মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন

সন্তান হতে যাওয়া মায়ের মানসিক অবস্থা তার গর্ভস্থ শিশুর ওপর প্রভাব ফেলে।

তৃপ্তি গমেজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2023, 08:55 AM
Updated : 14 May 2023, 08:55 AM

সুস্থ মা সুস্থ সন্তান- বিষয়টা কারও অজানা নয়। কেবল সচেতনতা ও অনুশীলনের অভাবে অনেক মা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।

তাছাড়া মায়েদের মানসিক অবস্থা ঠিকঠাক বুঝে উঠতে না পারার কারণে কম বেশি সবাই মা বাসায় ‘চেঁচামেচি’ করে বলে অভিযোগও করেন।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ‘শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক’ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা বাসার বলেন, “সুস্থ মা সুস্থ সন্তান। মায়ের শারীরিক অবস্থা যেমন শিশুর সুস্থতায় ভূমিকা রাখে একইভাবে মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যও সন্তানের সুস্থ মানসিক বিকাশের সহায়ক।”

“অন্তঃসত্ত্বা নারীর শরীর ও মনের অবস্থা নাজুক থাকে। এই সময় তাকে মানসিকভাবে আঘাত করা বা সে কষ্ট পেতে পারে এমন আচরণ করা মোটেও ঠিক নয়।”

সন্তান হতে যাওয়া মায়ের মানসিক অবস্থা তার গর্ভস্থ শিশুর ওপর প্রভাব ফেলে বলে জানান, এই অধ্যাপক।

এই সময়ে নারীদের শরীর দুর্বল থাকে যার প্রভাব পড়ে তার মনে। অনেক নারীর ক্ষেত্রে তার শারীরিক দুর্বলতা মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়। ফলে অনেকের মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়, অনেকের মধ্যে আবার সন্দেহপ্রবণতা দেখা দেয়।

রুমানা বাসারের মতে, শুধু সন্তান জন্মের আগেই নয় বরং পরবর্তী সময়েও মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত। কারণ মায়ের মন মেজাজ কতটা ভালো, মা কতটা হাশিখুসি ও তৎপর তার ভিত্তিতে শিশুর শৈশবের গাঁথুনি হয়।

বাড়িতে ফিরে যদি মায়ের মুখ ভার দেখা হয় তাহলে কোনো সন্তানের কাছেই স্বস্তির হয় না। ঘরের কর্ত্রী যদি অখুশি থাকে তাহলে বলা যায় ঘরের পরিবেশ অনেকটাই থমথমে থাকে।

মায়ের মানসিক সুস্থতাই এক এক সময়ের এক এক ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে।

গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক যত্ন নিতে সন্তানের বাবাকে সদা তৎপর থাকতে হয়। এই ধরনের পরিস্থতি সামাল দিতে দুজনের মধ্য বিশ্বাস ধরে রাখতে হবে এবং স্ত্রী যদি কোনো কারণে সন্দেহ করে থাকে তাহলে মাথা গরম না করে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে।

পাশাপাশি যতটা সম্ভব স্ত্রীকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। মাঝে মধ্যে স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে গেলে, তার শরীর স্বাস্থ্যের খোঁজ নিলে, ভবিষ্যতে সন্তানকে নিয়ে দুজনে একসঙ্গে পরিকল্পনা করলে স্ত্রীর মনে সন্দেহ বাসা বাঁধার কোনো সুযোগ পাবে না।

অন্যদিকে এই সময় স্বামী যদি স্ত্রীর প্রতি কম মনযোগ ও সময় দেয় এবং কারণে অকারণে রাগারাগি বা ঝগড়াঝাটি করে তাহলে স্ত্রীর সন্দেহ প্রবণতা আরও বেড়ে যাবে।

তাই মা ও শিশুর শারীরিক মানসিক সুস্থতার কথা বিবেচনা করে স্ত্রীর প্রতি ইতিবাচক আচরণ করা ও তাকে সময় দেওয়া উচিত বলে জানান রুমানা বাসার।

সন্তান জন্মের পরে মাকে অনেক নির্ঘুম কাটাতে হয়, সেই সঙ্গে স্তন্যদান করার কারণে মা অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েন, দেহে আসে পরিবর্তন। এই বিষয়গুলো মায়ের মনে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। মাকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে এই পরিবর্তনকে স্বাভাবিকভাবে দেখা ও মাতৃত্বের প্রতিটা যাত্রাকে উৎসাহিত করার পরামর্শ দেন, তিনি।

সন্তান কিছুটা বড় হলে মায়ের কাজের ভিন্নতা বাড়ে। সন্তান লালন পালন, তার পরিচর্যা, লেখাপড়া ইত্যাদি বিষয়গুলোও দেখাশোনা করতে হয়। আর মা যদি কর্মজীবী হয়ে থাকেন তাহলে এই চাপ আরও বেশি।

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সন্তানের জন্য মায়েদের চাকুরি ছেড়ে দিতে হয়। সন্তানের খারাপ ফলাফল, শিষ্টাচার চর্চায় অনিহা ইত্যাদি বিষয়গুলোর জন্য মাকে দোষারোপ করা হয়।

এই বিষয়ে রুমানা বাসার বলেন, “সন্তান যেহেতু দুজনের তাই সন্তানের ভালো খারাপের দায় দুজনকেই সমানভাবে নিতে হবে। তাছাড়া সন্তান লালনপালনের জন্য মাকে যদি চাকুরি ছাড়তে হয় তাহলে তাতে মায়ের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত, জোরপূর্বক কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া ঠিক না।” 

শুধু সন্তান পালন ক্ষেত্রেই নয়, বাড়ির যে কোনো বিষয়ে গৃহ কর্ত্রীর পরামর্শ জানতে চাওয়া, ভালো হলে তা গ্রহণ করা আর তা সম্ভব না হলে তার পরামর্শের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে গ্রহণ করতে না পারায় কারণ ব্যাখ্যা উচিত, এতে মনোমালিন্য এড়িয়ে চলা সম্ভব।

মা’য়ের মানসিক সুস্থতার ওপর ঘরের শান্তির পরিবেশ অনেকটাই নির্ভর করে। অন্যথায় বাড়িতে থমথমে পরিবেশ, কথা কাটিকাটি বা বিবাদ দেখা দিতে পারে যা ঘরে থাকা ছোট শিশু বা বৃদ্ধদের ওপরেও প্রভাব ফেলে।

বৃদ্ধ মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যকেও অবহেলা করা যাবে না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষ আবার শিশুকালের মতো আবেগি হয়ে পড়েন। অনেক মা নিজের চাকুরি ছেড়ে দেন সন্তানদের জন্য, নিজের শরীর ও ত্বকের প্রতিও অবহেলা করে ফেলেন সন্তান মানুষ করতে গিয়ে।

বৃদ্ধ বয়সে ছোট কোনো বিষয়ও অনেক বড় কষ্ট দিতে পারে। 

“এই সময়ে বয়স্কদের চাহিদা খুব কম থাকে। নিয়মিত তাদের খোঁজ খবর নেওয়া, শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন করা, তাদের সঙ্গে বসে কিছুটা সময় কাটানো ইত্যাদি বিষয়গুলোতে মন ভালো রাখে”, রুমানা বাসার।

তাই মায়ের মানসিক সুস্থতায় প্রতিদিন তাদেরকে কিছুটা সময় দেওয়া পরিবারের সকলেরই দায়িত্ব, বলে মনে করেন রুমানা বাসার।