কিছু শব্দের জন্য জহিরের নিবিড় মোহ ছিল- পোস্টার, প্রভাতফেরি, বেঁচে থাকার যুদ্ধ ইত্যাদি।
Published : 23 Aug 2023, 04:32 PM
শুরু করেছিলেন প্রতিবাদী সাহিত্য দিয়ে, তারপর সাংবাদিকতা। একসময় চলচ্চিত্রকেই শিল্পচর্চার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন। হয়ে ওঠেন এদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের চিরস্মরণীয় নাম।
কথাশিল্পী ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান (১৯ অগাস্ট ১৯৩৫ - ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২) একাধারে বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্র এবং ইংরেজি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। ১৯৬১ সালে ‘কখনো আসেনি’ দিয়ে তার চলচ্চিত্র-যাত্রা, তা ক্রমশ ইতিহাস সৃষ্টি করে ‘সোনার কাজল’, ‘কাচের দেয়াল’, ‘সঙ্গম’, ‘বাহানা’, ‘বেহুলা’, ‘জ্বলতে সুরজকে নিচে’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘স্টপ জেনোসাইড’ ও ‘আ স্টেট ইজ বর্ন’ এর মতো একগুচ্ছ সাড়াজাগানো, পুরস্কৃত এবং বাঁকবদলকারী চলচ্চিত্রকর্মের সূত্রে।
‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ এবং ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ নামে দুটো চলচ্চিত্রের কাজ যদিও তিনি সমাপ্ত করতে পারেননি, তবু তার অসমাপ্ত কর্মের অঙ্গীকার আজকের নবীন চলচ্চিত্রকর্মীরা ধারণ করে চলেছেন তাদের যাবতীয় দায়বদ্ধ চলচ্চিত্র-তৎপরতায়।
কর্মসূত্রে জহির রায়হানকে চিনতেন কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন। তার স্মৃতিকথা জহিরকে চিনতে সাহায্য করে। প্রথম পরিচয়ের কথা বলতে গিয়ে তিনি লিখেন, “বয়সে খুবই তরুণ। ছোটখাটো শরীর। সাদা সাপটা চেহারা। ঝকঝকে চোখ। প্রথম দৃষ্টিতে সে-ই কেড়ে নেয় অন্যপক্ষের আকর্ষণ।” তিনি জানাচ্ছেন, মানিক বন্দোপাধ্যায় ছিলেন জহির রায়হানের প্রিয় পাঠ্য। জহির বলতেন, 'এমন দেখার চোখ আমি কবে পাব!' কখনো কোন লেখার মধ্যে ভীষণ ভেঙে পড়ে বলতেন, ‘আচ্ছা, যা বলতে চাই, পারি না কেন? ষোল আনাই পারব, এমন অলৌকিক আশা নিজের কাছে দাবি করা এখনই অন্যায় হবে। কিন্তু যেটুকু চাই, তার কিছু তো পাব। মনের মধ্যে কথা টগবগ করছে, কলমের মুখ বোবা। অসহ্য।’
একবার একজন জহিরকে দেখিয়ে বলেছিল, ‘ওই বসে আছে, দেমাগের দেমাগী রা-ই-টার।’ সেটা শুনে প্রচণ্ড মন খারাপ করেছিলেন জহির এবং পরবর্তিতে রাবেয়া খাতুনকে বলেছিলেন, ‘একটি দল আমাকে একেবারে অপাঙ্ক্তেয় করে রাখতে চাইছে। জানেন, মাঝেমধ্যে মনে হয় দেই সবকিছু ছেড়ে। হঠাৎ একদিন সাহিত্য ধরেছি। হঠাৎ একদিন ছেড়ে দেব। যাবে ল্যাঠা চুকে। সাধের ঝঞ্ঝাট আর ভালো লাগে না।...অন্যদের কথা জানিনে, আমার জন্য এটা খুব কষ্টের। অহংকার জিনিসটা কেউ জন্মসূত্রে পায়। কারও জীবনে আরোপিতভাবে আসে। কাউকে আবার শিখতেও হয় প্রয়োজনে। আমি তো এর কোনোটাতেই পড়িনি। আমার সৃষ্টি যখন আমার দৃষ্টিকেই পীড়া দেয়, তখন অন্যখান থেকে এসব শুনতে হলে বড় ভেঙে পড়ি।’
