জঙ্গলে যাওয়ার দরকার নেই, নগর উদ্যানে কিছুক্ষণ হাঁটাও মনে প্রশান্তি জাগাবে।
Published : 19 Dec 2023, 01:08 PM
শহুরে যান্ত্রিক পরিবেশে মন ভালো রাখা দুষ্কর। একটু সুযোগ করে প্রকৃতির কাছে যাওয়া তাৎক্ষণিক মন ভালো করারা পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়তা করে।
২০১৯ সালে ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন সাইকোলজি’ জার্নালে প্রকাশিত ‘ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান’য়ের করা গবেষণার বরাত দিয়ে হেল্থশটস ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ মিনিট প্রকৃতির মাঝে হাঁটা বা বসা মানসিক চাপ বৃদ্ধিকারী হরমোন কমাতে সাহায্য করে।
প্রকৃতির সাথে সংযোগ বৃদ্ধি নানানভাবেই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সক্ষম।
মানসিক চাপ কমায়
ভারতের চেম্বুরে অবস্থিত ‘এসআরভি’ হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সানিল সিনহাসন বলেন, “প্রকৃতির কাছে বসা মানসিক চাপ কমাতে সহায়াত করে। সবুজ জায়গা এবং প্রকৃতি স্নায়ুতে প্রশান্তির ভাব আনে, মানসিক চাপ বাড়ানোর হরমোনের নিঃসরণ কমায় এবং আরাম অনুভবে সহায়তা করে।
মন ভালো করে
বাইরে সময় কাটানো ‘সেরেটোনিন’য়ের মাত্রা বাড়ায় যা স্নায়ুর মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে মন ভালো রাখতে, উদ্বেগ ও হতাশা কমাতে সহায়াত করে। সূর্যালোক ঘুম চক্র স্বাভাবিক রাখে। আর ভালো ঘুম মন ভালো রাখার সাথে সম্পর্কযুক্ত।
মনোযোগ বৃদ্ধি
প্রকৃতি মন ভালো রাখতে এবং মানসিক ক্লান্তি কমাতে সহায়তা করে। প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক বর্তমানের ওপরে মনোযোগ দিতে সক্ষমতা বাড়ায়, অতিরিক্ত চিন্তা ও মানসিক ক্লান্তি কমাতে সহায়তা করে। ফলে মনোযোগ ও চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
সামাজিক বন্ধন বাড়ায়
বাইরে প্রকৃতির মাঝে দলীয় কাজ করা বা সময় কাটানো সামাজিক বন্ধন সৃষ্টি করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখে।
মানসিক সুস্থতা
প্রকৃতিক কাছে থেকে শরীরচর্চা করা সামগ্রিকভাবে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। বাইরে ব্যায়াম করা আত্মমর্যাদা উন্নত করে, চিন্তাধারা বাড়ায় এবং পূর্ণতার অনুভূতি দেয়।
জ্ঞানীয় দক্ষতা বাড়ায়
প্রকৃতিক সান্নিধ্য সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ায়। ফলে চিন্তাধারা উন্নত হয় এবং জ্ঞানীয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় বলে জানান ডা. সানিল।
প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার পন্থা
প্রাকৃতিক পরিবেশের অভাবে মানসিক চাপের হরমোন কর্টিসোল’য়ের মাত্রা বাড়ার সম্পর্ক রয়েছে। যা দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপের জন্য দায়ী আর সার্বিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
তাই প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে কিছু পন্থা অবলম্বন করাই যায়।
নিয়মিত প্রকৃতির মাঝে হাঁটা: প্রতিদিন প্রকৃতির কাছে গিয়ে হাঁটা, সবুজের সংস্পর্শ- মানসিক চাপ কমায় এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
“শারীরিক কার্যক্রম ‘এন্ডোরফিনস’ হরমোন নিঃসরণ করে যা মন ভালো রাখার সাথে সম্পর্কিত”- বলেন ডা. সিনহাসন।
মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা অনুশীলন: মনোযোগ দিয়ে প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করা অভ্যাস গড়তে হবে। প্রাকৃতিক শব্দ, দৃশ্য ও অনুভূতির দিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। পারিপার্শ্বিক উপস্থিতি পর্যবেক্ষণের অনুশীলন মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সহায়তা করে।
ধ্যান: যে কোনো জায়গাতেই ধ্যান করা যায়। তবে প্রকৃতিক কাছে ধ্যান করা মনোযোগ বাড়াতে ও আবেগের ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়তা করে।
প্রকৃতি নিয়ে লেখা: নিজের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করে রাখতে সাথে একটা ‘নেচার জার্নাল’ রাখা যায়। এতে করে আত্মসচেতনতা বাড়ে এবং নিজের অনুভূতি সম্পর্কে সচেতন হতে সহায়তা করে।
প্রকৃতির ছবি তোলা: প্রকৃতির ছবি তোলার মাধ্যমে এর সাথে সংযোগ সুদৃঢ় করতে সহায়তা করে। এটা সৃজনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি আবেগিক প্রকাশের ভূমিকা রাখে।
বাগান করা: বাগান করা মানে কেবল গাছ লাগানো না। এটা শারীরিক পরিশ্রমের ব্যাপার, যা পূর্ণতার অনুভূতি দেয়।
বাইরে ব্যায়াম করা: বাইরে জগিং, যোগ ব্যায়াম বা অন্যান্য কাজ করা সতেজ বাতাস ও প্রাকৃতিক চারপাশের যোগান দেয় যা মন ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে। ।
কার্যক্রমে অংশগ্রহণ: পরিবেশ বাঁচাতে নানান রকম কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখে।
প্রযুক্তি থেকে বিরতি নেওয়া: ‘ডিজিটাল ডিভাইস’ থেকে বিরতি নিয়ে প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটানো মানসিক চাপ কমায়। ফলে মানসিক প্রশান্তি বাড়ে, চাপ কমে ও জ্ঞানীয় দখতা বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন