কথাগুলো কি বলবো, নাকি বলবো না?- প্রেমের প্রথম পর্যায়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা জটিল।
Published : 25 Mar 2025, 05:07 PM
প্রেমপর্ব বা ‘ডেইটিং’ জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, ‘শেয়ার করা উচিত কি না?’ আর এমন প্রশ্ন মূলত একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে আসে, যখন পছন্দের মানুষকে নিজের জীবন, অনুভূতি বা অতীত সম্পর্কে কিছু কিছু তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব হয়।
তবে কখনও কখনও, সম্পর্কের প্রথম দিকেই অতিরিক্ত ‘শেয়ারিং’ বা অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আর এই ধরনের আচরণকেই বলা হয় ‘ফ্লাডলাইটিং’।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে টিকটক এবং ‘জেন জি’ সংস্কৃতির মধ্যে, ‘ফ্লাডলাইটিং’- একটি জনপ্রিয় শব্দ হিসেবে উঠে এসেছে।
এই শব্দের মাধ্যমে এমন একটি আচরণ বর্ণনা করা হয় যেখানে সম্পর্কের প্রথম দিকেই অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয়ভাবে নিজের গোপন বা খারাপ অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে ফেলা হয়।
এর মধ্যে পড়ে অতীতের সম্পর্কের সমস্যা বা ব্যক্তিগত ‘ট্রমা’ বা দুর্ঘটনা। একে অপরের প্রতি বিশ্বাস এবং নিরাপত্তা গড়ে তোলার আগে অতিরিক্ত তথ্য আদান প্রদান করা ভিন্ন মাত্রার অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।
‘ফ্লাডলাইটিং শব্দটি আসলো যেখান থেকে
এই শব্দ প্রথম ব্যবহার করেন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক ও লেখক ব্রনে ব্রাউন, যিনি তার ‘দ্য পাওয়ার অব ভালনারেবিলিটি: টেকনিকস অফ অথেন্টিসিটি, কানেকশন অ্যান্ড কারেজ’ বইতে ফ্লাডলাইটিং সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
তার মতে, “সম্পর্কের প্রথম দিকে এত বেশি তথ্য ভাগাভাগি করার মধ্যে আসলে কোনো সত্যিকারের অনুভূতি বা সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। বরং নিজের ভেতরের সুরক্ষার অভাব বা ভয় থেকে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক রক্ষার কৌশল হয়ে দাঁড়ায়।”
‘ফ্লাডলাইটিং’য়ের ক্ষেত্রে সম্পর্কের প্রথম সাক্ষাতেই অতিরিক্ত ব্যক্তিগত বা দুঃখের কথা জানিয়ে দেয়। ফলে দুজনের মাঝে একটি ভ্রান্ত আন্তরিকতার অনুভূতি তৈরি হয়। যা অস্থায়ীভাবে সম্পর্কের মাঝে গভীর সংযোগের অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি আসলে একটি বিপজ্জনক প্রবণতা, যা সম্পর্কের ভিত্তি গড়ার আগেই অনেক কিছু ফাঁস করে দেয়।
যে কারণে খারাপ ‘ফ্লাডলাইটিং’
ভুল ধারণা তৈরি করতে পারে যে, দুই পক্ষ একে অপরের প্রতি যথেষ্ট খোলামেলা এবং আন্তরিক। যদিও বাস্তবে সম্পর্কটি হয়ত তখনও পরিপূর্ণভাবে বিকশিতই হয়নি।
বিশেষত, অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য জানালে সম্পর্কের গভীরতা ও বিশ্বাস তৈরির মতো প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলোকে ব্যাহত করে।
ব্রাউনের বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, ‘ফ্লাডলাইটিং’ আচরণ সঙ্গীকে শারীরিক বা মানসিকভাবে একে অপরের কাছাকাছি আনার অনুভুতি দেয়, তবে সম্পর্কের প্রাথমিক স্তরে সেটা বিপৎসংকেত।
অন্যদিকে কোনো মানুষকে খুব দ্রুত ব্যক্তিগত সমস্যা বা অতীতের যন্ত্রণা জানিয়ে দেওয়ার মানে হতে পারে, তাকে নিজের সমস্যা মোকাবিলা করার দায়িত্বে ফেলে দেওয়া, যা সম্পর্কের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
‘ফ্লাডলাইটিং’ প্রতিরোধের উপায়
প্রশ্ন হল, এই আচারণটি কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়? প্রথমত নিজের অভ্যন্তরীণ আচরণগুলো নিয়ে সচেতন হতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক-বিষয়ক থেরাপিস্ট পায়েল প্যাটেল একই প্রতিবেদনে পরামর্শ দেন, “নিজের অভ্যন্তরীণ অনুভূতি এবং অতীতের পরিস্থিতি নিয়ে কিছু সময় নিজের সঙ্গেই নিজেকে কাজ করতে হবে। কারণ নিজের মধ্যে অস্থিরতা বা অবিশ্বাসের প্রবণতা থাকলে, সেটা আচরণে প্রতিফলিত হবে।”
বিশেষজ্ঞদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হল, সম্পর্কের প্রথম দিকে ছোট ছোট বিষয় ‘শেয়ার’ করতে শুরু করতে হবে।
প্রথম দিকে দৈনন্দিন জীবনের কিছু ছোট ঘটনা বা অনুভূতি আদান প্রদান করা যেতে পারে। তারপর ধীরে ধীরে ব্যক্তিগত বা গুরুতর বিষয়গুলোর দিকে অগ্রসর হলে সম্পর্কের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস গড়ে তোলা
কোনো সম্পর্কের ভিত্তি গড়ে তোলার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বিশ্বাস তৈরি করা।
প্যাটেল বলেন, “বিশ্বাস না থাকলে সম্পর্ক কখনও সফল হতে পারে না। তাই সম্পর্কের প্রথম দিকেই অতি ব্যক্তিগত তথ্য না জানিয়ে, সময় নিয়ে একে অপরকে বোঝা এবং চিন্তা করা উচিত। যখন সত্যিই নিজেকে সম্পর্কে প্রস্তুত মনে হবে ঠিক তখনই গভীরতা প্রকাশ করা ভালো।”
বিশ্বাস ও আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে, দুটি ব্যক্তি একে অপরকে ধীরে ধীরে বুঝে ওঠেন এবং উপলব্ধি করেন। এগুলো সম্পর্কের গঠনমূলক উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয়।
তাই সম্পর্কের গভীরতা ‘ফ্লাডলাইটিং’য়ের মাধ্যমে তৈরি করার পরিবর্তে, এটি ধীরে ধীরে এবং প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হতে দিতে হবে।
আরও পড়ুন
সম্পর্কের উদ্বেগ: প্রেমের আনন্দে কেনো বাসা বাঁধে ভয়?