ব্যাটম্যান কিংবা জোকার, নারুতো কিংবা মিকাসা— পশ্চিমের সিনেমা আর অ্যানিমেশনের ভক্ত হালের তরুণদের কাছে খুবই পরিচিত এই নামগুলো। পর্দায় দেখা নিজেদের প্রিয় কল্পরাজ্যের এই চরিত্রদের নিয়ে উৎসবের ডাকে তাই কয়েকবছর ধরে সাড়া মিলছে খুব।
Published : 28 Jun 2014, 08:20 AM
পশ্চিমা দেশগুলোতে কমিক বই আর সিনেমার কাল্পনিক চরিত্রগুলোকে নিয়ে উৎসবের ধারণা নতুন নয় একেবারেই।
ঢাকায় এধরণের উৎসবের প্রচলন শুরু হয় বছর দুই আগে। রাজধানীর কমিক গ্রুপগুলোর উদ্যোগে হয়ে আসা ‘কমিককন’, ‘কার্টুনফেস্ট’, ‘পপ কালচার এক্সপো’ নামের আয়োজনগুলোর ধারাবাহিকতাতেই এবার গুলশানের শুটিং ক্লাবে আয়োজন হল ‘ঢাকা পপ কালচার এক্সপো’-এর দ্বিতীয় আসর।
‘পপ এক্সপো ১৪’ নামেই বেশি জনপ্রিয় হওয়া দুই দিনের এই আয়োজনে দেখা মিলল কমিকভক্তদের এক জমজমাট মিলনমেলার।
উৎসবকেন্দ্রে ঢোকার মুখেই ব্র্যাক চিকেনের ফুড কোর্ট। উৎসবে আসা তরুণদের উদরপূর্তির পাশাপাশি ব্যাটম্যান, হাল্ক-দেরমতো জনপ্রিয় সুপারহিরোদের শরীরের ওপর নিজের মাথা বসিয়ে ছবি তোলার মজার এক ফটোবুথের আয়োজন করেছিল তারা। সেখানেই দেখা মিলল, কুইন এলসা, স্লিপিং বিউটি, সিন্ডারেলাদের। ডিজনির জনপ্রিয় এই চরিত্রগুলোর সাজে নিজেদেরকে সাজিয়ে হাজির হয়েছেন এই ভক্তরা। চলতি ভাষায় যাদেরকে বলা হয় ‘কসপ্লেয়ার’। হাসিমুখে নিজেদের সেলফি আর গল্পগুজবে আসরটিকে জমিয়ে তুলছিল তারা।
তাদের পাশেই পরিচিত অ্যাকশন ভঙ্গিমায় জাপানি আনিমে সিরিজ ‘নারুতো’র পাঁচ কসপ্লেয়ার। উপস্থিত দর্শকদের জন্য তারা দেখাচ্ছে সিরিজে ব্যবহৃত নানান কসরৎ। তাদেরকে পাশ কাটিয়ে উৎসবের মূল কেন্দ্র ঢুকতেই হাতের বাঁ পাশে ‘ক্যাফে হলিউড’-এর বিশাল পসরা। স্টলে ফাস্টফুড তো ছিলই, সেই সঙ্গে ছিল হলিউডি পপ কালচারের আইকনদের ছবিওয়ালা নানান ধরনের সুভিনিয়ার। খাবারের সাথে সাথে পছন্দের সুপারহিরোদের লকেট, নোটবুক আর রিস্টব্যান্ড কিনতে ভালোই সাড়া পড়ে গিয়েছিল উপস্থিত সবার মাঝে।
একইচিত্র দেখা গেছে মেলায় অংশ নেওয়া অন্য স্টলগুলোতেও। বিডিকালেক্টরস নিয়ে এসেছিল মার্ভেল আর ডিসি কমিক্সের চরিত্রগুলোর অফিশিয়াল অ্যাকশনফিগার। মেইজ সিটি, এসআরকে শোস্টপার, বিডিবক্স, রোল-আউটের স্টলগুলোতে দেদারসে বিক্রি হয়েছে কমিক্স, টি-শার্ট, মুখোশ আর পোস্টার।
তবে, এতোকিছুর ভিড়ে সবার নজর আসলে ছিল কসপ্লেয়ারদের দিকেই। রং-বেরঙের কস্টিউম আর মেইকাপের সাহায্য নিয়ে এদের সবাই কল্পরাজ্যের দুনিয়াকেই বাস্তবে তুলে এনছিলেন সবার সামনে।
