খুব দ্রুত মানুষের অপছন্দের তালিকায় যেতে না চাইলে বাদ দিতে হবে কিছু স্বভাব।
Published : 12 Oct 2019, 07:23 PM
সবার মন জয় করে চলা সম্ভব নয়। তবে নিজের অজান্তেই হয়ত কিছু আচরণের কারণে অযথাই অপছন্দের পাত্রে পরিণত হচ্ছেন। দিন শেষে কেনো মানুষ আপনাকে দেখতে পারছেনা তা নিয়ে ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছেন না।
এরকম পরিস্থিতির শিকার হওয়া নিয়ে সম্পর্ক-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল বিস্তারিত।
ফেইসবুকে অনেক বন্ধু: ২০০৮ সালে কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি জরিপ চালায় যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। এই জরিপে শিক্ষার্থীদের কিছু কাল্পনিক ফেইসবুক প্রোফাইল দেখিয়ে জিজ্ঞেস করা হয় ওই প্রোফাইলে মানুষগুলোকে তাদের কেমন লেগেছে।
ফলাফলে দেখা যায়, যার প্রায় ৩শ’ বন্ধু আছে ফেইসবুকে তাদেরকেই মানুষ বেশি পছন্দ করে। বন্ধুর সংখ্যা যদি ১শ’ বা তার কাছাকাছি হয় তবেও তাকে অংশগ্রহণকারীরা পছন্দ করছেন না। আবার যার ৩শ’র বেশি বন্ধু তাদেরকেও ঠিক ভালো ঠেকছে না।
বেশি বন্ধু হলে অপছন্দ করার কারণ সম্পর্কে গবেষকরা বলেন, “অনেক বেশি বন্ধু থাকলে অপরের ধারণা হয় ওই ব্যক্তির কাছে ফেইসবুক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর তার আসলে জনপ্রিয়তা নেই, হতাশা মেটাতে ফেইসবুকে বন্ধু বাড়িয়েছে।”
অপরদিকে যারা এই কাল্পনিক প্রোফাইল দেখে পেছনের মানুষগুলোকে বিচার করছিল তাদের প্রত্যেকেরই নিজেদের ফেইসবুকে বন্ধুর সংখ্যা প্রায় ৩শ’।
গবেষকরা বলেন, “মানুষের যে দলে ফেইসবুক বন্ধুর সাধারণ সংখ্যা প্রায় ১ হাজার সেখানে মানুষকে পছন্দ করার জন্য আদর্শ ফেইসবুক বন্ধুর সংখ্যাও ১ হাজার হওয়া উচিত ছিল। তবে মনে রাখতে হবে, ২০১৪ সালের এক জরিপ থেকে আমরা জেনেছি প্রাপ্তবয়স্কদের ফেইসবুক বন্ধুর সংখ্যা গড়ে ৩৩৮ জন।”
“গবেষণায় আরেকটি মজার বিষয় উঠে আসে। আর তা হল, যাদের ফেইসবুক বন্ধুর সংখ্যা খুব কম বা খুব বেশি তাদেরকে যে অংশগ্রহণকারীরা পছন্দ করছেন না সেটা তারা নিজেরাই বুঝতে পারছেন না।”
সম্পর্কের শুরুতেই ব্যক্তিগত কথা জানিয়ে দেওয়া: পরস্পরের সঙ্গে নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে আলোচনা সম্পর্ককে জোরদার করে। পরিণত বয়সে এসে নতুন বন্ধুত্ব গড়ে তোলার অন্যতম উপায় এটি। তবে মাত্র কদিনের পরিচয়ে কাউকে নিজের অত্যন্ত ব্যক্তিগত কথা বলে ফেলার কারণে অপর ব্যক্তি আপনাকে ভরসার অযোগ্য মনে করার পাশাপাশি অপছন্দ করতে পারে।
তাই গোপন কথা বলার আগে সময়জ্ঞান থাকতে হবে।
২০১৩ সালে শিকাগোর এলেনোয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সুস্যান স্প্রিচারের করা গবেষণা অনুযায়ি, “যেকোনো সম্পর্কের প্রাথমিক পর্যায়ে নিজেদের শখ ও পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করাই নিজেকে আন্তরিক হিসেবে তুলে ধরার জন্য যথেষ্ট।”
নিজের কথা না বলেই অপরের সম্পর্কে প্রশ্ন: স্প্রিচারের ২০১৩ সালের ওই গবেষণায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা যায়, নিজের সম্পর্কে জানানো সম্পর্ক গভীর করতে গুরুত্বপূর্ণ। আর তা দুই পক্ষ থেকেই হতে হবে।
নিজের সম্পর্কে একান্ত কোনো তথ্য ভাগাভাগি করে না নিলে মানুষ তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার আগ্রহ হারায়।
