যে রান্না পারে না, সেও সহজে ডিম দিয়ে খাবার তৈরি করতে পারবে।
Published : 05 Nov 2023, 11:18 AM
সকালের নাস্তায় ডিম ভাজা, সেদ্ধ, ক্রাম্বল, পোচ ইত্যাদি নানান উপায়ে খাওয়া হয়।
এটা প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ যা শরীরের জন্য উপকারী।
তবে ওজন কমাতে সাহায্য করে কিনা বা কোলেস্টেরল থাকলে খাওয়া ঠিক কি-না, এই বিষয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে।
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে যা খাওয়া হচ্ছে তা সরাসরি দেহে প্রভাব রাখে। ডিমে কোলোস্টেরল ধরনের উপাদান বেশি থাকার জন্য একসময় ওজন কমানোর ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হতো।
তবে ২০২২ সালে ‘নিউট্রিয়েন্টস’ সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, ডিমে থাকা উচ্চ প্রোটিন যৌগ দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে। ফলে অতিভজন এবং নাস্তায় আজেবাজে খাবার গ্রহণ থেকে বিরত রাখতে পারে।
ডিমে আছে অত্যাবশকীয় পুষ্টি উপাদান
ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের জন্য প্রয়োজনীয়। ডিমে আছে কম মাত্রায় ক্যালোরি এবং অতি মাত্রার পুষ্টি উপাদান যা, ওজন কমানো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য খাদ্য পরিকল্পনা ক্ষেত্রে আদর্শ।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া’র পুষ্টিবিদ ডেস্টিনি মুডি’র মতে ওজন কমাতে ডিম সহায়তা করে এমন পাঁচটি উল্লেখযোগ্য কারণ হল-
ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে এবং বিপাক বাড়ায়
ডিম প্রোটিন সমৃদ্ধ। মাঝারি মাপের একটি ডিমে প্রায় ছয় গ্রাম পরিমাণ প্রোটিন থাকে। প্রোটিন দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে এবং বিপাকে সাহায্য করে ফলে বাড়তি ওজন কমে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফেয়ারফিল্ড ইউনিভার্সিটি’র করা গবেষণায় দেখা গেছে, ডিমের কুসুম বিপাকীয় স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়তা করে।
মুডি বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে, সকাল বেলায় যারা পেট ভরে এবং ডিম দিয়ে নাস্তা করেন তাদের ‘বেগেলস’ দিয়ে নাস্তা করেছে এমন অংশগ্রহণকারীদের তুলনায় সারা দিনের খাদ্য চাহিদা কম থাকে।”
২০০৮ সালে ‘সেন্ট লুইস’ বিশ্ববিদ্যালয়ের করা গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কম ক্যালোরি সম্পন্ন খাবার গ্রহণ করেন এবং দিনে তিনটি করে ডিম খান নাস্তায়, তাদের দেহে চর্বি পোড়ানোর হার ‘বেগেলস’ বা ডোনাট-ধরনের খাবার দিয়ে নাস্তা করেছেন এমন ব্যক্তির তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি।
ডিম বহুমুখী খাদ্য
ডিম এমন একটি খাবার যার বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে। ফলে ডিম খেতে একঘেয়েমিতা আসে না।
মুডির মতে, “ডিম খাদ্যাভাসে বিভিন্ন পদ্ধতিতে যুক্ত করা যায়। এগুলো সবজির সাথে স্ক্রাম্বল হিসেবে, অ্যাভাকাডো টোস্টের ওপর ডিম ভাজা অথবা সালাদে সিদ্ধ করে ডিম যোগ করা যায়। খাবারে ডিমের এমন বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে দেহে দ্রুত চর্বি হ্রাস পায় এবং ওজন কমানো সহজ হয়।”
রান্না করা সহজ
ডিম রান্না করার সহজ ও সময় সাশ্রয়ী। রান্না করতে পারেন না বা খুব একটা দক্ষ নয় তারাও খুব সহজেই ডিমের তৈরি খাবার বানাতে পারেন।
সিরিয়ালের সাথে ডিম যোগ করা বা ডিমের স্যান্ডউইচ বানানো খুবই সহজ। এছাড়াও ডিম সেদ্ধ করে খাদ্য তালিকায় যোগ করা খুব ভালো উপায় বলে জানান, মুডি।
ডিম পুষ্টি উপাদানে ভরপুর
ডিমে ভিটামিন, খনিজসহ নানা রকমের অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা দেহের জন্য উপকারী।
একটি মাঝারি মাপের ডিমে ৬৬ ক্যালোরি থাকে এবং কোলিন, ভিটামিন ডি, ফোলেইট, ভিটামিন বি, আয়োডিন এবং উচ্চ মানের প্রোটিন সরবরাহ করে সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
মুডি বলেন, “ডিম কম ক্যালরি সমৃদ্ধ এবং হাতের কাছে পাওয়া যায় বলেই ওজন কমানোর খাদ্য পরিকল্পনায় খুব সহজেই ব্যবহার করা যায়।”
ক্যালোরির ঘাটতি সৃষ্টি করা ছাড়া ওজন কমানো সম্ভব নয়। তাই কম ক্যালরি বহুল খাবার যেমন- ডিম এক্ষেত্রে সহায়ক। এতে প্রোটিনের মাত্রা বেশি হওয়ায় তা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং বাড়তি ক্যালোরি ঝরিয়ে ফেলতে সহায়তা করে- জানান এই পুষ্টিবিদ।
উন্নত মানের প্রোটিনের উৎস
ওজন কমাতে চাইলে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন। ডিমে উন্নত মানের প্রোটিন রয়েছে যা দেহে শক্তি যোগায় এবং পেশিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। একই সাথে ওজন কমানোর যাত্রাকেও সহজ করে।
ব্যাখ্যা করে মুডি বলেন, “কিছু খাবারে প্রোটিন আছে মানেই এই নয় যে তার সকল অ্যামিনো এসিড শোষণ করতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী, ডিম সহজপাচ্য প্রোটিনের উৎস। উন্নত মানের প্রোটিন দেহ ও পেশি গঠনে সাহায্য করে। আর ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে।
ডিম যে পদ্ধতিতেই খাওয়া হোক না কেনো, দেহে প্রোটিন সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করে থাকে।
আরও পড়ুন