খাবার খেয়েও কিছু রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়, যদি সেই খাবার থেকে সঠিক পুষ্টি গ্রহণের উপায় জানা থাকে।
Published : 20 Mar 2023, 01:25 PM
শরীর সুস্থ রাখতে ও কিছু রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে ‘ফাংশনাল ফুড’।
তবে রোগ সারাতে যে ওষুধ খেতে হয়, ‘ফাংশনাল ফুড’ বিষয়টা সেরকম নয়। এটা খাবার হিসেবেই খেতে হয়। আর বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগ সারাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
‘কানাডিয়ান সোসাইটি অফ ইন্টেসটাইনাল রিসার্চ’য়ের ওয়েবসাইট ‘ব্যাডগাট ডটঅর্গ’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই ধরনের খাবারের প্রথম উৎপত্তি ঘটে জাপানে ১৯৮০ সালে।
‘ফাংশনাল ফুড’য়ের নানান ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। তবে ‘হেল্থ কানাডা’র তথ্যানুসারে, এটা প্রচলিত খাবারের অংশ হতে পারে যা কিনা সাধারণ খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমেই গ্রহণ করা হয়। আর এসব খাবারে এমন কিছু উপাদান থাকে যা দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
অন্যদিকে ‘আমেরিকান ডায়েটিক অ্যাসোসিয়েশন’ জানাচ্ছে, রোগের ঝুঁকি কমানো ও সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে যে খাবারগুলো প্রয়োজনের বাইরেও অতিরিক্ত স্বাস্থ্য সুবিধা দেবে সেটাই ‘ফাংশনাল ফুডি’।
এই বিষয়ে ‘অর্গানিক নিউট্রিশন লিমিটেড’য়ের ‘নিউট্রিশন অ্যান্ড সায়েন্টিফিক অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্ট’য়ের পুষ্টিবিদ ফারজানা আক্তার বলেন, “ফাংশনাল ফুড বলতে এমন বায়ো-অ্যাক্টিভ উপাদান সম্পন্ন খাদ্য পণ্যকে বোঝায়, যা শরীর সুস্থ রাখতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে এবং বেশ কিছু রোগের ঝুঁকি কমাতে ভূমিকা রাখে।”
তিনি আরও জানান, ফাংশনাল ফুডে বিদ্যমান বায়ো-অ্যাক্টিভ উপাদানই মূলত এই ভূমিকা রেখে থাকে। তবে এ ধরনের খাবার থেকে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্য সুবিধা পেতে হলে নির্দিষ্ট মাত্রা ও পরিমাণে গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
বিভিন্ন গবেষণা এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ফাংশনাল ফুড সেবনের ফলে কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই দীর্ঘস্থায়ী অসংক্রামক রোগের প্রবণতা হ্রাস পায়।
যেমন- বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, হলুদের বায়ো-অ্যাক্টিভ উপাদান কারকিউমিন দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে, ‘গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল’ স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। এছাড়াও ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ফারজানা আক্তার বলেন, “তাই যে কেউ নির্দিষ্ট রোগের ঝুঁকি কমাতে বা প্রবণতা হ্রাস করতে নির্দিষ্ট ফাংশনাল ফুড সেবন করতে পারেন। তবে বিশেষ কিছু অবস্থা যেমন- শিশু, গর্ভাবস্থা অথবা কোনো গরুতর জটিল সমস্যায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।”
কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্য সুবিধা পেতে হলে কমপক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ফাংশনাল ফুড নির্দিষ্ট মাত্রা ও পরিমাণে গ্রহণ করা প্রয়োজন।
বর্তমানে যেহেতু আমাদের এই ব্যস্ততম জীবনে নির্দিষ্ট পুষ্টি নিশ্চিত করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে, তাই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের পরও রোগের ঝুঁকি কমাতে যে কেউ চাইলে নিয়মিত ফাংশনাল ফুড খেতে পারেন।
এই পুষ্টিবিদ জানান, বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ কর্তৃক ২০১৩ সালে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩’ পাস হয়। যেখানে ‘ফাংশনাল ফুড’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফাংশনাল ফুড পণ্য উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ, বিপণন ইত্যাদি সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান প্রণীত হয়েছে।
যেসব খাদ্যপণ্য এসব বিধি-বিধান মেনে প্রক্রিয়াজাত করা হয় কেবল সেই সকল পণ্যই ‘ফাংশনাল ফুড’ বলে গ্রহণযোগ্য হবে।
বাংলাদেশেও আস্তে আস্তে এই ধারণা পরিচিতি লাভ করছে।
ফারজানা বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশে ‘জার্ড’ এবং ‘আইবিএস’য়ের রোগীর সংখ্যা কম নয়। আর এই সমস্যায় কোনো বিষাক্ত পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ছাড়াই ‘কারকুমা হেলদি গাট’ নামক একটি ফাংশনাল ফুড উপকারী ভূমিকা রাখে।”
তিনি পরামর্শ দিতে গিয়ে আরও বলেন, “অনেকেই বলেন তাদের পেট ফাঁপা থাকে, অনেকের দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে, বুক জ্বালাপোড়া করে- তারা এ সকল সমস্যায় ‘কারকুমা হেলদি গাট’ খেতে পারেন।’
এতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন প্রাকৃতিক বায়োঅ্যাক্টিভ উপাদান যা স্বাস্থ্যকর জীবন উপভোগ করতে সহায়তা করে।