সকালের চাইতে সন্ধ্যার ব্যায়ামে কমতে পারে বেশি রক্তের চিনি।
Published : 28 Aug 2023, 01:59 PM
সকালের পরিবর্তে দুপুরের পর বা বিকালে যদি শরীরচর্চা করা হয় তবে টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের বেশি উপকার হতে পারে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণার ফলাফলে এরকমই দাবী করা হয়।
“আমরা গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছি যে, পূর্ণবয়স্ক যারা টাইপ টু ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তারা দুপুরের পর বেশি কর্মক্ষম থাকলে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে বেশি মাত্রায় সক্ষম হন”- সিএনন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন ম্যাসাচুসেটসের ‘ব্রিগাম অ্যান্ড উইমেন’স হসপিটাল’য়ের ‘ডিভিশন অফ স্লিপ অ্যান্ড সার্কাডিয়ান ডিজঅর্ডার্স’য়ের চিকিৎসক ও এই গবেষণার সহ-রচয়িতা ডা. সিঙ্গি সিয়ান।
তিনি আরও বলেন, “আমরা জানি শারীরিক কর্মকাণ্ড করা উপকারী। তবে আমাদের গবেষণা নতুন করে উপলব্ধি করাচ্ছে- সময়টাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ।”
এই গবেষণার জন্য ব্রিগাম এবং জসলিন ডায়াবেটিস সেন্টার’য়ের গবেষকরা ২ হাজার ৪শ’জন টাইপ টু ডায়াবেটিসে ভোগা রোগী পর্যালচনা করেন; যারা ছিলেন অতিরিক্ত ওজনধারী। আর কর্মক্ষম থাকার মাত্রা পরিমাপ করতে তাদের পরিয়ে দেওয়া হয় ‘ওয়েইস্ট অ্যাকসেলোমেট্রি রেকর্ডিং ডিভাইস’।
প্রথম বছরের তথ্য পর্যালোচনার পর গবেষকরা দেখতে পান, যারা দুপুরের পরে ‘মধ্যম থেকে জোরালো’ মাত্রায় শরীরচর্চা করেছেন তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমেছে।
‘হার্ভার্ড’স স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ’ অনুসারে ‘মধ্যম’ মাত্রার শারীরিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে আছে- জোরে হাঁটা, ব্যাডমিন্টন খেলা বা যন্ত্রের মাধ্যমে উঠানে ঘাস কাটা। অন্যদিকে ‘ভিগরাস’ বা তেজী কর্মকাণ্ড হল- হাইকিং, দ্রুত জগিং, বাস্কেটবল বা ফুটবল খেলা অথবা প্রতি ঘণ্টার ১৪ থেকে ১৬ মাইল গতিতে সাইকেল চালানো।
‘ইউএস সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ জানাচ্ছে, ‘মডারেট অ্যারোবিক’ মাত্রার ব্যায়াম বোঝার উপায় হল- আপনি কথা বলতে পারবেন তবে প্রিয় গান গাওয়ার দমটা থাকবে না।
গবেষণা চলাকালে চতুর্থ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে গবেষকরা দেখতে পান, যারা বৈকালিক ব্যায়াম চালিয়ে গেছে তারা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা যেমন কমিয়েছেন তেমনি ওষুধ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাও কমিয়েছেন উচ্চ মাত্রায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে, যখন শরীর ইন্সুলিন প্রতিরোধী হয় বা পর্যাপ্ত ইন্সুলিন তৈরি করতে পারে না তখন টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
আর এই অবস্থা সাধারণত বয়স বৃদ্ধি, স্থূলতা, পারিবারিক ইতিহাস, জাতিগত ও শারীরিকভাবে কম কর্মক্ষমদের মাঝে দেখা দেয়।
আর ডায়াবেটিস থেকে স্নায়ুর ক্ষতি, দৃষ্টিশক্তি ক্ষয়, বৃক্ক ও হৃদ রোগ-সহ অকাল মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
এই গবেষণায় অবশ্য সময় ও খাদ্যাভ্যাসকে ধরা হয়নি।
তারপরও এই গবেষণার সহকারী এবং জসলিন ডায়াবেটিস সেন্টার’য়ের সহকারী অনুসন্ধানী ডা. রোল্যান্ড মিডেলবিক বলেন, “মনে হচ্ছে সময়টাও একটা ব্যাপার গুরুত্বপূর্ণ।” আরও বলেন, “সামনে আমারা আরও তথ্য পাব, যা কিনা রোগীদের ব্যক্তিগতভাবে পরামর্শ দিতে আরও কার্যকর হবে।”
ডায়াবেটিস ইউকে’র ‘রিসার্চ কমিউনিকেইশন্স’য়ের প্রধান ডা. লুসি চেম্বার্স এই গবেষণা সম্পর্কে বলেন, “শারীরিকভাবে কর্মক্ষম থাকলে টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা যেমন রক্তে শর্করার মাত্রা সমন্বয় করতে পারে তেমনি ডায়াবেটিস সম্পর্কিত নানান রোগ, যেমন- হৃদরোগ বা বৃক্কের অসুখ হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে সার্বিকভাবে ভালো থাকতে পারে।”
এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত না থেকেও তিনি পরামর্শ দেন, যখন দরকার তখন ব্যায়াম করা উচিত।
এই গবেষণা দেখিয়েছে যে- সকাল, মধ্যবেলা কিংবা সন্ধ্যায় যে কোনো সময় শারীরিক কর্মকাণ্ড করা উপকারী। তবে টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে বৈকালিক ব্যায়াম বেশি উপকার নিয়ে আসতে পারে।
‘আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন’য়ের সাময়িক ‘ডায়াবেটিস কেয়ার’য়ে প্রকাশিত এই গবেষণা সম্পর্কে চেম্বার্স আরও বলেন, “যদি আপনার টাইপ টু ডায়াবেটিস থাকে তবে এমন ব্যায়াম খুঁজে বের করুন যা করতে আনন্দ পান এবং বহুদিন ধরে রুটিনে সংযুক্ত রাখতে পারেন। হতে পারে সেটা কাজের আগে, দুপুরের খাবারের বিরতিতে বা সন্ধ্যায়।”
আরও পড়ুন
দিনের যে সময়টা শরীরচর্চার জন্য আদর্শ