বিকল্প চিনি ব্যবহারে উল্টো ডায়াবেটিস-সহ অন্যান্য রোগ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
Published : 06 Oct 2024, 05:46 PM
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন নির্দেশনা অনুসারে, ওজন কমাতে বিকল্প চিনি বা কৃত্রিম মিষ্টি গ্রহণ করতে মানা করা হয়েছে।
বেশ কয়েকটি গবেষণার গড় ফলাফলের ভিত্তিতে জানানো হয়, ওজন কমাতে চিনি-বিহীন মিষ্টি দীর্ঘমেয়াদে তেমন কোনো প্রভাব রাখে না।
এই বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা’ বিভাগের পরিচালক ফ্রান্সিসকো ব্রাঙ্কা সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “আমরা দেখেছি স্বল্প মেয়াদে কিছুটা কাজ করে। তবে দীর্ঘমেয়াদে চিনি-হীন বিকল্প চিনি ওজন কমাতে কোনো ভূমিকা রাখে না।”
যাদের ইতোমধ্যেই ডায়াবেটিস আছে তারা বাদে এই নির্দেশিকা সবার জন্যই প্রযোজ্য। কারণ গবেষণায় ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের রাখা হয়নি- জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এছাড়া বিকল্প চিনি দীর্ঘদিন গ্রহণ করার ফলে টাইপ টু ডায়াবেটিসসহ হৃদ-সংক্রান্ত নানান রোগ হওয়ার স্বল্প ঝুঁকি তৈরি হয়।
ব্রাঙ্কা বলেন, “যদিও নির্দশনাটা নিরাপদ খাদ্র গ্রহণ সংক্রান্ত। তবে এখানে প্রধান বিষয় হল- ওজন কমাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে অপ্রত্যাশিত হলেও বৈজ্ঞানিকভাবে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এতে শরীরের ওপর আশাপ্রদ কোনো ইতিবাচ প্রভাব দেখা যায়নি।”
মোট ২৮৩টি বিক্ষিপ্ত এবং নিয়ন্ত্রিত পন্থায় করা পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণার ফলাফল এক্ষেত্রে পর্যালোচনা করা হয়। তবে পর্যবেক্ষণমূলক বলে, কী করণে ঘটছে বা সরাসরি প্রভাব কী- সেটা উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি।
ফলাফলে দেখা গেছে, চিনি গ্রহণের তুলনায় বিকল্প চিনি গ্রহণের ফলে ওজন হ্রাস ও ক্যালরি গ্রহণ কমানোর ক্ষেত্রে স্বল্প প্রভাব পড়ে। আর ডায়াবেটিস অর্থাৎ গ্লুকোজ এবং ইন্সুলিনে পরিবর্তন ঘটায় না।
কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক মিষ্টি
বাজারে সাধারণত দুই ধরনের মিষ্টি বর্ধক পণ্য পাওয়া যায়। একটি ‘সিন্থেটিক সুইটনার্স’ অন্যটি প্রাকৃতিক উৎস থেকে তৈরি কৃত্রিম চিনি।
সবগুলো হয়ত বা হয়ত রাসানিকভাবে রূপান্তরিত নয়। এমন প্রস্তুতকৃত চিনির মধ্যে রয়েছে- অ্যাকসালফেম কে, অ্যাসপার্টাম, অ্যাডভান্টাম, সাইক্লামেটস, নিওটাম, স্যাকারিন, সুক্রালোজ, স্টিভিয়া, স্টিভিয়া ডেরিভিটস এবং মঙ্কফ্রুটস।
এরমধ্যে স্টিভিয়া এবং মঙ্কফ্রুটস বাজারে নতুন সংযোজন। এসব নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা এখনও হয়নি।
তবে ব্রাঙ্কা বলেন, “এই মিষ্টিগুলো প্রায় একই রকম প্রভাব ফেলবে দেহে।”
চিনি ও চিনির বিকল্প এড়ানোর উপায়
এখন যেমন অনেকেই লবণের ব্যবহার কমাতে শিখে গেছেন। তেমনি ইচ্ছে করলেই চিনি গ্রহণের পরিমাণ কমানো বা বাদ দেওয়া যায়।
