আনন্দের অনুভূতি জাগাতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে ডোপামিন হরমোন।
Published : 13 Nov 2023, 11:31 AM
আনন্দের অনুভূতি যোগান দেয় ডোপামিন হরমোন। মস্তিষ্কে তৈরি হওয়া এই রাসায়নিক অনুভূতি ছাড়াও শারীরিক ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ভূমিকা পালন করেন।
আনন্দের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কোনো কাজে আনন্দ পেলে, সেই কাজ পুনরায় করার অনুপ্রেরণা যোগাতেও ভূমিকা রাখে এই হরমোন।
এই বিষয়ে ফার্মইজি ডটইন’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতীয় চিকিৎসক নিকিতা তোশি বলেন, “ডোপামিন হল ‘নিউরোট্রান্সমিটার’। মানে এটা আমাদের দেহে সংকেত আদান প্রদানে ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি উৎসাহ, স্মরণশক্তি, একাগ্রতা ও আনন্দের অনুভূতিও সামলায়।”
মস্তিষ্কে এই হরমোন তৈরি হয়ে চারটি প্রধান রাস্তা দিয়ে দেহে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিটা রাস্তার কাজ আলাদা।
“যখন আমরা আনন্দ অনুভব করি তখন ডোপামিন নিঃসরণ হয়। ফলে আমরা সেই আনন্দদায়ক কাজটা বার বার করতে উৎসাহ পাই। কারণ সেই কাজটা আমাদের পরিতৃপ্ত করছে”- বলেন ডা. নিকিতা।
ডোপামিনের স্বল্পতা
এই হরমোনের মাত্রা যখন বেশি কমে যায় তখন মেজাজের পরিবর্তন হওয়ার পাশাপাশি শারীরিক কার্যাবলিতেও প্রভাব ফেলে।
যেমন- যে কোষগুলো ডোপামিন তৈরিতে ভূমিকা রাখে সেসব ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শুরু করলে পারকিনসন’স রোগ দেখা দিতে পারে। ডোপামিনের স্বল্পতায় দেখা দেয় মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা।
ডোপামিন স্বল্পতার কারণ
খাদ্যাভ্যাসের কারণে হতে পারে। বিশেষ করে অতিরিক্ত বাজে চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া এর প্রধান কারণ। তবে স্বাস্থ্যকর চর্বি ডোপামিনের মাত্রা বাড়ায়।
শারীরিক কর্মকাণ্ড কম করলেও ডোপামিন কম উৎপন্ন হয়। প্রতিদিনের শরীরচর্চা এই হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে।
ক্রমাগত মানসিক বা শারীরিক চাপে থাকলেও ডোপামিনের মাত্রা কমে। তাই মানসিক চাপ সামলানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
ডোপামিনের মাত্রায় ভারসাম্য বজার রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় ঘুম না হলে এই হরমোনের মাত্রা কমেও যায়।
ডোপামিনের মাত্রা বাড়ানোর উপায়
খাদ্যাভ্যাস এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। অ্যামিনো অ্যাসিড টাইরোসিন’ আছে এরকম খাবার বেশি খেতে হবে। যেমন- কলা, বাদাম, মুরগির মাংস, মাছ, দুগ্ধজাত খাবার, সয়াবিন, পনির, গোটা শষ্য, মটরশুঁটি, গরুর মাংস ইত্যাদি। অর্থাৎ প্রোটিন ধরনের খাবার থাকতে হবে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়।
‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’ যা খারাপ চর্বি হিসেবে পরিচিত। এটা গ্রহণ এড়াতে হবে। ভাজাপোড়া খাবারে এই ধরনের চর্বি বেশি থাকে।
প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার ডোপামিনের মাত্রা বাড়িয়ে মনমেজাজ ভালো রাখতে পারে। যেমন- দই।
জীবনযাপনের পদ্ধতি পরিবর্তন, যেমন- দৈনিক ব্যায়াম করা, পর্যাপ্ত ঘুমানো, সকাল বা বিকালে যখন সূর্যের তাপ কম তখন রোদ পোহানো, মন ভালো রাখে এরকম কাজে নিযুক্ত থাকা, ধ্যান করা ও আনন্দে থাকার চেষ্টা করার মতো বিষয়গুলো ডোপামিনের মাত্রা বাড়াতে পারে।
ভিটামিন ডি-থ্রি, বি-সিক্স, আয়রন ট্যাবলেট বা সাপ্লিমেন্টস গ্রহণের মাধ্যমে ডোপামিন বাড়ানো যায়। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
সামাজিকভাবে মেলামেশা বজায় রাখাও ডোপামিন বাড়াতে সাহায্য করে বলে দেখা গেছে বিভিন্ন গবেষণায়।
যখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া প্রয়োজন
সাধারণভাবে ডোপামিনের মাত্রা চিহ্নিত করার কোনো পদ্ধতি নেই। চিকিৎসকই নির্দিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমে সেটা বুঝতে পারবেন।
যদি সর্বোক্ষণ বিষাদ বোধ করা, মন খারাপ থাকা, আশা না পাওয়া, উৎসাহ হারিয়ে ফেলার মতো বিষয়ের পাশাপাশি শারীরিক আলস্য কাজ করে তবে ডাক্তারের সরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
আরও পড়ুন