এই গবেষণায় অপরিচিত ব্যক্তিদের গল্প করতে দেওয়া হয়। একদল কথার পিঠে কথা বলে গল্প করেছে আর অপর দলে একজন ব্যক্তিই ১২ মিনিট নিজের কথা বলেছে। পরে অপরজন নিজের সম্পর্কে বলেছে।
ফলাফলে দেখা গেছে যে দল কথার পিঠে কথা বলে গল্প করেছেন তাদের পারস্পারিক সম্পর্ক হয়েছে জোরালো।
গবেষকরা বলেন, “লাজুক ব্যক্তিরা হয়ত নিজের উপর থেকে অপরের মনোযোগ সরানোর জন্য তাদের সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারে। তবে আমাদের গবেষণা বলে সম্পর্কের সুত্রপাতের ক্ষেত্রে এই কৌশল হিতে বিপরীত হতে পারে। সম্পর্ক গড়তে চাইলে উভয়কেই এগিয়ে আসতে হবে।”
অনুভূতি লুকিয়ে রাখা: মানুষের পছন্দের পাত্র হতে নিজের সত্য অনুভূতিটাই তাদের সামনে তুলে ধরা উচিত।
২০১৬ সালে এবিষয়ে গবেষণা চালান ইউনিভার্সিটি অফ ওরেগন’য়ের গবেষকরা। এতে অংশগ্রহণকারীদের দুটি সিনেমার অংশ দেখানো হয়, একদলকে মন খুলে অনুভূতি প্রকাশ করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়। আরেকদলকে নিজেদের অনুভূতি চেপে রাখতে বলা হয়।
অংশগ্রহণকারীরা যখন এই দৃশ্যগুলো দেখছিলেন, গবেষকরা তখন পর্যবেক্ষণ করছেন তাদের প্রতিক্রিয়া। ফলাফলে দেখা যায়, যারা অনুভূতি লুকিয়ে রেখেছিলেন তাদেরকে অন্যান্যরা পছন্দ করছেন না।
গবেষকরা বলেন, “ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মানুষ স্বার্থপরতা দেখায়। তারা দেখে কাদের কাছে তাদের সখ্যতার মূল্য আছে। আর এই মানুষটি যখন দেখবে কেউ তার অনুভূতি লুকিয়ে রাখে তখন তার প্রতি সে আগ্রহ হারাবে।”
অতিরিক্ত ভালো ব্যবহার: একজনের সঙ্গে যত ভালো ব্যবহার করবেন তার সঙ্গে সম্পর্ক ততই ভালো হওয়া উচিত, তাই না?
তবে সবসময় তেমনটা ঘটে না।
২০১০ সালে ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ডেজার্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট কলেজ শিক্ষার্থীদের নিয়ে গবেষণা চালায়। প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে পাঁচজনের একটি দলে অন্তর্ভুক্ত করে কম্পিউটার গেইমস খেলতে বলা হয়। যার মধ্যে চারজনই গবেষকদের নিজস্ব প্রভাবক।
প্রত্যেকেই তাদের নিজেদের অর্জন অপরকে দান করে দিতে পারবে পুরোপুরি কিংবা আংশিক। নিজের অর্জনের পরিমাণ বাড়ানোর লোভও তৈরি করে দেন গবেষকরা। যার অর্জন বেশি হবে সে লটারির মাধ্যমে পুরষ্কার পাবে।
চারজন নকল অংশগ্রহণকারী তাদের অর্জন পঞ্চম জনকে দিয়ে দেয় অনেকটাই, আন্তরিকতার প্রকাশ হিসেবে। তবে প্রকৃত অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মধ্যে অনেকেই তা নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে।
তাদের মনে হয় অন্যদের এই আন্তরিকতা তাকে হেয় করেছে। কারও আবার মনে হয়েছে এই আন্তরিকতার পেছনে অন্য রহস্য আছে।
ভদ্রভাবে নিজের বড়াই: অপরকে আকর্ষণ করতে অনেকেই আত্মসমালোচনার সুরে নিজের গুণগান গায়, যা আসলে সম্পর্ক গড়ে ওঠার আগেই দূরে সরিয়ে দেয়।
এই ধারণা প্রমাণ করতে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গবেষণা চালান সেখানকার গবেষকরা।
শিক্ষার্থীদের বলা হয় নিজেদের দুর্বলতা সম্পর্কে লিখতে। দেখা যায় চারভাগের তিনভাগই দুর্বলতার অন্তরালে নিজের বড়াই করেছে।
চাকরির সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে এমন প্রশ্ন মোকাবেলা করার একটি বিশেষ উপায় হল এমন একটি দুর্বলতা তুলে ধরা যা ওই চাকরির জন্য প্রযোজ্য নয়।
যেমন লেখালেখির কাজ করতে হবে এমন পদের জন্য সাক্ষাৎকারে জনসমাবেশে কথা বলতে না পারাকে দুর্বলতা হিসেবে প্রকাশ করা।
আরও পড়ুন-