ডার্ক নাইট সিরিজের ব্যাটম্যান আর জোকার, টিভিসিরিজ ‘অ্যারো’-এর সুপারহিরো অ্যারো, ম্যালিফিসেন্ট, জিআইজো, ‘অ্যাটাক অন টাইটান’ সিরজের মিকাসা ‘ডেথ নোট’ সিরিজের লাইট.এল. নিয়ার আর মিসা, ‘গেইম অফ থ্রোন্সের’ খালিসি— এদের সবাইকেই দেখা গেল কসপ্লেয়ারদের সাজে।
পপকালচারের চেনা সব সুপারহিরো, সুপারভিলেইনদের সাজে তো বটেই, অনেকে এসেছিলেন নিজের প্রিয় ভিডিওগেইম আর পছন্দের রকস্টারের সাজেও। ঝাকড়া চুল, লম্বা কালো হ্যাট আর চোখে কালোচশমা নিয়ে বিখ্যাত রকব্যান্ড ‘গানস অ্যান্ড রোজেস’-এর গিটারিস্ট স্ল্যাশের সাজে দেখা গেল একজনকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাবও যে তরুণদের ওপর অনেক বেশি সেটিও বোঝা গেল ‘মেমে গাইজ’দের আবির্ভাবে। ফেইসবুকে বহুল ব্যাবহৃত ‘মেমে ফেইস’-এর মুখোশ পরেই হাজির হয়েছিলেন কসপ্লেয়ারদের এই দল।
তবে পছন্দের চরিত্রের সাজে নিজেকে সাজানোর হ্যাপাও অনেক বলে জানালেন এক কসপ্লেয়ার। জাপানি আনিমে সিরিজ ‘ডেথ নোট’-এর চরিত্র নিয়ারের সাজে নিজেকে সাজিয়েছিলেন জিসান তানভির নামের তরুণ। এরজন্য মাথার সাদা পরচুলা আর হাতের বিশেষ নোটবুকটি কোরিয়া থেকে আমদানি করতে হয়েছে বলেই জানান তিনি।
নাদিম বলেন, “ছোটবেলা থেকেই, কমিকবুক ছিল আমাদের বেড়ে ওঠার সঙ্গী। কখনো কার্টুন, কখনো সিনেমা, কখনো বা ভিডিওগেইম- আমরা যারা শহরে বড় হয়েছি, আমাদের সময় কাটতো এসব নিয়ে। বাইরের দেশগুলোতে এ ধরনের কমিককন খুব জনপ্রিয়। বাংলাদেশে সাদি হমান, আবু ইউসুফ আর আমাদের হাত ধরেই এই উৎসবের জনপ্রিয়তা পায়। গত বছর থেকে আমি নিজে শুরু করেছি এই পপ কালচার এক্সপো। কমিকভক্তদের আগ্রহের কারণে সাড়াও পাচ্ছি প্রচুর।”
তিনি আরও বলেন, “বাস্তব জীবনে আমরা সবাই হয়তো, পড়াশোনা, জীবিকা, সংসার নিয়ে ব্যাস্ত। তবে এই ধরনের উৎসবগুলো আসলেই যেন আমরা ফিরে যাই আমাদের শৈশবে। কিছুক্ষণের জন্য হলেও আমরা মুক্তি পাই বাস্তবতা থেকে। এটাই আসলে এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য।”
দুইদিনের এই উৎসবটি আয়োজন করা হয়েছিল গুলশানের শুটিং ক্লাবে। উৎসবে আসা কসপ্লেয়ারদের নিয়ে প্রতিযোগিতারও আয়োজন করছে পপ এক্সপো। বিজয়ীদের নাম জানা যাবে কিছুদিনের মধ্যেই। ততদিন পর্যন্ত কমিক উন্মাদনায় মেতে থাকতে চাইলে ভিজিট করতে পারেন এই ফেইসবুকের ঢাকাপপএক্সপো পেইজে।
ছবি: পপএক্সপো’র ফেইসবুজ পেইজ থেকে।