শারীরিক মিলনে ঘাম ঝরলেও, ব্যায়াম হিসেবে চিহ্নিত করছেন না বিশেষজ্ঞরা।
Published : 23 Apr 2025, 05:53 PM
সঙ্গীর সঙ্গে শারীরিকভাবে মিলিত হওয়া প্রকৃতির স্বাভাবিক ব্যাপার। এভাবেই প্রাণিজগত বংশবিস্তার করে আসছে। কিংবা চাহিদার পূরণ হচ্ছে।
তবে মিলিত হওয়ার পর ক্লান্ত শরীরে মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, কতই না ক্যালরি খরচ হল! তবে কি ব্যায়াম আর সঙ্গম একই রকম উপকারী?
যদিও ক্যালরি খরচ হচ্ছে তবে অন্যান্য শারীরিক কর্মকাণ্ডের মতো ফলাফল দিতে পারে না সহবাস।
কারণ ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ প্রাপ্ত বয়স্ক একজন মানুষের জন্য সপ্তাহে ১৫০ মিনিট ব্যায়ামের সুপারিশ করে। আর শারীরিক মিলন এই পরিমাণ কর্মকাণ্ড প্রতিস্থাপন করতে পারে না।
‘পিএলওএস’ সাময়িকীতে প্রকাশিত ‘এনার্জি এ্ক্সপেনডিচার ডিউরিং সেক্সুয়াল অ্যাক্টিভিটি ইন ইয়ং হেলদি কাপলস’ গবেষণা পত্রে উল্লেখ করা হয়- সঙ্গমের সময় প্রতি মিনিটে ৩.১ থেকে ৪.২ ক্যালরি খরচ হতে পারে। আরও দেখা গেছে, শারীরিক মিলন ও ট্রেডমিলে দৌড়ানোর ফলে হৃদগতি বৃদ্ধি পাওয়ার মাত্রা একই।
যদিও মনে করা হয়- যে কাজে ঘাম ঝরে সেখানেই ক্যালরি পোড়ে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন- ‘কার্ডিও’, ‘স্ট্রেন্থ ট্রেইনিং’ বা ইয়োগা’র মতো ফলাফল সঙ্গম থেকে মিলবে না।
সম্পর্কিত আরও প্রতিবেদন
সঙ্গীর প্রতি শারীরিক আকর্ষণ কাজ না করলে যা জানা উচিত
এই বিষয়ে ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে লন্ডন ভিত্তিক সেক্স থেরাপিস্ট জিজি এঙ্গল বলেন, “ঘাম হলেও সঙ্গম করাকে ব্যায়াম হিসেবে ভাবা ঠিক হবে না।”
বরং তিনি জোর দিয়ে বলেন, “একে বরং আনন্দ উপভোগ হিসেবে দেখা যেতে পারে। কারণ চাহিদা মতো ক্যালরি খরচ না হলেও, সঙ্গম মানসিকভাবে অনেক উপকার করে।”
শারীরিক মিলনে এন্ডরফিন্স হরমোনের নিঃসরণ ঘটে যা ইতিবাচক অনুভূতির জন্ম দেয়। যেমন- সুখ এবং তৃপ্তি। এই ভালোলাগার অনুভূতি স্বাস্থের অন্যান্য বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিতে উৎসাহিত করে। সেটা হতে পারে ব্যায়াম করা কিংবা ‘স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট’ বা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ।
অন্যান্য উপকার
যৌনতার কিছু উপকারিতা স্বল্পমেয়াদি। আবার কিছু ভালো বিষয় জীবনের শেষে গিয়ে প্রকাশ প্রায়।
‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ সেক্সুয়াল হেল্থ’য়ে প্রকাশত ‘দি হেল্থ বেনিফিটস অফ সেক্সুয়াল এক্সপ্রেশন’ গবেষণায় বলা হয়, সহবাসের স্বল্পমেয়াদি উপকারিতার মধ্যে আছে- প্রদাহের সহনশীলতা বাড়ে, রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় এবং ঘুমের মানের উন্নতি ঘটে।
“শুধু তাই নয়, গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়- যারা নিয়মিত সহবাস করেন তারা পেতে পারেন দীর্ঘ জীবন।
আর নারীদের ক্ষেত্রে উপকারের মধ্যে রয়েছে- শ্রোণীদেশের পেশি উন্নত হওয়া, মূত্রাশয়ের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পায় এবং উত্তেজনার পরিমাণ বাড়ে”- মন্তব্য করেন ‘শি-ওলোজি: দি ডিফিনিটিভ গাইড টু উইমেন’স ইনটিমেট হেল্থ’য়ের লেখক ডা. শেরি রস।
সহবাস আনন্দদায়ক হলে দৈহিক উপকার ছাড়াও মিলবে মানসিক প্রশান্তি। যেমন- মন মেজাজের উন্নতি ঘটে, মানসিক চাপ কমে, বিষণ্নতার ঝুঁকি হ্রাস পায় এবং ঘুম মান ভালো হয়।
“আর এজন্য ধন্যবাদ দিতে হয় সহবাসের পর এন্ডরফিন্স এবং ভালো বোধের হরমোন ডোপামিন নিঃসরণ হওয়ার বিষয়টিকে”- জানান ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক এই যৌনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক।
তবে বিশেষজ্ঞরা সাবধান করে জানান- সহবাস যেমন মানসিক চাপ কমায় তেমনি সঙ্গীর সঙ্গ উপভোগ করতেও চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল রপ্ত করতে হবে।
এই ক্ষেত্রে ভালো বই পড়া, ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে বেশি সময় কাটানো, ইয়োগা বা ব্যায়ামের ক্লাস করা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার মতো বিষয়গুলো ভালো থাকার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
আরও পড়ুন