ত্বকের যত্নে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী পর্যাক্রমে ব্যবহার করার পদ্ধতি হল ‘স্কিন সাইকেলিং’ বা ত্বক চক্র পদ্ধতি।
অযাচিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন- প্রদাহ ও শুষ্কতা এড়াতে এই পন্থা অবলম্বন করা হয়।
এই পদ্ধতির প্রবর্তণ করেন নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. হুইটনি বো।
টিকটক’য়ে এই পদ্ধতির উপকারিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, “এই পদ্ধতিতে সক্রিয় উপাদান ব্যবহারের ক্ষেত্রে মুখের যত্নে দৈনিক রূপচর্চার রুটিনে পরিবর্তন আনা হয়।”
যেভাবে কাজ করে
নিউ ইয়র্ক’য়ের ‘উইনিয়নডার্ম’য়ে কর্মরত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এনকিম উগোনাবো এই বিষয়ে হেল্থডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “বেশি উপকার পেতে আর যাতে কম প্রদাহ হয়, সেজন্য প্রধান কয়েকটি উপাদান পর পর চার-রাত ব্যবহার করা হয়।”
প্রতিদিন একই পণ্য এই পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয় না।
প্রথম রাত- রাসায়নিক এক্সফলিয়েন্ট হিসেবে ‘আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিডস (এএইচএ’স) সমৃদ্ধ পণ্য যেমন- গ্লাইকোলিক ও ল্যাক্টিক অ্যাসিড বা বেটা হইড্রোক্সি অ্যাসিডস (বিএইচএ) যেমন- স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ব্যবহার করে ত্বকের উপরিভাগে মৃত চামড়া অপসারণ করা হয়।
দ্বিতীয় - ভিটামিন এ সমৃদ্ধ রেটিনয়েডস পণ্য যেমন রেটিনল বা ট্রেটিনইন ব্যবহার করা হয় ব্রণ ও দাগছোপ কমাতে। আর ত্বকের গঠন উন্নত করার পাশাপাশি বয়স্কভাব দূর করার জন্য।
তৃতীয় ও চতুর্থ দিন- ব্যবহার করা হয় স্বাভাবিক মৃদু ফেইশল ক্লিনার, হালকা সান্সক্রিন ও ময়েশ্চারাইজার- যাতে ত্বক বিশ্রাম পায়।
নির্দিষ্ট চাহিদার ওপর ভিত্তি করে একজন ত্বক বিশেষজ্ঞ এই বিষয়ে সুপরামর্শ দিতে পারবেন।
আটলান্টার জর্জিয়া’তে অবস্থিত ‘বাউকম অ্যান্ড মিনা ডার্ম সার্জারির’ চিকিৎসক ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ম্যারি অ্যালিস মিনা এই বিষয়ে বলেন, “ঘন ক্রিম ‘স্কিন সাইকেলিং’ পদ্ধতিতে ব্যবহার করা উপকার মিলতে পারে। কারণ এই ধরনের ক্রিম প্রতিদিন ব্যবহারে লোমকূপ আবদ্ধ করে দেয়।”
এছাড়া অনেকে বিশ্রামের দিন ছাড়া অন্যান্য দিন ভিটামিন সি সেরাম বা টোনার ব্যবহার করেন।
উপকারিতা
‘অ্যাক্টিভ’ বা সক্রিয় উপাদান যেমন রেটিনয়েডস পাশাপাশি ল্যাক্টিক, গ্লাইকোলিক ও স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ত্বকে সহ্য করানো হল ‘স্কিন সাইকেলিং’ করার প্রাথমিক লক্ষ্য।
ডা. উগোনাবো বলেন, “যারা এই ধরনের পণ্য ব্যবহার করতে চান তবে সহ্য করতে পারেন না, তাদের জন্য এই পদ্ধতি উপকারী হয়।”
আর সার্বিকভাবে ত্বকের সুরক্ষকতা বজায় রাখা, রূপচর্চার প্রসাধনী ব্যবহারে অযাচিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দেওয়া, ত্বকে শুষ্কভাব ও জ্বালাপোড়া এড়ানোর জন্য এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
যাদের জন্য নয়
সবার জন্য এই পদ্ধতি কার্যকর নাও হতে পারে। যদি ত্বকে কোনো সমস্যার জন্য গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তবে ‘স্কিন সাইকেলিং’ পদ্ধতি ব্যবহৃত পণ্য কম কার্যকর হতে পারে।
“কিছু পণ্য যেমন- রেটিনয়েডস ব্যবহারে উপকার পেতে নির্দিষ্ট ধারায় ব্যবহার করতে হয়। যাদের ব্রণের সমস্যা রয়েছে তাদেরকে আমি ঘন ঘন রেটিনয়েড ব্যবহার করার পরামর্শ দেই”- বলেন ডা. উগোনাবো।
মানে হল, এই ধরনের ‘অ্যাক্টিভ’ সক্রিয় উপাদান কয়েকদিন ধরে না মাখলে উপকার মিলবে না- জানান এই চিকিৎসক।
আর এরই মধ্যে ত্বকের সমস্যার জন্য ত্বক-বিশেষজ্ঞ যদি দৈনিক কোনো চিকিৎসা দিয়ে থাকেন তবে ‘স্কিন সাইকেলিং’ পদ্ধতি অনুসরণ করা ঠিক হবে না। আবার কিছু প্রসাধনী যেমন- সানস্ক্রিন প্রতিদিন ব্যবহার করাই উচিত।
তাই ত্বকের যত্নে কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করার আগে রূপ বা ত্বক বিশেষজ্ঞের সাথে আলাপ করেই শুরু করা ঠিক হবে।
যাদের জন্য প্রযোজ্য
আগে ত্বকের যত্নে প্রসাধনী ব্যবহার করে জ্বালাপোড়া অনুভব করেছে বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে তারা যদি আবারও একই পণ্য ব্যবহার করতে চায় তবে এই পদ্ধতি উপকার নিয়ে আসবে। দৈনিক রূপচর্চার অভ্যাস ধরে রাখতে এটা সাহায্য করে।
বরং জটিল ও নানান ধাপ অনুসরণের পাশাপাশি অনেক ধরনের পণ্য ব্যবহারের হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয় ‘স্কিন সাইকেলিং’ পদ্ধতি।
এছাড়া ত্বকে যদি নির্দিষ্ট কোনো সমস্যা থাকে যেমন- লালচেভাব হওয়া, শুষ্কভাব দেখা দেওয়া, চুলকানি বা একজিমা- তবে ‘স্কিন সাইকেলিং’ পদ্ধতি খাটানো যেতে পারে।
ডা. উগোনাবো বলেন, “যারা সক্রিয় উপাদান ভিত্তিক প্রসাধনী ব্যবহারে নতুন পাশাপাশি যাদের ত্বক বেশি স্পর্শকাতর তাদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বেশি উপকারী হয়।”
আরও পড়ুন