলো হল রক্তে শর্করা, কোলেস্টেরল আর ‘ট্রাইগ্লিসেরাইড’য়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়া।
পরিসংখ্যান বলে, যারা সাদা চালের ভাত বেশি খান তাদের ‘মেটাবলিক সিন্ড্রোম’য়ের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে ৩০ শতাংশ। তাই এই চালের ওপর যারা বেশি নির্ভরশীল তাদের জন্য উচিত হল অন্যান্য শষ্যের ওপর জোর বাড়ানো।