যেসব অভ্যাসে হাড়ের জোড়ে পড়ছে চাপ

একহাতে ভার বহন করা ক্ষতিকর।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 May 2023, 02:34 PM
Updated : 17 May 2023, 02:34 PM

বয়স বাড়ার সঙ্গে হাড়ের সংযোগ স্থলে নানান সমস্যা দেখা দেয়। তবে যতটা না বয়সের দোষ তারচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় জীবনযাপনের পদ্ধতির কারণে।

বেশিক্ষণ বসে থাকা ছাড়াও দৈনিক অনেক অভ্যাস হাড়ের জোড়ে বাজে প্রভাব ফেলে। সেগুলো এড়াতে পারলে বেশি বয়সেও হাড়ের ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি কমানো যায়।

অতিমাত্রায় অলস জীবনযাপন

নড়চড়া কম করলে হাড়ের সন্ধিস্থলে চাপ পড়ে, অসড়তা বাড়ে।

এই বিষয়ে সাবধান করে দিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া’র শরীরচর্চার প্রতিষ্ঠান ‘মেয়ার অর্থপেডিক স্পোর্টস মেডিসিন’ ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পরামর্শ দেয়, “এই কারণে ঘণ্টাখানেক পর পর দাঁড়ানো ও নড়াচড়া করা জরুরি। যাতে হাড়ের সংযোগে পিচ্ছিল পদার্থগুলো স্বাস্থ্যকর অবস্থায় থাকে।”

কানাডার মন্ট্রিয়েল নিবাসী ‘এসি্ই’ নিবন্ধিত ব্যায়াম প্রশিক্ষক র‌্যাচেল ম্যাকফার্সন একই প্রতিবেদনে বলেন, “দিনের বেশিরভাগ সময় কোনো বিরতি ছাড়া শুয়ে বসে কাটানোর পর দাঁড়াতে গেলে কিছু পেশিতে টান পড়ে আর অন্যান্য জায়গায় খিঁচ ধরে।”

যখন এরকম দেখা দেয় তখন দেহ ভারসাম্য হারায়। হাড়ের জোড়ে ব্যথা হয়।

এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রতি ৩০ থেকে ৬০ মিনিট পর পর উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটাচলা করা হালকা ব্যায়াম করা জরুরি।

পর্যাপ্ত পানি পান না করা

যুক্তরাষ্ট্রের ‘অর্থোপেডিক্ট অ্যাসোসিয়েটস’ জানাচ্ছে, পানিশূন্যতা থেকেও হাড়ের জোড়ে সমস্যা হয়। তবে সারাদিন পর্যাপ্ত পানি পানের মাধ্য এই সমস্যা দূর করাও সম্ভব।

ম্যাকফার্সন ব্যাখ্যা করেন, “হাড়ের জোড়ের মাঝে যে তরল পিচ্ছিল পদার্থ রয়েছে, সেটার কারণে আমাদের হাত-পা নাড়তে পারি। যখন এই তরলের অপর্যাপ্ততার কারণে দেখা দেয় জড়তা ও ব্যথা।”

তাই সারাদিন পর্যাপ্ত পানি পান করলে এই সমস্যা এড়ানো যায়।

কর্মক্ষেত্রে চেয়ার-টেবিলের ব্যবস্থা স্বাস্থ্যকর না থাকলে

স্পাইনহেল্থ ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, কাজের জন্য চেয়ারে বাজে ভঙ্গিমায় বসে থাকার কারণে দেখা দেয় ঘাড়, কাঁধ ও পিঠ ব্যথা।

ম্যাকফার্সন সাবধান করে বলেন, “ডেস্কে কাজ করার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে না বসলে হাড়ের ওপর চাপ পড়বেই। যারা কম্পিউটারে কাজ করেন তাদের মাউস ধরার হাত বেশি বাঁকা হয়ে থাকবে না। হাত অনেকখানি সোজা রাখা যায় এরকম ব্যবস্থা রাখতে হবে। না হলে ‘মাউস আর্ম সিন্ড্রম’ দেখা দেবে।”

এছাড়া মনিটর থাকতে হবে এমন অবস্থায় যাতে ঝুঁকে কোনো কিছু দেখতে না হয়। পাশাপাশি চেয়ার বসার পর যাতে পা মেঝেতে স্পর্শ করে থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম না করা

