ঘরের ছাদে ঝুলে সকালের নাস্তা খাওয়ার দৃশ্যটা কেমন হবে ভাবুন তো একবার!
Published : 20 Jun 2019, 12:58 PM
পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বল সকল বস্তুকে নিচের দিকে টানে। কেমন হত যদি সেই টান নিচের দিকে না হয়ে উপরের দিকে হত? বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীভিত্তিক সিনেমা ছাড়া এমনটা দেখার কথা হয়ত ভাবতেই পারেন না।
তবে ছবির মাধ্যমে তার স্বাদ নিতে পারবেন লালমাটিয়ার ‘আপসাইড ডাউন’ স্টুডিওতে, যেখানে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বল যেন শুধুমাত্র মানুষের জন্য উল্টো।
প্রায় তিন হাজার বর্গফুট জায়গা জুড়ে এই স্টুডিওর মধ্যে আছে স্টুডিও কর্মীদের অফিস, রেস্তোরাঁ এবং আপসাইড ডাউন স্টুডিও।
প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে প্রথমেই পাওয়া যাবে টিকিট কাউন্টার। প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৪শ’ টাকা আর ১০ বছরের নিচের শিশুদের জন্য ২৫০ টাকায় টিকিট পাওয়া যাবে এখানে।
টিকিট নিয়ে মূল স্টুডিওতে যেতে হাতের ডানে আছে রেস্তোরাঁ। কালো আর হলুদ রংয়ের বেঞ্চ আর টেবিলে সাজানো রেস্তোরাঁয় বসতে পারে ৩০ জন মানুষ। দেয়ালে আছে কিছু ‘গ্রাফিটি’ ও ক্যানভাসে আঁকা ছবি। বার্গার, নাচোস, স্যান্ডউইচ, মোহিতো ইত্যাদি পাওয়া যায় এই রেস্তোরাঁয়, দাম হাতের নাগালেই।
এরপর লম্বা একটি বারান্দা পেরিয়ে শুরু হবে স্টুডিও। যেখানে স্থাপত্যশৈলীর নিপুণতায় চলে যাবেন এক উল্টো জগতে।
বসার ঘরের এক কোনায় আছে দাবা খেলার টেবিল যেখানে উল্টো হয়েই দাবা খেলতে পারবেন। পরের ঘরটি শোবার ঘর, সংলগ্ন শৌচাগারসহ।
উল্টো এই জগতের পানির প্রবাহও হয়ত উল্টা, তাই শৌচাগারের কমোড থেকে কোনো কিছু আপনার উপর পড়ার ভয় নেই। তবে চাইলে কমোডে ঝাঁপ দিতে পারেন অভিজ্ঞ সাঁতারুর মতো।
পরিপাটি বিছানা দেখে লোভ হতে পারে, চাইলে তাতে লাফ দিয়ে পড়তে পারেন, পৌঁছাতে পারবেন কি না সে প্রশ্ন অবান্তর।
এরপরে সোনামনির ঘর, আছে খেলনা ছোট দুটি খাট এবং একটি সিঁড়ি।
উল্টা পৃথিবীকে স্বার্থক করতে হাতের ভরে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারেন।
এরপরের ঘরটি একটি অফিস ঘর, যেখানে অভিকর্ষের সঙ্গে দু্ষ্টুমির প্রেক্ষাপট ভিন্ন, এবার বল আপনাকে টানছে বাম দিকে। এরপরের ঘরটিতে কোনো মাধ্যাকর্ষণ বলই নেই, জ্বীনের বাদশা সেজে বেসে থাকতে পারবেন শূন্যে।
বর্ণনা পড়ে যদি মনে হয় এই স্টুডিওতে কৃ্ত্রিম মাধ্যাকর্ষণ সৃষ্টি করা হয়েছে তাহলে ভুল হবে। উপরের কোনোটাই বাস্তবে অনুভব করতে পারবেন না। শুধুমাত্র ছবিতে অনুধাবন করতে পারবেন।
উল্টো করে সাজানো প্রতিটি ঘরে বিভিন্ন ভঙ্গিতে তোলা ছবিগুলো উল্টে দিলেই তৈরি হবে সেই উল্টো পৃথিবীর বিভ্রম। কতরকম ভঙ্গিতে কী বিভ্রম তৈরি করবেন তার সীমাবদ্ধতা শুধুই আপনার সৃজনশীলতা।
নিজের ক্যামেরা না থাকলেও সমস্যা নেই, ৩শ’ টাকার বিনিময়ে স্টুডিওর আলোকচিত্রিরাই আপনাকে ছবি তুলে দেবে বিভিন্ন অভিনব কায়দায়। আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেই ছবিগুলো হাতে পেয়ে যাবেন ইমেইল কিংবা পেনড্রাইভের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, “পুরো স্টুডিওটা ঘুরে দেখতে গড়ে ৪০ মিনিট সময় লাগে। তবে অতিথিরা তাদের ইচ্ছেমতো সময় ব্যয় করে যত খুশি ছবি তুলতে পারেন। আমাদের ছবি তোলার ব্যবস্থাতেও কোনো সীমাবদ্ধতা নেই, যতগুলো ইচ্ছা তুলতে পারেন। দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে স্টুডিওটি। গাড়ি পার্কিং রাস্তায়।”
স্বল্প সময়ে সব বয়সের মানুষের কাছ থেকে আমরা সাড়া পেয়েছি, যা আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়া অনুপ্রেরণা যোগায় প্রতিনিয়ত। পরিবার, নারী, শিশুরাই আমাদের উদ্যোগটিকে সবচাইতে বেশি উপভোগ করেন। তাই তাদেরকে একটি নিরাপদ ও সুস্থ পরিবেশে নির্মল আনন্দ দিতে আমরা সদা সচেষ্ট থাকি।”
প্রচ্ছদের ছবি: আপসাইডডাউনবিডি’র ফেইসবুক থেকে।