ব্রাঙ্কা বলেন, “এজন্য ছোটবেলা থেকেই প্রশিক্ষিত করতে হবে। যেজন্য বড় হতে যাওয়া শিশুদের উপহার হিসেবে মিষ্টি না দিলে তাদের ছোটবেলা থেকে মিষ্টি না খাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে। পরিবর্তে মিষ্টি ফল খাওয়ানো অনেক ভালো।”
এমনকি বড় বেলাতেও চিনি যতই পছন্দ, সেটা হোক এড়ানো যায়।
জিহ্বাকে প্রশিক্ষিত করা: ধীরে ধীরে চিনিসহ বিকল্প চিনির গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে পাশাপাশি প্রোটিন ও আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরিমাণ খাদ্যাভ্যাসে নিয়ে আসলে, মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা দিনে দিনে কমে আসবে।
এ্ই পরামর্শ দিয়ে মার্কিন পুষ্টিবিদ লিসা ড্রায়ার বলেন, “প্রোটিন ও আঁশ ধরনের খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে বাড়ায়। এরসাথে মিষ্টি খেলে, অল্পতেই তৃপ্তি চলে আসে। ফলে দিনে দিনে চিনি খাওয়ার আকঙ্ক্ষা কমতে থাকে।”
যেকোনো প্রকার বিকল্প চিনিধর্মী খাবার এড়ানো: যেমন- পূর্ণ শষ্য থেকে তৈরি খাবার ও টক দইতে চিনি নেই্। আবার চিনিযুক্ত পানীয়, এনার্জি ড্রিংকস, ডায়েট সোডা খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
চিনি ছাড়া চা কফি পান: দোকানে কফি পান করার ক্ষেত্রে সাবধান হতে বলেন, ড্রায়ার। সেখানে চিনি না দিয়ে দুধসহ কফি বা চা পানের পরামর্শ দেন তিনি।
মিষ্টান্ন হিসেবে ফল উপভোগ করা: যে কোনো খাবারের শেষে অনেকেরই একটু মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করে। এক্ষেত্রে ফল খাওয়া বা ফলের তৈরি মিষ্টান্ন খাওয়া যেতে পারে।
এড়াতে হবে কেক, আইস ক্রিম, পেস্ট্রি, বিস্কুট ইত্যাদি।
গোপন চিনি থেকে সাবধান: অনেক খাবারেই চিনি মেশানো থাকে। লেবেল না পড়লে সেক্ষেত্রে বোঝায় যায় না।
যেমন- পাউরুটি, সালাদ ড্রেসিং, যে কোনো ধরনের সস।
এসব খাদ্যপণ্য কেনার ব্যাপারে সাবধান হতে হবে- একই প্রতিবেদনে পরামর্শ দেন ‘টেক্সাস’স হসপিটাল’য়ের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘অ্যাকাডেমি অফ নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়াটেটিকস’য়ের জাতীয় মুখপাত্র ক্রিস্টি কিং।
মোড়কের লেবেল খেয়াল করা: যে কোনো মোড়কজাত খাবার ও বোতলজাত পানীয় লেবেলে চিনি বা শর্করার পরিমাণ লেখা থাকে।
ড্রায়ার বলেন, “মোড়কে যেভাবে চিনির নামগুলো উল্লেখ থাকে সেগুলো হল- আগেইভ, ব্রাউন সুগার, কর্ন সুইটনার, কর্ন সিরাপ, ডেক্সটরোজ, এভাপোরেটেড ক্যান জুস, ফ্রুক্টোজ, ফ্রুট জস কনসানট্রেটেড, ফ্রুট নেকটার, গ্লুকোজ, হাই ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ, মধু বা হানি, ইনভার্ট সুগার, ল্যাক্টোজ, মল্ট সিরাপ, মাল্টোস, মোলাসেস, ম্যাপল সিরাপ, র সুগার, সুক্রোজ, ট্রিহালোস এবং টার্বিনাডো সুগার”
উপকরণের তালিকায় এগুলো যত বেশি থাকবে সেই পণ্যে চিনি থাকার পরিমাণও ততই বাড়বে।
আরও পড়ুন