দিনের যে সময়টা শরীরচর্চার জন্য আদর্শ

ভোরে ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হলেও গবেষণা বলছে উল্টো কথা।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2021, 06:56 AM
Updated : 30 May 2021, 06:56 AM

সকালে উঠে ব্যায়াম করার সময় হয় না? তাহলে বেছে নিতে পারেন দুপুরের পর যে কোনো সময়। কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে শরীরের জৈবিক প্রক্রিয়া দুপুরের পর বেশি কার্যকর থাকে। ফলে ব্যায়াম থেকে মিলবে সর্বোচ্চ ফলাফল।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল’য়ের ‘ব্রিগাম অ্যান্ড উইমেন’স হসপিটাল’য়ের চার্লস এ. চাইজলার একজন ঘুম বিশেষজ্ঞ।

তিনি সাধারণত পেশাজীবী খেলোয়াড়দের পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন। যাতে তারা মাঠে নিজের সর্বোচ্চ পরিবেশনাটা উপস্থাপন করতে পারেন।

এই বিশেষজ্ঞের মতে, “একজন সবচাইতে বেশি কর্মক্ষম থাকেন বিকালের শেষভাগে কিংবা সন্ধ্যার শুরুর দিকে। এই সময়েই মানুষ সবচাইতে বেশি সজাগ, সতর্ক, শক্তিশালী, মনযোগী হয়ে ওঠে।”  

এই ধারণার স্বপক্ষে উদাহরণ দিতে গিয়ে চাইজলার স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “সবচাইতে বেশি ‘অলিম্পিক রেকর্ড’ সৃষ্টি হয়েছে সেই খেলায় যা অনুষ্ঠিত হয়েছে বিকেলে কিংবা সন্ধ্যায়। কারণ সেই সময় মানুষের শরীরে কর্মশক্তির জোরালো প্রবাহ থাকে।”

‘ডায়াবেটোলজিয়া’ শীর্ষক জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা দাবি করে, শুধু ‘অলিম্পিক রেকর্ড’ করাই নয়, এই সময়ে শরীরচর্চা থেকেও সবচাইতে বেশি উপকার পাওয়া সম্ভব।

‘অস্ট্রেলিয়ান ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি’র অন্তর্ভুক্ত ‘ম্যারি ম্যাককিলোপ ইন্সটিটিউট ফর হেল্থ’য়ের গবেষকরা এই গবেষণার মাধ্যমে বুঝতে চেয়েছিলেন, দিনের কোন সময় ব্যায়াম বিপাকক্রিয়াকে সবচাইতে বেশি প্রভাবিত করে।  

এই জন্য তারা বেছে নেন ২২ জন স্থূলকায় পুরুষকে।

অলস জীবনযাপন করা এই অংশগ্রহণকারীদের তিন সপ্তাহ ধরে রেস্তোরাঁর অস্বাস্থ্যকর খাবারে অভ্যস্ত রাখার পর তাদেরকে তিনটি দলে ভাগ করেন গবেষকরা।

একদল সকাল সাড়ে ছয়টায় ব্যায়াম করবে, একদল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ব্যায়াম করবে আর একদল মোটেই ব্যায়াম করবে না।

নিউ ইয়র্ক টাইমস তাদের এক প্রতিবেদনে এই গবেষণার ফলাফলকে ‘জটিল’ হিসেবে আখ্যা দেয়।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, “মাত্র পাঁচ দিনের অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে অংশগ্রহণকারীদের কোলেস্টেরল চূড়ায় ওঠে। রক্তে বিপাকক্রিয়া সম্পর্কিত রোগ ও হৃদরোগের জন্য দায়ী এমন কিছু উপাদান তাদের রক্তে অস্বাভাবিক মাত্রায় চোখে পড়ে। এই পরিবর্তনগুলো অংশগ্রহণকারীদের হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছিল ক্রমাগত।”

অংশগ্রহণকারীরা শরীরচর্চা শুরু করার পর, যারা সকালে ব্যায়াম করছিলেন তাদের কোলেস্টেরলের মাত্রায় কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছিল না। তবে যারা সন্ধ্যায় ব্যায়াম করছিলেন তাদের গল্পটা একেবারেই ভিন্ন।

“মাত্র পাঁচদিন ব্যায়াম করার পরই তাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা যেমন কমেছে, সেই সঙ্গে কমেছে রক্তে থাকা হৃদরোগের সম্ভাবনা সৃষ্টিকারী উপাদানও। রাতে ঘুমানোর সময় অন্য দুইদলের তুলনায় সন্ধ্যায় ব্যায়াম করা এই দলের সদস্যদের রক্তে শর্করার মাত্রাও কীভাবে যেন আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকত।”

গবেষকরা বলছেন, তারা এখনও সঠিক জানেন না কেনো সন্ধ্যায় ব্যায়াম করা অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি উপকারী। বাস্তব জীবনে সিংহভাগ মানুষের খাদ্যাভ্যাসকে অস্বাস্থ্যকরই ধরে নেওয়া যায়। তাই সেই জীবনযাত্রার প্রভাবকে প্রশমিত করার জন্য ব্যায়ামটা সন্ধ্যার পর হওয়াই হবে সবচাইতে উপকারী।

তবে বেশি দেরি করাও আবার ঠিক না।

কারণ যুক্তরাষ্ট্রে ব্যায়াম প্রশিক্ষক টিম লিউ বলেন, “শরীরচর্চার সময় দেহে নিঃসৃত হয় ‘স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল’ যা রাতে ঘুম আসতে বাধা দেবে।

তাই যে পদ্ধতি-ই বেছে নেওয়া হোক না কেনো, বেশি রাতে নয় বরং বিকাল বা সন্ধ্যার পর পর ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন এই প্রশিক্ষক।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন