যে কোনো বয়সেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
Published : 20 Oct 2023, 10:55 AM
সাধারণত জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করা যায়।
তবে কিছু ক্ষেত্রে এই সমস্যা অন্য কোনো রোগের লক্ষণ হতে পারে।
এই সমস্যায় ভোগার নানান কারণের মধ্যে রয়েছে
অপর্যাপ্ত পানি পান।
খাদ্যাভ্যাসে আঁশের পরিমাণ কম।
শারীরিক কর্মকাণ্ড কম।
কোনো প্রকার মানসিক চাপে থাক।
আকস্মিক পারিপার্শিক পরিবর্তন।
মলত্যাগের বেগ আসলেও চেপে রাখা।
এছাড়া কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, গর্ভাবস্থা, মল নিঃসরণের কোনো ওষুধ অতিমাত্রায় ব্যবহার, কোনো দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন- পার্কিনসন’স, মানসিক চাপ, ‘মাল্টিপল সিরোসিস’, থাইরয়েড সমস্যা, হজমে সমস্যা যেমন- আইবিএস, মলাশয়ে রোগ ইত্যাদি কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
উপরের বিষয়গুলো উল্লেখ করে ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্র বিশেষজ্ঞ ডা. সিদ্ধার্থ গুপ্তা ফার্মইজি ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে অনেকেই আলোচনা করতে অস্বস্তি বোধ করেন। যে কারণে সময় মতো চিকিৎসা না নিলে সমস্যা আরও বাড়ে।”
কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণগুলো হল-
অন্ত্রের নড়াচড়ার ব্যথা অনুভব।
স্বাভাবিক সময়ের চাইতে বেশিক্ষণ বাথরুমে বসে থাকা।
মল ত্যাগের পরেও পেট খালি হয়নি মনে হওয়া।
শুষ্ক ও শক্ত মল নিঃসরণ।
তলপেটে ব্যথা।
পেট ফোলাভাব।
মল নিঃসরণে জোর দেওয়া।
ডা. সিদ্ধার্থ বলেন, “অন্য কোনো রোগ থেকে সমস্যার সৃষ্টি না হলে বিভিন্ন খাবার গ্রহণের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরসন করা যায়।”
এরকম খাবারের মধ্যে আছে
পেয়ারা: পুষ্টিগুণে ভরপুর দেশি এই ফল ‘ল্যাক্সেটিভ’ বা মল নিঃসরণের জন্য রেচক হিসেবে কাজ করে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা টাটকা পেয়ারা খেলে তাই উপকার পাওয়া যায়।
খেজুর: হজম সংক্রান্ত সমস্যা নিরসনে এই ফল কার্যকর। সকালে পাঁচ-ছয়টা খেজুর অল্প ঘি ও কালো গোলমরিচের গুঁড়ার সঙ্গে খেলে ভালো কাজ করে। এরপর কুসুম গরম পানি পান করতে হবে। নিয়মিত এভাবে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।
মাসকলাইয়ের ডাল: যাদের অনিয়মিত মল নিঃসরণ হয় তাদের জন্য এই ডাল উপকারী হতে পারে। কিছু মাসকলাইয়ের ডাল ভেজে গুঁড়া করে ঘোলের সঙ্গে গুলিয়ে পান করলে উপকার মিলবে।
পান-পাতা: হজম রস নিঃসরণে সাহায্য করে, তাই গ্যাস বা পেট ফোলা সমস্যায় আরাম দেয়। পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য নিরসনেও কাজ করে। যে কোনো খাবার খাওয়ার পর পান চিবানো যেতে পারে।
তেজ-পাতা: প্রায় প্রতিটা রান্নাঘরেই এই পাতার দেখা মিলবে। হজমের সমস্যা কাটাতে যে কোনো তরকারিতে তেজপাতা ব্যবহার করা উপকারী। এছাড়া তেজপাতার চা বানিয়েও গ্রহণ করা যায়। এক্ষেত্রে কিছু তেজপাতা কয়েক মিনিট পানিতে ফুটিয়ে ছেঁকে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে তেজপাতার চা।
লাউপাতা: ‘ল্যাক্সেটিভ’ বা রেচক হিসেবে কাজ করে লাউপাতা। এটা দিয়ে চাটনি তৈরি করে যে কোনো খাবারের সাথে খাওয়া যায়।
ক্যাস্টর বা রেড়ি: নানান আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় এটা ব্যবহার করা হয়। রেড়ি গাছের শেকড় দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারলে কোষ্ঠকাঠিন্যে উপকার পাওয়া যায়। এজন্য রেড়ি গাছের কিছু শুকনা শেকড় মিহি গুঁড়া করে এক গ্লাস দুধের সাথে মিশিয়ে ফুটিয়ে পরিমাণে অর্ধেক বানিয়ে পান করতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনেও গুরুত্ব দেন এই চিকিৎসক।
খাবারে আঁশের পরিমাণ বাড়াতে ছোলা, ডাল, পূর্ণ শষ্যের খাবার, ওটস, ব্রকলি, গাজর, মটর, কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, আপেল, বেরিজ, কমলা ও নাশপাতি নিয়মিত খেতে হবে।
পর্যাপ্ত পানি পান আবশ্যক। যা অন্ত্রের নড়াচড়ায় ভূমিকা রাখে ও মলের শুষ্কভাব দূর করে। এছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করাও উপকারী।
যেসব খাবার এড়াতে হবে
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আঁশজাতীয় খাবার খাওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি কয়েক ধরনে খাবার এড়াতেও হবে। এর মধ্যে রয়েছে- ফাস্ট ফুড, মাংস, হিমায়িত খাবার, প্রক্রিয়াজাত ও মাইক্রোওয়েভে তৈরি করা যায় এমন খাবার।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত
সবসময় পেটফোলা অনুভূত হওয়া, পেটব্যথা করা, পেটফাঁপা ও বমিভাব, মলে সাথে রক্ত যাওয়া এবং পর পর তিনদিন পেট পরিষ্কার না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
আরও পড়ুন
পেট-ফাঁপাভাব কমাতে যেসব খাবার থেকে দূরে থাকতে হয়