ডায়েট কোমল পানীয় কোনোভাবেই স্বাস্থ্যকর নয়।
Published : 10 Mar 2024, 01:15 PM
চিনিযুক্ত মিষ্টি পানীয় এড়িয়ে ডায়েট পানীয় পান করাতেও রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
কারণ সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে- যারা পান করেন না, তাদের তুলনায় যারা সপ্তাহে দুই লিটার বা এর বেশি কৃত্রিম মিষ্টিযুক্ত কোমল পানীয় গ্রহণ করেন তাদের অনিয়মিত হৃদস্পন্দের ঝুঁকি বাড়তে পারে ২০ শতাংশ।
আর এই পরিমাণ প্রতিদিন মাঝারি আকারের ডায়েট সোডা পানের মতোই সমতুল্য।
গবেষণার বরাত দিয়ে সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়- অনিয়মিত হৃদস্পন্দন’কে বলা হয় ‘এট্রিয়াল ফাইব্রেলেইশন’ বা ‘এ-ফিব’। যে কারণে বুকের মধ্যে ধরফর করা, কাঁপাকাঁপি করা বা হৃদস্পন্দনে উল্টাপাল্টা অনুভূতি হয়।
১০ বছর ধরে ইউকে বায়োব্যাংক থেকে প্রায় ২ লাখ ২ হাজার মানুষের তথ্য পর্যালোচনা করে এই পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা চালায়- চীনের ‘শাংহাই জিয়াও টং ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের ‘শাংহাই নাইন্থ পিপল’স হসপিটাল’য়ের ‘ইন্সটিটিউট অ্যান্ড ডিপার্টমেন্ট অফ এন্ডোক্রিনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম’য়ের গবেষকরা।
যাদের তথ্য পর্যালোচনা করা হয় তাদের বয়স ছিল ৩৭ থেকে ৭৩’য়ের মধ্যে এবং অর্ধেকই ছিলেন নারী।
‘সার্কুলেইশন: অ্যারিদমিয়া অ্যান্ড ইলেক্ট্রোফিজিওলজি’ সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণায় আরও দেখা দেছে- একই পরিমাণ চিনিযুক্ত কোমল পানীয় পানে এই অবস্থার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় ১০ শতাংশ।
অন্যদিকে চার আউন্সের মতো খাঁটি, চিনি ছাড়া ফলের রস, যেমন- কমলা বা সবজির জুস পান করার সাথে ‘এট্রিয়াল ফাইব্রেলেইশন’ হওয়ার ঝুঁকির পরিমাণ ৮ শতাংশ কমার সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত না থেকেও ‘পেনসিলভিনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি’র নিউট্রিশনাল সায়েন্সেস’য়ের অবৈতনিক অধ্যাপক পেনি ক্রিস-ইথারটন একই প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন, “এই গবেষণার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো প্রকাশ করা হল যে, চিনিমুক্ত বা কম ক্যালরির মিষ্টি পানীয় এবং চিনিযুক্ত পানীয় ‘এট্রিয়াল ফাইব্রেলেইশন’ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।”
‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’য়ের পুষ্টি-বিষয়ক সমিতির এই সদস্য আরও বলেন, “হৃদস্বাস্থ্যের অবস্থা খারাপ করা ছাড়াও নানান ধরনের হৃদরোগ হওয়ার বিষয়ে পুরোপুরি বোঝার জন্য কোমল পানীয় নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।”
‘এট্রিয়াল ফাইব্রেলেইশন’ থেকে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। সেই সাথে রক্ত জমাট বাধার সমস্যা বাড়ায়, যেখান থেকে ‘হার্ট ফেইল’ হতে পারে।
এই বিষয়ে ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার’, স্যান ফ্রান্সিসকো স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের অধ্যাপক ডা. গ্রেগরি মার্কাস বলেন, “এসবের কারণে ‘হার্ট অ্যাটাক’, ডিমেনশা (স্মৃতিভ্রংশ) বা বৃক্বের অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ায়।”
অনেকেরই বুকে ব্যথা, বুক ধরফর করা, নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা ও শ্রান্তিতে ভোগেন। এগুলো হৃদস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিকর অবস্থা।
তবে ‘এ-ফিব’য়ের লক্ষণ বোঝা যায় না। ফলে এটাকে নীরব ঘাতক হিসেবে আখ্যা দেওয়া যায়।
মার্কাস বলেন, “ওষুধ, জীবনযাত্রার পরিবর্তন, প্রয়োজনে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এই সমস্যা সারিয়ে তোলা যায়।”
গবেষণার প্রধান ডা. নিনজিঝান ওয়াং এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা আরও খুঁজে পেয়েছি যে- কৃত্রিম মিষ্টি দেওয়া পানীয় গ্রহণের পরিমাণ তরুণ, নারী ও স্থূল ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি। যা টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।”
আর পুরুষদের মধ্যে চিনিযুক্ত পানীয় পানের প্রবণতা বেশি। যা তাদেরকে হৃদসংক্রান্ত অসুস্থতায় ভোগার পরিমাণ বাড়াচ্ছে।
এই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে গবেষকরা- কৃত্রিম মিষ্টি ও চিনিযুক্ত পানীয় কম গ্রহণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
ওয়াং বলেন, “স্বল্প ক্যালরি যুক্ত, কৃত্রিম মিষ্টি ও চিনি কম- এরকম পানীয় স্বাস্থ্যকর ভাবার কোনো কারণ নেই। এগুলো নানান স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়।”
ক্রিস-ইথার্টন বলেন, “তাই পানি পান করাই হবে সেরা সিদ্ধান্ত। আর চিনিমুক্ত ও কম ক্যালরির মিষ্টি কোমল পানীয় গ্রহণ কমাতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় এড়াতে পারলে।”
ছবি: পেক্সেল্স ডটকম।
আরও পড়ুন
ওজন কমাতে একটি পানীয় এড়িয়ে চলুন
ফলের রস থেকে ক্যান্সারের ঝুঁকি