যেসব খাবার পেটে গ্যাস তৈরি করে

পুষ্টিকর হওয়ার পরেও পেটে গ্যাস সৃষ্টি করে বীজজাতীয় খাবার।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2022, 09:12 AM
Updated : 30 April 2022, 09:12 AM

পুষ্টিবিদদের পরামর্শের আলোকে এমন আরও কিছু খাবার সম্পর্কে জানানো হল ‘ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে।

‘সুগার ফ্রি’ খাবার: যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ কেলি ম্যাকমোর্ডি বলেন, “সুগার ফ্রি’ চকলেট, ক্যান্ডি, চুইং গাম ইত্যাদি চিনির পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় ‘সর্বিটল’, ‘ম্যানিটোল’, ‘আইসোমল্ট’, জাইলিটোল’ ইত্যাদি ‘সুগার অ্যালকোহল’ ধরনের রাসায়নিক উপাদান। প্যাকেটের গায়ে এই নামগুলো খুঁজে পাবেন। এই উপাদানগুলো পেটে গ্যাস সৃষ্টি করে। এগুলো পরিবর্তে ‘স্টিভিয়া, ম্যাপল সিরাপ কিংবা আসল চিনি বেছে নিতে পারেন।”

স্ন্যাক বার ও সিরিয়াল: ম্যাকমোর্ডি বলেন, “ভোজ্য আঁশ সরবরাহের দাবি করা ‘ফাইবার স্ন্যাক বার্স’, ‘ফাইবার সিরিয়াল’য়ে ‘সাপ্লিমেন্টাল ফাইবার’ হিসেবে যোগ করা হয় ‘ইনুলিন’ ও ‘চিকোরি রুট’। এগুলো পেট ফোলাভাব ও পেটে গ্যাস সৃষ্টি করে। এড়াতে চাইলে প্যাকেটের গায়ে লেখা উপকরণের তালিকা দেখে নিতে হবে।”

দুগ্ধজাত খাবার: লস অ্যাঞ্জেলেসের ‘ডাইজেস্টিভ হেল্থ অ্যান্ড স্পোর্টস নিউট্রিশন’ বিশেষজ্ঞ সারাহ গ্রিনফিল্ড বলেন, “ল্যাকটোজ ইনটোলেরেন্স’য়ে আক্রান্ত অনেক মানুষ নিজেই জানেন না তাদের পরিস্থিতির ব্যাপারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ‘ল্যাকটোজ’ ভাঙা ক্ষমতা হারাতে থাকে। আর তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ডায়রিয়া, পেটে গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দেখা দেয়। ক্যালসিয়াম কোথায় পাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কারণ বার্লি, মটরশুঁটি ইত্যাদি অনেক খাবারে ক্যালসিয়াম মেলে। আবার দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার সহ্য না হলেও দই, পনির ইত্যাদি সহ্য করতে পারেন।”

ক্রুসিফেরাস জাতের সবজি: গিনফিল্ড বলেন, “ব্রকলি, ব্রাসেল স্প্রাউট, কপি ইত্যাদি হল ‘ক্রুসিফেরাস’ জাতের সবজি। পুষ্টিমানে অনন্য হলেও এগুলো পেটে গ্যাস তৈরি করে, সৃষ্টি করে পেটফোলা ভাব। এর কারণ হল এই সবজিগুলোতে ভোজ্য আঁশ থাকে, তাই হজম হতে সময় লাগে বেশি। ফলে তা অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়ার সংস্পর্শে আসে বেশি। ব্যাক্টেরিয়া ভোজ্য আঁশকে গাঁজানো শুরু করলে পেটে গ্যাস জমে। অস্বস্তি এড়াতে প্রচুর পানি পান করতে হবে। প্রয়োজনে হজম বান্ধব ওষুধ সেবন করে নিতে পারেন এগুলো খাওয়ার আগে।”

প্রক্রিয়াজাত ডেজার্ট: গ্রিনফিল্ড বলেন, “প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে যা ‘ফ্লাটুলেন্স’য়ের মাত্রা বাড়ায়। চিনি অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়াকে খোরাক যোগায়, শুরু হয় ‘গাঁজানো’ প্রক্রিয়া। আর তাতেই চিনি থেকে তৈরি হয় গ্যাস। প্রক্রিয়াজাত চিনি খাওয়ার মাত্রা কমাতে হবে। 