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউটস অন এইজিং’ জানাচ্ছে, বয়সের সঙ্গে ‘স্ট্রেন্থ ট্রেইনিং’ বা শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম করা জরুরি। এটা পেশি গঠনের পাশাপাশি শক্তি বাড়ায়, হাড়ের ও সংযোগ স্থলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

ম্যাকফার্সন এই বিষয়ে বলেন, “স্ট্রেন্থ ট্রেইনিং’ সন্ধিস্থলের স্বাস্থ্য উন্নত করে। পাশাপাশি হাড়ের জোড়ের ব্যথা কমাতেও পারে। সপ্তাহে অন্তত দুতিনবার এই ধরনের ব্যায়াম করা আদর্শ। এর ফলে পেশি, হাড় ও কোষের সমন্বয়ে ভারসাম্য রক্ষা হয়। ব্যথা কমে।”

এছাড়া বয়সের সাথে যে পেশির ক্ষয় হয়, সেটা প্রতিরোধেও কাজ করে ‘স্ট্রেন্থ ট্রেইনিং’।

অতিরিক্ত ওজন

‘জন হপকিন্স আর্থ্রাইটিস সেন্টার’য়ের তথ্যানুসারে, অতিরিক্ত ওজন হাড়ের জোড়ে বাড়তি চাপ ফেলে। যে কারণে হাড়ের ক্ষয় হয় দ্রুত। তবে স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখার জন্য সুষম খাবার খাওয়ার পাশাপাশি ব্যায়াম করলে সন্ধিস্থলের ক্ষতি সময়ের সাথে সারানো যায়।

ম্যাকফার্সন বলেন, “অতিরিক্ত ওজন হওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে হাঁটুতে। দেহের মধ্যভাগেও চাপ পড়ে। ফলে হাঁটাচলায় সমস্যা দেখা দেয়। পাশাপাশি হাড়ক্ষয় রোগ ও পেশি ক্ষয়ের অন্যতম কারণ স্থূলতা।”

চলিষ্ণুতার ব্যায়াম না করা

‘মোবিলিটি এক্সারসাইজেস’ বা সচলতা ধরে রাখার বিভিন্ন ব্যায়াম হাড়ের সংযোগ স্থল নমনীয় ও পিচ্ছিল রাখতে সাহায্য করে।

ম্যাকফার্সন বলেন, “যে কোনো ধরনের কাজ করার আগে শরীরের জড়তা কাটাতে ‘মোবিলিটি এক্সারসাইজ’ করা জরুরি। এটা শরীর গরম করতে সাহায্য করে, হাড় ও পেশির অসাড়তা কাটায়। ফলে কাজ করতে সুবিধা হয়।”

না হলে দেখা দিতে পারে ব্যথা, জড়তা ও সন্ধিস্থলের সমস্যা।

এছাড়া শরীর গরম করে নেওয়ার মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্র উদ্দিপ্ত হয়। ফলে কাজের জড়তা কাটে। আর রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে পেশিতে পুষ্টি পৌঁছায় সহজে।

একদিকে ভার বহন করা

বাজার করে ফেরার সময় একহাতে ভারী ব্যাগ বহন করা মোটেই ভালো অভ্যাস না। এর ফলে যেদিকে ভার বহন করা হচ্ছে সেদিনের হাড়ে, সন্ধিস্থলে, পেশিতে চাপ পড়ে বেশি। ফলে দেহের ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তাই দুই হাতে সমানভাগে ভার বহন করা কিংবা এক কাঁধে নয় দুই কাঁধেই ব্যাকপ্যাকের বেল্ট ব্যবহার করতে হবে।

আরও পড়ুন:

Also Read: মাড়িতে ব্যথা হলে সেসব খাবার খাওয়া ঠিক না

Also Read: হাত ব্যথার সঙ্গে বিভিন্ন রোগের সম্পর্ক

Also Read: হাড়ের সংযোগ সুস্থ রাখার উপায়

Also Read: ঘাড় ব্যথা নিরাময়ের ব্যায়াম

Also Read: ১৪ মিনিট বসে থাকার প্রভাব পোষাতে পারে এক মিনিটের ব্যায়াম