আর এমটাই দাবি করছে একটি গবেষণার ফলাফল।
ওবেসিট ডটঅর্গ আয়োজিত ‘ওবেসিটি উইক ২০২১’ সম্মেলনে উপস্থাপিত গবেষণায় এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
গবেষক এবং চিকিৎকদের জন্য এই স্থূলতা সোসাইটির বার্ষিক সম্মেলন অনুসারে, একটি ‘প্রোটিন-পেইসিং ডায়েট’ এবং নিরবিচ্ছিন্ন উপবাস এক সঙ্গে মেনে চলা ‘স্ট্যান্ডার্ড হার্ট-হেলদি ডায়েট’য়ের তুলনায় বেশি চর্বি হ্রাস করে বলে জানা গেছে।
নিউ ইয়র্কের ‘স্কিডমোর কলেজ’য়ের গবেষকরা স্থূলকায় ৪০ জন প্রাপ্ত বয়স্কদের ওপর আট সপ্তাহব্যাপী ওজন কমানোর পদ্ধতি অনুসরণ করানো হয়।
অর্ধেক অংশগ্রহণকারী উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার (কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩৫ গ্রাম) দিনে চারবার গ্রহণ করেন।
খাবারে গবেষকরা ‘প্রোটিনের সাপ্লিমেন্ট’ যুক্ত করেছিল। যেমন- বার ও শেইক।
অংশগ্রহণকারীরা গবেষকদের দেওয়া রেসিপি অনুযায়ী নিজেরাই খাবার তৈরি করতেন এর মধ্যে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে ছিল মুরগি, মাছ, ডিম, গ্রিক ইয়োগার্ট, মটর ও টফু।
তারা গবেষণা চলার প্রথম চার সপ্তাহে দুএক দিন উপোস থেকে কেবল উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করেন। আর পরের সপ্তাহগুলোতে একবার করে তা অনুসরণ করেন।
অন্যান্য অংশগ্রহণকারীরা ‘ক্যালরি কাটিং হার্ট-হেলদি ডায়েট’ অনুসরণ করে দিনে গড়ে ১২০০ থেকে ১৫০০ ক্যালরি, ২০ থেকে ৩০ গ্রাম আঁশ ও সীমিত বা ৩৫ শতাংশের কম চর্বি গ্রহণ করেন।
তাদেরকে কোনো রকম স্প্লিমেন্ট দেওয়া হয়নি। তবে খাওয়ার জন্য ভিন্ন রেসিপি ও খাবার দেওয়া হয়েছিল।
গবেষণায় দেখা গেছে, দুই দলের ওজন হ্রাস পেলেও যারা প্রোটিন গ্রহণ করেছিল তাদের ওজন উল্লেখজনকভাবে হ্রাস পেয়েছিল। তাদের চর্বি কমার পরিমাণও ছিল বেশি। যা কম ক্যালরি গ্রহণকারীদের তুলনায় দেহের মোট ভরের প্রায় ছয় শতাংশ।
গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, উপোস করার পাশাপাশি প্রোটিন গ্রহণ ওজন কমাতে সহায়তা করে।
এই গবেষণার ওপর ভিত্তি করে ইনসাইডার ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, “বেশি সময় উপোস থাকলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। ‘প্রোটিন-পেইসিং গ্রুপ’ যারা প্রথম চার সপ্তাহ ধরে সপ্তাহে দুদিন উপবাস করেছিল, গবেষণার শেষে তাদের পেটের চর্বি ২৭ শতাংশ হ্রাস পায়। যা ‘হার্ট-হেলদি ডায়েট গ্রুপে’র তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ এবং একদিন উপবাস করা দলের তুলনায় ছয় শতাংশ বেশি।”
গবেষণার প্রধান গবেষক এবং স্কিডমোর কলেজের স্বাস্থ্যের অধ্যাপক পল আর্কিরো ইনসাইডার ডটকম’কে বলেন, “প্রোটিন পেইসিং’য়ে সঙ্গে উপোস করা বিপাকের উন্নতি ঘটায়।”
তিনি আরও বলেন, ‘উপোস চলাকালীন কী খাচ্ছেন সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে বরং ক্যালরির গুণগত মানের দিকে মনোযোগ দিলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।”
আগের কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত উপোস রাখা ক্যালরির ঘাটতি ঘটিয়ে ওজন কমায়। অন্য গবেষণা অনুযায়ী এটা গড়ে সীমিত ক্যালরি গ্রহণের তুলনায় বেশি ওজন কমায়।
প্রমাণ রয়েছে যে, উচ্চ-প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। কারণ প্রোটিন অন্যান্য ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট যেমন- কার্বোহাইড্রেইট এবং ফ্যাটের তুলনায় হজম হতে বেশি শক্তি ব্যয় করে।
প্রোটিন টাইমিং পেশি গঠনেও ভূমিকা রাখে
প্রোটিন গ্রহণ এবং উপবাসে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে চর্বি-মুক্ত ভরের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটে বলে প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা। চর্বি-মুক্ত ভরের মধ্যে পেশির কোষ অন্তর্ভুক্ত থাকে। যা স্বাস্থ্যকর বিপাক এবং শারীরিক শক্তি বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
পর্যাপ্ত প্রোটিন খাওয়া উপবাসের সময় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে, উপবাস ও অন্যান্য ‘ক্যালোরি-কাটিং ডায়েট’য়ে বেশি পেশি ক্ষয় করতে পারে। আর তা পূরণ করতে প্রয়োজন প্রোটিন।
ছবি: রয়টার্স।
আরও পড়ুন