চর্বিযুক্ত খাবার: নিউ ইয়র্কের ‘গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট’ ডা. রুপা শার্মা বলেন, ‘অনেক সময় যে অনুভূতিকে পেটে গ্যাস হওয়া মনে হয়, আসলে তা অনেক বেশি চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে ফেলার অনুভূতি। এই খাবারগুলো হজম হতে সময় লাগে বেশি, ফলে পাকস্থলী খালি হতেও সময় লাগে বেশি। এতে মস্তিষ্ক সংকেত পায় পেট ভরে যাওয়ার।”

মাংস: প্রোটিন পাকস্থলীতে থাকে লম্বা সময়, ফলে তৈরি হতে থাকে শর্করা ও ব্যাক্টেরিয়া। তা থেকে সৃষ্টি হয় গ্যাস ও পেট ফোলাভাব। মাংস সময় নিয়ে চিবিয়ে খেলে এই পরিস্থিতি এড়ানো যেতে পারে। আর এড়াতে না পারলেও পরিমাণে কম খেতে হবে ‘রেড মিট’।

কোমল পানীয়: কিছু মানুষ কোমল পানীয় পান করলে তা সরাসরি প্রভাব ফেলে তাদের অন্ত্রে, ভুট ভাট শুরু হয় সঙ্গে সঙ্গে। এতে থাকা অ্যাসিড ও ‘ফ্রুক্টোজ’ হল এমনটা হওয়া মূল কারণ। এক্ষেত্রে ‘আইসড টি’ হবে আদর্শ বিকল্প। 

গম: যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. নাতাশা স্যান্ডি বলেন, “কিছু মানুষের ‘গ্লুটেন’য়ে সংবেদনশীলতা থাকে। কিন্তু তারা সেটা নিজেরাই জানেন না। গম থেকে তৈরি যেকোনো খাবার খেলে যদি পেটে গ্যাস হয় তবে বুঝতে হবে আপনি তাদের মধ্যে একজন। ‘গ্লুটেন’ আছে এমন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।”

ওটস: ওজন কমানো জন্য আদর্শ এবং পুষ্টিকর একটি খাবার ওটস। তবে সবার হজমতন্ত্র তা সহ্য করে না, গ্যাস সৃষ্টি হয়।

বাদাম: প্রোটিন, চর্বি, আঁশ তিনটাই থাকে বাদামে। তিনটাই উপকারী এবং তিনটাই পেটে গ্যাস সৃষ্টি করার জন্য দায়ী। কারণ তা হজম হয় দেরিতে। বিশেষ করে কাজুবাদাম এই সমস্যা সৃষ্টি করে বেশি।

মটরশুঁটি: উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আঁশে পরিপূর্ণ এই খাবার দামেও সস্তা। তবে শুঁটি-জাতীয় যেকোনো খাবার থেকেও গ্যাস হতে পারে।

“মটরশুঁটিতে থাকা বিশেষ ধরনের শর্করা হজমের রস মানব দেহে নেই,” বলেন ক্যালিফোর্নিয়ার নিবন্ধিত কাঁচা খাবার ও ‘আলকালাইন ডায়েট’ বিশেষজ্ঞ ডা. ডারিল জিওফ্রি।

তিনি আরও বলেন, “যখন মটরশুঁটি পেট থেকে মলাশয়ে যায় তখন সেখানকার ব্যাক্টেরিয়া ওই শর্করার সঙ্গে গাঁজানো শুরু করে, যা থেকে হয় গ্যাস।”

এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য ভালোমতো চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। কারণ মুখ থেকেই হজম প্রক্রিয়া শুরু হয়। আর পরিমাণে অল্প খাওয়ার পাশাপাশি এই ধরনের খাবারে সঙ্গে মিষ্টি মেশানো বন্ধ করতে হবে।

ডেজার্ট হিসেবে ফল: যাই খান না কেনো, খাওয়ার পর ফল খেলে সেগুলোর ওপর গিয়ে বসবে ওই ফল। দেরিতে হজম হয় এমন খাবার যেমন- মাংসের পর ফল খেলে সেটা থাকা চিনি শুরু করবে গাঁজানো প্রক্রিয়া। ফলে পেটে গ্যাস হবে।

“খাওয়ার পর ফল যদি খেতেই হয় তবে লেবুজাতীয় ফল, বেদানা, তরমুজ, ইত্যাদি খান। এগুলোতে চিনি কম খনিজ বেশি,” বলেন ডা. জিওফ্রি।

আরও পড়ুন