ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণীর একটি রান্নার খাতা ছিল। পূর্ণিমা ঠাকুরকে উপহারে এই খাতা দেন তিনি।
ওদিকে পূর্ণিমা ঠাকুরের মা নলিনী দেবীর রান্নার হাত ভালো ছিল। ঠাকুর বাড়ির এই মেয়েদের রান্না নিয়ে পরে মলাটবদ্ধ বই প্রকাশ করেন পূর্ণিমা ঠাকুর।
বাঙালির মননে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর বাঙালি রসনা মানে নানান রকম ভর্তা। তাই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মজয়ন্তীতে ঠাকুর বাড়ির দুটো ভর্তা, টেবিলে না থাকলেই নয়।
এই গরমে কাঁচা বাজারে কিংবা পাড়ার সবজি ভ্যানগাড়িতে বিটরুট ও পালংশাক মিলছে না অবশ্য। শেষ পর্যন্ত এলাকার সুপার স্টোরে ছুটতে হলো বিটরুট ও পালংশাক জোগাড় করতে।
ঠাকুর বাড়ির বিট বাটা
উপকরণ
ছোট বিটরুট ২টি। কাঁচামরিচ ৩টি। সরিষা দানা দেড় চা-চামচ। পোস্ত দানা ১ চা-চামচ। রসুন কোঁয়া ২টি। সরিষার তেল প্রয়োজন মতো। লবণ প্রয়োজন মতো। চিনি আধা চা-চামচ। কালোজিরা ১ চা-চামচ।
ভর্তা বানানোর পদ্ধতি
বিটরুটের খোসা ছাড়িয়ে টুকরো করে পানি দিয়ে সিদ্ধ করে নিতে হবে। সিদ্ধ বিটরুট পানি ঝরিয়ে পাটায় মিহি করে বেটে নিতে হবে।
বিটরুট বাটা এক পাশে সরিয়ে রেখে রসুন, মরিচ, পোস্ত দানা, সরিষা দানা এবং একটু লবণ এক সঙ্গে মিশিয়ে বেটে নিতে হবে। বাটায় কাঁচা রসুন দিতে হবে। অথবা কেউ চাইলে রসুন কড়াইতে কয়েক ফোঁটা গরম সরিষার তেলে ছ্যাঁকা দিয়ে নিতে পারেন।
বাটা হলে আলাদা রাখা বিটরুট বাটাও মিশিয়ে দিতে হবে ভালো করে।
এবার কড়াইয়ে সরিষার তেল দিতে হবে। গরম তেলে কালোজিরা দিতে হবে। বিটরুট বাটা তেলে ছেড়ে নাড়তে হবে। বিটরুটের স্বাদের কারণে এই ভর্তায় খুব বেশি লবণ দেওয়া লাগে না। তাই চেখে দেখে যার যার স্বাদ অনুসারে লবণ যোগ করা যায়।
চিনি দিতে হবে। যারা চিনি এড়িয়ে যেতে চান, তারা দেবেন না।
কড়াইতে বিটরুট বাটা নাড়তে নাড়তে থকথকে হয়ে আসবে। কড়াই থেকে ভর্তা তুলে একটি বাটিতে নিতে হবে। ভর্তায় চাইলে আরেকটু সরিষার তেল মেখে নেওয়া যায়। ভর্তার মাঝে ছোট গর্ত করে একটু সরিষার তেল ঢেলে দিয়ে বাটিতে করে পরিবেশন করুন ঠাকুর বাড়ির বিটরুট ভর্তা।
নারকেলি পালং ভর্তা
উপকরণ
কোরানো নারিকেল ৮ টেবিল-চামচ। পালংশাক ২ আঁটি। সরিষা দানা দুই চা-চামচ। লবণ স্বাদ মতো। সরিষার তেল প্রয়োজন মতো। কাঁচা মরিচ ৩টি।
ভর্তা বানানোর পদ্ধতি
পালংশাক ধুয়ে পানিতে সিদ্ধ করে নিতে হবে। এমনিতে পালংশাক ভাঁপিয়ে নিলেই হয়। যেহেতু এটি হাতে চটকে ভর্তা হবে তাই মসৃণ করার জন্য শাকপাতা ভাঁপিয়ে নেওয়ার থেকে খানিক বেশি সিদ্ধ করে নিতে হবে।
সিদ্ধ পালংশাক থেকে পানি ভালো করে ঝরিয়ে নিতে হবে। হাত দিয়ে চেপে চেপে বাড়তি পানি ফেলে দিতে হবে। তবে পালং শাকের এই পানি সুপে বা কোনো সবজির তরকারিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সরিষা দানা বেটে রাখতে হবে। কাঁচা মরিচ কুচি করতে হবে।
পাটায় বা ব্লেন্ডারে বাটার দরকার নেই, বরং সিদ্ধ পালংশাক হাত দিয়ে চটকে নিতে হবে। এরপর সরিষা বাটা মেশাতে হবে। একটু লবণ মাখাতে হবে।
এবার নারিকেল কোরানো মেশাতে হবে। কাঁচা মরিচ কুচি দিতে হবে। একটু সরিষার তেল দিয়ে পুরো ভর্তা মেখে নিতে হবে হাতে চটকে চটকে।
পূর্ণিমা ঠাকুরের বইতে বলা আছে, এই ভর্তায় নারিকেল কোরানো বেশি এবং সরিষার তেল অল্প দিতে। তবে এখন যে যার স্বাদমতো কমবেশি করে এই উপকরণগুলো দিতে পারেন।
ঠাকুর বাড়িতে এই ভর্তার নাম ছিল পালংশাক ভাতে; বোঝাই যাচ্ছে ভাতের সঙ্গে এই ভর্তা অমৃত হবে।
দুটো ভর্তাতেই সরিষা বাটা ও তেল দেওয়া হয়েছে। তাই দারুণ একটা ঝাঁঝ থাকবে।
ঠিক এই কারণে শীতে এই দুই ভর্তা দিয়ে সাদা ভাত ভরপেট খাওয়া যাবে। তবে পালংশাক ও বিটরুট জোগাড় করতে পারলে গরমেও বেশ লাগবে ঠাকুর বাড়ির এই দুই ভর্তা।
আরও রেসিপি