রাতে ঘুমের সময় ঘাম হওয়ার কারণ আর প্রতিকারের পন্থা

গরমে ঘাম হওয়াই স্বাভাবিক। তবে ঘুমের মধ্যে ঘাম হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2022, 11:46 AM
Updated : 7 August 2022, 11:46 AM

রাতে ঘুম হচ্ছে না ঠিক মত, প্রচণ্ড ঘাম হচ্ছে- বিষয়টা বেশ বিরক্তিকর।

রাতে অনেক ঘাম হওয়ার কারণে নিশাচরের মতো জেগে থাকা অসুবিধাজনক। এর মাত্রা আরও বেশি হয় অন্য কারও সঙ্গে বিছানা ভাগ করে নিলে।

‘নাইট সোয়েট’ বা রাতের ঘাম বিষয়টা কি?

রাতে ঘুমানোর সময় দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াতে তা ঠাণ্ডা করতে আভ্যন্তরিণ প্রক্রিয়ায় শরীর ঠাণ্ডা করার উপায় হয় ঘাম হওয়া।

ঘাম বন্ধ করার সহজ উপায় হল কম তাপমাত্রা বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে ঘুমানো। তবে অনেকে এগুলো ঘাম হওয়া বন্ধ করতে পারেন না। এর নির্দিষ্ট কিছু কারণ আছে।

মেনোপোজ বা রজঃবন্ধ

নিউ ইয়র্কের ‘কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার’য়ের ‘প্রেসবাইটারিয়ান’ হাসপাতালের চিকিৎসক এবং ‘কার্ডিয়াল সার্জন’ মেহমেত ওজ বলেন, “পঞ্চাশের পরে অধিকাংশ নারীদের মেনোপোজ দেখা দেয় এবং এর অন্যতম লক্ষণ হল রাতে গরম লাগা ও ঘাম হওয়া।”

রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “এটা একটা প্রাকৃতিক বিষয় এবং এর লক্ষণগুলো সাত বছর বা তার বেশি সময় স্থায়ী হতে পারে।”

এই লক্ষণ কমানোর কিছু উপায় রয়েছে যেমন- খাবার তালিকা থেকে অ্যালকোহল, মসলাদার খাবার ও ক্যাফেইন বাদ দেওয়া।

সাধারণত রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তাই নরম কোমল বিছানার চাদর ও বালিশের কাভার ব্যবহার করা, বালিশের নিচে বরফের প্যাক রাখা যেতে পারে এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর তা অদল বদল করে নিলে শীতল অনুভব হবে।

এই লক্ষণগুলো দীর্ঘস্থায়ী হলে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করার কথা বলেন তিনি। ওষুধ বা হরমোন থেরাপি থেকে শুরু করে হারানো ইস্ট্রোজেন প্রতিস্থাপন করা এক্ষেত্রে উপকারী বলে জানান এই চিকিৎসক।

ওষুধ

অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস, উচ্চ রক্তচাপের বা অন্যান্য ধরনের ওষুধ খাওয়ার ফলে কখনও কখনও ঘামের অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। ঘাম গ্রন্থি এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এমন ওষুধগুলো মস্তিষ্কের অংশকে প্রভাবিত করার ফলে এমনটা ঘটে থাকে।

রাতে ঘাম বাড়ায় এমন ওষুধ সম্পর্কে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে তা বাদ দেওয়া বা মাত্রার পরিবর্তন করা ভালো ফল দিতে পারে।

রাতে ঢিলেঢালা পোশাক পরা, ঘাম বাড়ায় এমন পাশ বালিশ সড়িয়ে ফেলা, উন্নত ফোমের (মেমোরি ফোম) বিছানা করা ইত্যাদ ঘাম কমাতে সহায়তা করে বলে জানান, ডা. ওজ।

এছাড়াও সম্ভব হলে পাতলা চাদর, বালিশের কভার ও কুলিং প্যাড ব্যবহার করা উপকারী।

উদ্বেগ

উদ্বেগের কারণেও বাড়তে পারে ঘামের মাত্রা। উদ্বেগ, ‘প্যানিক অ্যাটাক’, অগভীর শ্বাস প্রশ্বাস, দ্রুত হৃদস্পন্দন ইত্যাদি এর উপসর্গ।

রাতের ঘাম কমাতে উদ্বেগ কমাতে হবে আর এজন্য এর পেছনের কারণ খুঁজে বের করতে হবে। যদিও তা খুঁজে বের করা বেশ কঠিন। বিশেষত, প্যানিক অ্যাটাক থাকলে।

এক্ষেত্রে ডা. ওজ পরামর্শ দেন, “ব্যায়াম, যোগ ব্যায়াম, ধ্যান, গান শোনা ও স্থির অনুভব করায় এরকম কাজ করতে হবে। যদি বুঝতে পারেন যে উদ্বেগ কাজ করছে তাহলে চিকিৎসকের বা পেশাদার থেরাপিস্টয়ের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।”

হাইপারহাইড্রোসিস

ডা. ওজ বলেন, “হাইপারহাইড্রোসিস একটি অভিনব শব্দ, যার অর্থ শরীর স্বাভাবিকভাবেই নিজের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ঘামে। অতিরিক্ত ঘাম সাধারণত শরীরের এক বা দুটি অংশে হয়, হাতের তালু, পা, বাহুমূল বা মাথা। রাতের ঘাম অনেক সময় হাইপারহাইড্রোসিসের কারণেও হতে পারে।”

এর প্রাথমিক ইঙ্গিতগুলোর মধ্যে একটি হল জেগে থাকা অবস্থায় কোনো পরিশ্রম না করেই প্রচুর ঘাম হতে থাকা।

এই সমস্যা সমাধানে ত্বক বিশেষজ্ঞরা সাহায্য করতে পারেন। সাধারণত, প্রথমে প্রতিষেধক দেওয়া হয়। তবে তা কাজ না করলে ‘লনটোফোরেসিস’ ব্যাবহার করা যেতে পারে।

এতে একটা যন্ত্র পানির মাধ্যমে কম ভোল্টেজে কারেন্ট পাঠায় এবং এতে হাত ও পা ডুবিয়ে রাখতে হয়।

এছাড়াও, ওষুধ, বোটক্স ইত্যাদি করা যেতে পারে। সব কিছু ব্যর্থ হলে সার্জারি করা শেষ সমাধান।

হাইপারথাইরয়েডিজম

থায়রয়েড একটা গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি যা হরমোন তৈরি করে এবং দেহের প্রতিটা অঙ্গকে প্রভাবিত করে। তাই এই গ্রন্থির কোনো ঝামেলা হলে অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গও বিপদে পড়তে পারে।

অতিরিক্ত হরমোনের নিঃসরণ দেহে বাড়তি তাপ উৎপাদন করে ফলে ঘাম বেশি হয়।

এমন সম্ভাবনা থাকলে হরমোন পরীক্ষা করানো যেতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া, প্রয়োজনে রেডিওআয়োডিন থেরাপি নেওয়া ইত্যাদি থায়রয়েড হরমোন গ্রন্থিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে থাকে বলে জানান, ডা. ওজ।

আরও পড়ুন

Also Read: ঘাম রোধে ঘামরোধী প্রসাধনী

Also Read: লোমকূপ আবদ্ধ হওয়া ঠেকাতে

Also Read: ঘাম থেকে সুখের অনুভূতি

Also Read: পায়ের আঙুলে ব্যথা হওয়ার কারণ ও করণীয়

Also Read: ঘাড় ব্যথা কমানোর উপায়