Published : 05 Jun 2024, 04:45 PM
কোনো একটা বিষয় নিয়ে সারাক্ষণ খোঁচাচ্ছে। সেটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তি মিলছে না।
এরকম উৎকণ্ঠা বা দুশ্চিন্তায় সবাইকেই ভুগতে হয়। যা কাজে বা স্বাভাবিক জীবনযাপনে ব্যাঘাত ঘটায়।
তবে এই ধরনের ‘শর্ট অ্যাংক্সাইটি’ বা স্বল্প সময়ের দুশ্চিন্তাকে রোগ হিসেবে দেখা হয় না। বিষয়টা সমস্যা হয় দাঁড়ায় তখনেই যখন ‘প্যানিক অ্যাটাক’ বা ভয় কাজ করে।
এই তথ্য জানিয়ে সিএনএন ডটকম আয়োজিত এক পডকাস্টে মার্কিন স্নায়ুবিশেষজ্ঞ ডা. ওয়েন্ডি সুজুকি বলেন, “উৎকণ্ঠার সাধারণ ব্যাখ্যা হল- কোনো অনিশ্চয়তার পরিস্থিতি থেকে ভয় বা দুশ্চিন্তা কাজ করা।”
“এই ধরনের অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। সাধারণ অনুভূতি যেটা কাজ করে সেটা হল- আমি এর থেকে মুক্তি চাই”- মন্তব্য করেন নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘নিউরাল সায়েন্স অ্যান্ড সাইকোলজির’ এই অধ্যাপক।
তবে আসল বিষয় হল এটারও দরকার আছে।
ডা. সুজুকি বলেন, “উৎকণ্ঠা এক ধরনের বিপৎসংকেত। কোনটা রাখবো আর কোনটা রাখবো সেটা বুঝতে সাহায্য করে এই অনুভূতি। এটা না থাকলে আমরা কোনো জিনিসের গুরুত্বই বুঝতাম না।”
“এই অনুভূতিটা এক ধরনের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে আমাদের মাঝে। আধুনিক যুগে সেটা বুঝতে না পারলেও ২৫ লাখ বছর আগের কথা চিন্তা করুন। সেই সময় আমাদের কোনো পূর্বপুরুষের সন্তান বনজঙ্গলে ঘুড়ে বেড়াছে খাবার সংগ্রহের জন্য। সেখানে বন্য জন্তুর আক্রমণের ভয় বা কোনো গাছের ফাঁটলে আটকে পড়ার দুশ্চিন্তায় ভুগছে তার বাবা-মা। যে কারণে তারা প্রস্তুত কোনো্ বিপদ সামলাতে। এই অনুভূতি না থাকলে হয়ত নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে তারা ভাবতই না। ফলে আজকের এই দুনিয়াও দেখতে হত না আমাদের।”
উৎকণ্ঠা আমাদের ‘মর কিংবা বাঁচো পরিস্থিতি তৈরি করে” মন্তব্য করেন ডা. সুজুকি।
এই অনুভূতি বর্তমানে কোনো খবর দেখলে বা শুনলে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘাঁটঘাঁটি করলে বা রাস্তায় যানজটে আটকালে কাজ করে। তখন হৃদপিণ্ডের গতি বাড়ে, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা কমে। আর এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।
তাই উৎকণ্ঠা’কে ভালোর দিকে নিয়ে যেতে হলে জানতে হবে কীভাবে এর মাত্রা কমানো যায়।
ডা. সুজুকি এক্ষেত্রে পাঁচটি পন্থা উল্লেখ করেন।
গভীর শ্বাস নেওয়া
প্রাচীন ধ্যান প্রক্রিয়ার মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম অন্যতম। এই পদ্ধতি দ্রুত কাজ করে।
এই ক্ষেত্রে প্রথম চার গুনতে গুনতে লম্বা দম নিতে হবে। তারপর চার গুনতে গুনতে দম বন্ধ রেখে আবার চার গুনতে গুনতে শ্বাস ছাড়তে হবে। এভাবে বারবার করে যেতে হবে যতক্ষণ না মন শান্ত হয়।
নড়াচড়া করা
এক্ষেত্রে অল্প হাঁটাহাঁটি করা উপকারী।
ডা. সুজুকি বলেন, “মাত্র ১০ মিনিট হাঁটলে উৎকণ্ঠার মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমে।”
হাঁটার ফলে উৎকণ্ঠা অনুভূতি কমে না বটে। তবে নড়াচড়ার ফলে সেরোটনিন, নোরাড্রেনালিন এবং এন্ডোর্ফিন্স হরমোনের নিঃসরণ হয়। এগুলো মস্তিষ্কে আনন্দ লাভের অনুভূতি তৈরি করে।
উৎকণ্ঠাকে অন্যভাবে দেখা
ব্যক্তিগত একঘেয়ে জীবনে উত্তেজনা ফিরিয়ে আনতে উৎকণ্ঠাকে কাজে লাগানো যায়। যেমন- কোনো জায়গায় ভ্রমণ করতে গেল যে নতুন জায়গা ও মানুষের সাথে পরিচয় হওয়ার উত্তেজনা ভেতরে কাজ করবে সেটা কাজে লাগিয়ে নিয়মিত জীবনে ফিরে একঘেয়ে অবস্থা কাটানো সম্ভব।
কাজের পরিমাণ বাড়াতে
“দুশ্চিন্তা পরিবর্তন করুণ কার্যকারিতায়”- বলেন ডা. সুজুকি
উৎকণ্ঠাকে কাজে লাগিয়ে কার্যফল বাড়ানোর চেষ্টা করা যায়। ‘যদি করতে পারতাম’ এই অস্থিরতার পরিবর্তে ‘এই কাজ আমি করবই’ এভাবে তালিকা করে কাজগুলো শেষ করে ফেলা যায়।
ডা. সুজুকি বলেন, “রাতে ঘুমাতে গিয়ে হঠাৎ মনে পড়লো- আরে এসব কাজ তো করা হয়নি বা করতে পারতাম। এই চিন্তায় হয়ত অনেকের ঘুম হারাম হয়ে যাবে। তবে আমি নিজেকে বলি- ঠিকাছে কাজগুলো কাল করে ফেরবো। পরদিন কিন্তু আমি আর কাজগুলো ফেলে রাখি না। ওই যে রাতের ‘টেনশন’ কমাতে গিয়ে ফেলে রাখা কাজগুলো শেষ করি।”
এভাবে উৎকণ্ঠাকে কাজে লাগানো যায়।
সহানুভুতির চর্চা
যারা দুশ্চিন্তায় ভোগেন তাদের প্রতিও সহমর্মী হওয়ার আহ্বান জানান- ডা. সুজুকি।
“যারা আপনার মতো দুশ্চিন্তায় ভোগেন তাদের প্রতি দয়ালু আচরণ করুন। হয়ত তার উৎকণ্ঠায় ভোগার কারণ অন্য। তবে কাউকে সহনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে নিজের মধ্যে ডোপামিন নিঃসরণ হয় যা মেজাজের উন্নতি ঘটায়।”
আরও পড়ুন
ভবিষ্যতের দুঃশ্চিন্তা যেভাবে প্রত্যাশা পূরণের হাতিয়ার হতে পারে