শুধু ছাপ পড়া নয়, বার্ধক্য-জনিত অসুস্থতা দূরে রাখা যায় সঠিক খাদ্যাভ্যাসে।
Published : 10 Apr 2025, 03:48 PM
‘বয়স থামানো যাবে না, তবে ধীর করা সম্ভব’— এই কথাটি যেন প্রমাণ করল সাম্প্রতিক একটি গবেষণা।
সুস্থ বার্ধক্যের জন্য প্রতিদিনের খাবারে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস যোগ করার গুরুত্ব নতুনভাবে সামনে এনেছে ইউরোপের বিখ্যাত গবেষণা প্রকল্প ‘ডু হেলথ' এ।
এই গবেষণা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ২,১৫৭ জন বয়স্ক মানুষকে নিয়ে করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের তিন বছর ধরে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছে সুইজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি হসপিটাল জুরিখ।
এখানে দেখা হয় তিনটি বিষয়ে— ভিটামিন ডি, ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস এবং ব্যায়াম— ব্যক্তির স্বাস্থ্য এবং বয়সজনিত পরিবর্তনের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলছে।
কী বলছে গবেষণা
গবেষণার ফলাফল বেশ চমকপ্রদ। দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস গ্রহণ করেছেন, তাদের জৈবিক বার্ধক্য প্রতি বছর এক মাস করে ধীর হয়েছে।
গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে চারটি ‘এপিজেনেটিক ক্লক’— যেগুলো বয়সের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন মাপার একটি আধুনিক পদ্ধতি।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, যারা শুধু ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস-ই নয়, সঙ্গে ভিটামিন ডি এবং ব্যায়ামকে জীবনযাত্রার অংশ করেছেন, তাদের জৈবিক বার্ধক্য আরও ধীর হয়েছে।
শুধু তাই নয়, ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে পড়ে গিয়ে আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি ১০ শতাংশ কমেছে, সংক্রমণের ঝুঁকি কমেছে ১৩ শতাংশ।
আর যারা এর সাথে ভিটামিন ডি ও ব্যায়াম একসঙ্গে করেছেন, তাদের ‘প্রি-ফেইল’ (দুর্বলতা, ক্লান্তি, হাঁটার গতি কমে যাওয়া ইত্যাদি) হওয়ার সম্ভাবনা কমেছে ৩৯ শতাংশ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমেছে ৬১ শতাংশ পর্যন্ত।
যেভাবে কাজ করে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস
নিউ ইয়র্কভিত্তিক পুষ্টিবিদ এবং ‘অ্যাকাডেমি অফ নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিকস’য়ের মুখপাত্র থেরেসা জেন্টাইল রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আর এই প্রদাহ-ই বয়স বাড়ার পেছনে অন্যতম বড় কারণ।”
তিনি আরও বলেন, “ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস শরীরের কোষগুলোর গঠন ভালো রাখে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, এবং ‘সেল মেমব্রেন’ বা কোষঝিল্লি বা কোষের পর্দা সুরক্ষা দেয়। ফলে সুস্থতার পাশাপাশি বয়সজনিত রোগগুলো দূরে থাকে।”
কতটা প্রয়োজন?
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা প্রতিদিন ১ গ্রাম করে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস’য়ের সাপ্লিমেন্ট নিয়েছেন। এটি আসলে খুবই অল্প পরিমাণ— মাত্র ৩ আউন্স বা প্রায় ৮৫ গ্রাম স্যামন মাছেই এর থেকে বেশি ওমেগা-থ্রিস পাওয়া যায়।
থেরেসা জেন্টাইল বলেন, “ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস’য়ের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দৈনিক গ্রহণ মাত্রা নেই। তবে ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ বলছে- প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৫০০ মিলিগ্রাম ইপিএ এবং ডিএইচএ গ্রহণ করাই যথেষ্ট।”
তিনি খাবারের মাধ্যমেই ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস গ্রহণের পরামর্শ দেন, কারণ এতে অতিরিক্ত গ্রহণের ঝুঁকি নেই এবং প্রাকৃতিকভাবে শরীরে ভালো কাজ করে।
যেসব খাবারে মিলবে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস
মাছ ও সামুদ্রিক খাবার: সবচেয়ে প্রচলিত উৎস হল স্যামন মাছ। ৩ আউন্স চাষকৃত স্যামনে থাকে প্রায় ১.৭ গ্রাম ওমেগা-থ্রিস। আর বন্য স্যামনে থাকে ১.২ গ্রাম।
এছাড়া ম্যাকারেল (২ গ্রাম), হেরিং, সারডিন, ট্রাউট, প্যাসিফিক ওয়েস্টার ও টুনা মাছেও পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-থ্রিস।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টাকি, পাবদা, পাঙ্গাশ, রুই, কাতলা ও সরপুঁটির মতো দেশীয় মাছেও আছে ওমেগা-থ্রিস, যদিও পরিমাণে কিছুটা কম।
চিয়া ও তিসির বীজ: যারা নিরামিষভোজী, তাদের জন্য চিয়া বীজ (২ টেবিল-চামচে ৫ গ্রাম) এবং তিসির বীজ (২ টেবিল-চামচে ৩.৬ গ্রাম) চমৎকার উৎস। তিসি তেল থেকেও ওমেগা-থ্রিস পাওয়া যায় (প্রতি চামচে ৬.৭ গ্রাম)।
বাদাম: এক আউন্স বা প্রায় ২৮ গ্রাম আখরোটে পাওয়া যায় ২.৫৭ গ্রাম ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস। অন্যান্য বাদামে তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও স্বাস্থ্যকর চর্বি হিসেবে এগুলোও উপকারী।
ফোর্টিফায়েড খাবার: বর্তমানে অনেক খাবারে ওমেগা-থ্রিস যুক্ত করা হচ্ছে। যেমন— ডিম, দই, দুধ ইত্যাদি। ডিমের ক্ষেত্রে মুরগিকে তিসির বীজ খাওয়ানো হয়। ফলে ডিমেও ওমেগা-থ্রিস পাওয়া যায়।
অনেকেই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন, যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, বাতজ্বর, আলৎঝাইমার’স ইত্যাদি।
অথচ দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় একটু সচেতন হলে, এসব ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।
ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস যুক্ত খাবার বাংলাদেশেও সহজলভ্য। শুধু সঠিকভাবে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
সপ্তাহে অন্তত দুতিনবার দেশীয় মাছ খাওয়া বা নিয়মিতভাবে তিসি বা চিয়া বীজ গ্রহণ করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন
যেসব খাবার ধীর করবে চল্লিশের পরে বার্ধক্যের ধারা