সাধারণত তিন মাস চলার মতো আর্থিক সঞ্চয় রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
Published : 06 Mar 2023, 07:11 PM
যে কোনো সময় মানুষ বিপদে পড়তে পারে। সেজন্য প্রস্তুতি থাকা দরকার।
পরিবারের যে কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন বা যে কোনো সময় চাকরি চলে যেতে পারে। আবার বাসার কোনো দরকারী জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
এসব অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনার সময় আমাদের জরুরি ভিত্তিতে টাকার দরকার হয়।
উপরে উল্লেখিত কারণ ছাড়াও নিত্য জীবনে আরও অনেক জরুরি কাজে টাকার দরকার হতে পারে। তবে কীভাবে বুঝবেন এই অপ্রত্যাশিত ঘটনা থেকে উত্তরণের জন্য হাতে কত টাকা জমা থাকা ভালো?
এই বিষয়ে ‘স্মার্ট মানি হ্যাক্সঃ সঞ্চয় ও বিনিয়োগের সেরা প্ল্যান’ বইয়ের লেখক ও আয়কর পরামর্শক জসীম উদ্দিন রাসেল জানিয়েছেন বিস্তারিত।
আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ক পরামর্শকরা সাধারণত পরামর্শ দেন যে, তিন মাস চলতে যে খরচ হবে তার সম-পরিমাণ প্রাথমিক অবস্থায় জমানো উচিত।
যেমন- এখন যদি আপনার প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয় তাহলে আপনি (৫০,০০০X৩) ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমাবেন।
যখন এই টাকা জমা হয়ে যাবে তখন পরবর্তী লক্ষ্য পূরণ করার জন্য নতুন করে সঞ্চয় শুরু করতে হবে। তবে কেউ কেউ তিন মাসের পরিবর্তে ছয় মাসের খরচের টাকা জমানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
কেনো তিন মাসের খরচের টাকা জমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়?
এর কারণ হল, যে কোনো সময় চাকরি চলে যেতে পারে বা আপনি এখন যে চাকরি করছেন তা ভালো লাগছে না। চাকরিটা ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন।
চাকরি ছেড়ে নতুন আরেকটি চাকরি এই তিন মাসের মধ্যে পাওয়া সম্ভব। এজন্য এই সময়ে যাতে সংসার খরচ চালাতে কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য তিন মাসের কথা বলা হয়েছে।
চাকরি চলে যাওয়া ছাড়াও পরিবারের কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন, হাসপাতালে ভর্তি করাতে হতে পারে, বাসায় টিভি/ ফ্রিজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে ইত্যাদি জরুরি মুহূর্তে এই জমানো টাকা কাজে লাগবে।
যদি তিন মাস সমপরিমাণ টাকা হাতে থাকে তাহলে বাড়তি টেনশন করতে হবে না। মনে একটা সাহস থাকবে।
ইতোমধ্যেই যদি এই পরিমাণ অর্থ বা তার বেশি জমা থাকে তাহলে আপনি কত জমানোর লক্ষ্য স্থির করবেন? বা আপনি এখনও বিয়ে করেননি কেবল পড়ালেখা শেষ করে উপার্জন শুরু করেছেন বা আপনি এখনও পড়ালেখা করছেন, তাহলে আপনার কত জমানোর লক্ষ্য স্থির করা উচিত?
এজন্য সঞ্চয় ও বিনিয়োগের আগে উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। টাকা জমিয়ে কী করতে চাচ্ছেন? পরিকল্পনা কী? আপনি কি পড়ালেখা শেষ করার সাথে সাথেই পছন্দের ব্যবসা শুরু করতে চান বা এখন যে চাকরি করছেন তা ছেড়ে নিজেই একটা ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন নাকি অবসরকালীন চলার জন্য টাকা জমাতে চাচ্ছেন?
এইভাবে আগে লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। তারপর দেখুন এজন্য কত দরকার হবে। যখন বুঝে যাবেন তখন সেই পরিমাণ অর্থ জমানোর লক্ষ্য নিয়ে এখন থেকেই জমানো শুরু করুন।
ধরা যাক, আপনি অবসরে যাবেন ৬৫ বছর বয়সে এবং তখন আপনি এক কোটি টাকার মালিক হতে চাচ্ছেন। এর কম/ বেশি আপনি যে কোনো পরিমাণ টাকা ঠিক করতে পারেন।
আবার এমনও হতে পারে আপনি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। হাতে পাঁচ বছর সময় আছে। পাঁচ বছর পর পাঁচ লাখ টাকার মালিক হতে চাচ্ছেন যা দিয়ে নিজের ব্যবসা শুরু করতে চান।
মোট কথা, দরকার মতো একটা অংক ঠিক করুন।
এবার, আপনি গুগলে ‘সেইভিং গোল ক্যালক্যুলেটর’ লিখে সার্চ দিন। দেখুন অনেকগুলো রেজাল্ট দেখাবে। এখান থেকে যে কোনো একটা ক্যালক্যুলেটরে আপনার টাকার পরিমাণ লিখুন, কত বছর পরে পেতে চান তা লিখুন এবং মুনাফার হার লিখুন।
এসব তথ্য দেওয়ার পর আপনাকে প্রতি মাসে কত জমাতে হবে তার ফলাফল দেখাবে। এভাবে সামর্থ্য অনুযায়ী কমিয়ে/ বাড়িয়ে ঠিক করুন আপনি কত জমাতে চান বা পারবেন।
তবে অবশ্যই সবার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার ‘ইমার্জেন্সি ফান্ড’ জমা হয়েছে। আর তারপরেই ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করুন।
আরও পড়ুন