শুধু খাবার নয়, কখন কীভাবে খাওয়া হচ্ছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।
Published : 26 Feb 2024, 02:55 PM
কোন ধরনের খাবার খাচ্ছেন আর কী খাবার এড়াচ্ছেন, সেসবের ওপর নানান রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি নির্ভর করে।
হৃদরোগ, ক্যান্সার বা অকাল মৃত্যুর মতো বিষয়গুলো অনেক ক্ষেত্রেই খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। আর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সাধারণত কী খাবেন আর না খাবেন- সে বিষয় পরামর্শ দেন।
“তবে খাবার খাওয়ার সময় আর কীভাবে খাচ্ছেন- এই বিষয়গুলো সুস্থ থাকার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে”- সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এভাবেই মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি’র সহযোগী অধ্যাপক ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. লিয়ানা ওয়েন।
২০২২ সালে পিএলওএস মেডিসিন সাময়িকীতে প্রকাশিত নরওয়ে’র ‘ইউনিভার্সিটি অফ বার্গেন’য়ের করা গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়েন জানান, দেখা গেছে খাদ্যাভ্যাসে সবজি, ফল, বাদাম ও পূর্ণ শষ্য বেশি রাখতে পারলে মানুষ ১৩ বছর পর্যন্ত বেশি বাঁচতে পারে।
আবার ২০২৩ সালে নেচার ডটকম’য়ে প্রকাশিত নরওয়ে’র ‘হেওকেলান্ড ইউনিভার্সিটি হসপিটাল’ পরিচালিত গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভর করে ১০ বছর পর্যন্ত অতিরিক্ত আয়ু বাড়ানো যেতে পারে।
ওয়েন বলেন, “সেই সঙ্গে ক্যান্সার, হৃদ, ফুসফুস ও স্নায়ুর রোগের ঝুঁকিও কমানো সম্ভব খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে।”
এই ক্ষেত্রে যত কম প্রক্রিয়াজাত করা খাবার খাওয়া যাবে ততই মঙ্গল হবে বলে জানান তিনি।
তার কথায়, “যেমন পত্রল সবুজ সবজি, টাটকা ফল, পূর্ণ শষ্য খাওয়া উপকারী। কোনো কোনো পুষ্টি বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন ধরনের রঙিন সবজি খাওয়ার প্রতিও জোর দেন।”
এছাড়া বীজ, শুঁটি ও ডাল ধর্মী খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়তে হবে। সেই সাথে নানান ধরনের বাদাম রাখতে হবে খাদ্য তালিকায়।
আর বেছে নিতে হবে চর্বিহীন মাংস। যা কিনা প্রোটিনের ভালো উৎস। মাছ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। যেখান থেকে মিলবে হৃদস্বাস্থ্য সুস্থ রাখার রসদ ওয়েমা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস।
নানান ধরনের গবেষণায় সবসময়ই প্রমাণ পাওয়া গেছে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত মাংস স্বাস্থ্যের ওপর বাজে প্রভাব ফেলে।
ওয়েন পরামর্শ দেন, “আর পান করার ক্ষেত্রে অবশ্যিই চিনি-ধর্মী পানীয় এড়াতে হবে। যেমন- কোমল সোডা পানীয় এবং এনার্জি ড্রিংক্স।”
তবে এভাবে খাদ্যাভ্যাস গড়ার পাশাপাশি খাবারের পরিমাণ ও কীভাবে কখন খাওয়া হচ্ছে সেটাও জরুরি।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সকালের ভালো মতো নাস্তা করে সারাদিন অল্প খাবার খাওয়া উপকারী- জানান এই অধ্যাপক।
হার্ভার্ড হেল্থ পাবলিশিং’য়ে প্রকাশতি তথ্যানুসারে, সারাদিনে খাবার খাওয়ার সংখ্যা কামনো উপকারী। আসলে অস্বাস্থ্যাকর নাস্তার চাইতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া বেশি ভালো।
খাদ্যাভ্যাস একেক জনের একেক রকম। কেউ কেউ বেশি খিদা সহ্য করতে পারেন না। তাদের উচিত হবে অস্বাস্থ্যর নাস্তার চাইতে কম কম করে অল্প সময়ের ব্যবধানে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। যেমন- এক মুঠ বাদাম বা দুটি কলা। এক্ষেত্রে রাতের খাবার কম খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
ওয়েন বলেন, “আমি শুধু একটা পরামর্শই দিব, তাহল ঠিক ঘুমাতে যাওয়ার আগে কোনো কিছু না খাওয়া। রাতে বিছানায় যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে খাবার খাওয়া শেষ করতে হবে।”
কীভাবে খাওয়া হচ্ছে সেটাও কি গুরুত্বপূর্ণ?
ওয়েন বলেন, “কী খাওয়া হচ্ছে সেটাই নয়, কীভাবে খাওয়া হচ্ছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। আর সেজন্য পর্যবেক্ষণের দরকারও আছে।”
“খেয়াল করে দেখন, যখন খিদা পায় তখন কী ঝটপট খাওয়া যায় এমন খাবার বেছে নেন? তাহলে হয়ত আপনি বেশিরভাগ সময় ফাস্ট ফুড বেছে নিচ্ছেন। যা কিনা অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত করা থাকে। এসব খাবার দ্রুত খাওয়া হয়, যে কারণে পরিতৃপ্তির সংকেত মস্তিষ্কে দেরিতে পৌঁছায়। ফলে খাওয়া হয় বেশি”- বলেন তিনি।
পাশাপাশি মানসিক চাপে থাকলে কি বেশি খাওয়া হয়? কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত থাকলে কি কোনো কিছু চিবাতে ইচ্ছে হয়? এসব বিষয় নজরে এনে দরকার হলে মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
আরও পড়ুন
বয়সের সাথে পেটের মেদ কমাতে কার্যকর খাদ্যাভ্যাস