ভবিষ্যতের দুঃশ্চিন্তা যেভাবে প্রত্যাশা পূরণের হাতিয়ার হতে পারে

দুর্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করা যায়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2021, 10:31 AM
Updated : 16 May 2021, 10:31 AM

যেদিন সকালে উঠে খুব জরুরি একটা কাজে যেতে হবে বলে আগেরদিন রাতে জলদি ঘুমাতে যান সেদিনই কোনোমতেই ঘুম আসে না।

অধীর আগ্রহে বহুদিন ধরে যে কাজটির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন শেষ মুহূর্তে কীভাবে যেন কিছু না কিছু বিগড়ে যায় নিজের হাতেই।

যে বিষয় নিয়ে মানুষের প্রত্যাশা থাকে বেশি, সেটা আবার তার মাঝে দুশ্চিন্তাও তৈরি করে।

কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আগে টিকিট পাবো তো? রওনা দেওয়ার পর সবকিছু ব্যাগে নিয়েছি তো? জ্যামে পড়লে সময় মতো পৌঁছাতে পারবো তো?

এমন দুশ্চিন্তাগুলো আতঙ্কিত করে। আবার এই আতঙ্কগুলো ভবিষ্যত রোমাঞ্চকর অনুভূতিগুলোর সঙ্গে জড়িত।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ম্যাডিসন পার্ক সাইকোলজিকাল সার্ভিসেস’ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ‘ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট’ ড. ইয়াসমিন সাদ, “কিছু মানুষের মস্তিষ্ক দুশ্চিন্তা করবেই করবে, আর সেটা যে সবসময় খারাপ তা নয়। এটা একধরনের ‘ডিফেন্সিভ পেসিমিজম’ মানুষকে বিপদ ও হতাশা থেকে রক্ষা করে।

ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “মৃদুমাত্রায় এটি ভালো, সঠিক ও স্বাস্থ্যকর সিদ্ধান্ত নিয়ে সহায়তা করে। তবে দুশ্চিন্তা যদি সকল রোমাঞ্চকে গ্রাস করে ফেলে, তখন তা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।” 

দুশ্চিন্তাকে রোমাঞ্চতে পরিণত করার উপায় জানিয়েছেন এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।

দুশ্চিন্তার পেছনের অতৃপ্তি খুঁজে বের করা

অনেকসময় আমাদের দুশ্চিন্তার কারণটা হয়, একটা নির্দিষ্ট ঘটনা থেকে কিছু নির্দিষ্ট প্রত্যাশা তৈরির মাধ্যমে।

ধরা যাক প্রিয়জনের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া বিষয়টাই। আপনি অনেকদিন ধরে মানুষটার সঙ্গে ওই জায়গাটায় বেড়াতে যাওয়া পরিকল্পনা করছেন, মনে মনে অনেক স্বপ্ন সাজিয়ে বসে আছেন। তাই বেড়াতে যাওয়াটা নির্ভেজালভাবে সম্পন্ন হওয়া আর আপনার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন হবে কি-না সেই দুশ্চিন্তায় আপনি সময়টা উপভোগ করতেই ভুলে যান।

ড. সাদ বলেন, “এক্ষেত্রে প্রথমেই আপনার চাহিদাগুলো স্থির করে নিতে হবে। এবার সেগুলো অর্জন করতে কী প্রয়োজন সেগুলোর ব্যবস্থা নিতে শুরু করুন। এতে দুশ্চিন্তাগুলো ক্রমেই রোমাঞ্চতে রূপান্তরিত হবে। 

হতাশার সঙ্গে বাঁচতে শিখতে হবে

হতাশাবাদি মানুষ হয়ত নিজের হতাশাবাদ নিয়েও হতাশ। তবে ওই হতাশাও যে ক্ষেত্রবিশেষ উপকারী হতে পারে সেটা মেনে নিতে হবে।

আরেক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং ‘নার্ভাস এনার্জি: হার্নেস দ্য পাওয়ার অফ ইওর অ্যাংজাইটি’র রচয়িতা ক্লোয়ি কার্মাইকেল বলেন, “নিজের হতাশা নিয়ে অতিমাত্রায় নেতিবাচক হওয়া উচিত নয়। হতাশার উল্টো চিত্র চিন্তা করতে হবে। যেমন: সূর্য ওঠেনি তাতে কি, রংধনু তো দেখা দিয়েছে।”

“এভাবে সবসময় ভালো কিছু প্রত্যাশা করার চেষ্টা করতে হবে। ফলে জীবনের কঠিন সংগ্রামের জন্য আপনি প্রস্তুত থাকবেন। এদিক থেকে চিন্তা করলে জীবনে কিছু হতাশাও উপকারী।”

নিজেকে অভিনন্দন জানান

ড. কারমাইকেল বলেন, “জীবন ফুলশয্যা নয়, অতৃপ্তি, অসন্তুষ্টি, না পাওয়ার কষ্ট থাকবেই। জীবন সম্পর্কে এই সত্যটা মেনে নিয়ে সদা প্রস্তুত থাকার জন্য নিজেকে প্রসংশা করাই যায়। কঠিন বাস্তবতা আপনার মন খারাপ করে তোলাটাই স্বাভাবিক। হতাশাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে পরেরবার নিজেকে আরও প্রস্তুত করে তুলতে পারবেন। আর সেই প্রাপ্তিটাও তুচ্ছ নয়, নিজের ভুল থেকে সবাই শিক্ষা নিতে পারে না।”

দুশ্চিন্তাকে কাজে লাগান

ড. সাদ ও কার্মাইকেল দুজনেই দুশ্চিন্তাগুলো কাজে লাগানো পরামর্শ দিচ্ছেন।

যে অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলো আপনার প্রত্যাশিত ঘটনা ভণ্ডুল করে দিতে পারে, সেগুলো নিয়ে শুধু দুশ্চিন্তা না করে অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলো যাতে ঘটতেই না পারে সেই ব্যবস্থা নিন।

বেড়াতে যাওয়া অনেক আগে থেকে ‍টুকিটুকি জিনিস গোছাতে শুরু করতে পারেন। টাকা পয়সার হিসেবটা নির্ভুল রাখুন, প্রয়োজনে সঙ্গে বাড়তি কিছু অর্থ রাখুন।

যাতায়াত, বাসস্থান ইত্যাদির আগে থেকেই পাকা ব্যবস্থা রাখুন। এভাবেই দুশ্চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা থেকে সম্ভাব্য দূর্ঘটনাগুলোর সম্ভাবনা দূর করা সম্ভব।

ছবির প্রতীকী মডেল: মাহা। ছবি: দীপ্ত।

আরও পড়ুন