কিছু শব্দের জন্য জহিরের নিবিড় মোহ ছিল- পোস্টার, প্রভাতফেরি, বেঁচে থাকার যুদ্ধ ইত্যাদি। স্মৃতিচারণা ছিল জহিরের প্রিয় প্রসঙ্গ। ফেলে আসা গ্রামীণ জীবন আর অগ্রজ শহীদুল্লা কায়সারের প্রতি নিবিড় ভালোবাসা। পারিবারিকসূত্রে আপনজন হলেও জহিরের জীবনে তার আরও ভূমিকা ছিল। জহির যে মতবাদে বিশ্বাস করতেন তার প্রথম মন্ত্রগুরু ছিলেন শহীদুল্লা কায়সার। শহীদুল্লা কায়সার জেলে গেলে জহিরের সুর ভাঙা ভাঙা শোনাত। চোখে ছেয়ে থাকত মেঘ-বিদ্যুৎ, একসঙ্গে। মাথা নিচু করে রাখতেন। সামলে উঠতে সময় নিতেন। কাছাকাছি বয়সের ভাইয়ের জন্য ভাইয়ের এতটা টান সাধারণত কম দেখা যায়।
জহির বিশ্বাস করতেন না- গল্প লেখার কাঁচামাল নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিষছোবলে আংশিক ক্ষয়ে যাওয়া ঢাকার মন-মানস, দাঙ্গা, দেশভাগ, মহাজনি মহাজের সমস্যা, ঐতিহ্য, মূল্যবোধ বাঁচিয়ে এক শ্রেণির মানুষের তীব্র সংগ্রাম। খরায় শক্ত নিষ্ফলা মাটি, ঝঞ্ঝা-বন্যার ধোয়া প্রকৃতি, রহস্যে ভয়াল পাতাল, বোধবুদ্ধিহীন নির্বাক শিশু, নিবিড় তন্দ্রার তৈরি পরাবাস্তবের অলৌকিক স্বপ্ন- খুঁজলে কোথায় গল্প নেই! জহির বলতেন, ‘মালমসলা চারদিকে ছড়ানো। নেওয়ার মতো সক্ষম হাতের অভাব। মজবুত নির্মাণ তাই সম্ভব হচ্ছে না।’ বলতেন, ‘রবীন্দ্রনাথ যুগোত্তীর্ণ তার অসাধারণ প্রতিভার গুণে। আমরা তার কাছাকাছি রেঞ্জের মানুষ নই।’
জহির রায়হান বিশ্বাস করতেন, উপলব্ধির গভীরতা না এলে গল্প সৃষ্টি অসম্ভব। বলতেন, ‘চলতি সাহিত্যে মাঝেমধ্যে প্রকৃতি বড় উপেক্ষিত। প্রকৃতিকে রবীন্দ্রনাথ বা বিভূতিভূষণ যেভাবে মানুষের মনের সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়েছেন, এমন আর কে পারল!’ এক ধরনের উত্তেজনা নিয়ে বলতেন, ‘গ্রাম নিয়ে লিখতে হবে। নাগরিক স্রোত থেকে মাঝেমধ্যে কেটে পড়তে হবে গ্রামে। বিভূতিভূষণ শহরে মাস্টারি করতেন, কিন্তু মন বনবাসী হয়ে থাকতো গ্রামে। নয়তো পথের পাঁচালীর মতো বই লেখা সম্ভব হতো না। একটা উপন্যাসের ছক রয়েছে মনের মধ্যে। দেখবেন ধা করে একদিন লিখে ফেলে তাক লাগিয়ে দিয়েছি আপনাদের।... কথাসাহিত্যের ধরাবাঁধা ধ্যানধারণা, আঙ্গিক ভাঙতে শুরু করেছে বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী থেকে।’
জহির রায়হান তার স্ত্রী সুমিতা দেবীকে ‘মিঠু-বিপুলের মা’ সম্বোধন করে একটি দীর্ঘ চিঠি লিখেছিলেন। তার ভাষায়, ‘এটা কোনো পরমপত্র নয়। উপদেশলিপি নয়। হতাশার আগুনে দগ্ধ একটি মানুষের করুণ আকুতিও নয়। এটা হলো দীর্ঘ বছর ধরে ঘটে যাওয়া একটি অসাধারণ বিয়োগান্ত নাটকের সাধারণ যবনিকা পতন।’ চিঠিতে উঠে এসেছে জহির রায়হানের বাস্তব জীবনের রূঢ় সব অভিজ্ঞতা ও আকাঙ্ক্ষার কথা।
জহির লিখেছেন, ‘আমি দেখেছি, নিদারুণ যন্ত্রণায় ভুগে ভুগে, প্রতিদিন, প্রতিরাতে, প্রতিক্ষণে দেখেছি। লম্পট যারা, অসাধু যারা, মিথ্যেবাদী যারা, চরিত্রহীন আর মুখোশধারী যারা, তারা জিতে গেল। সমাজ তাদের বাহবা দিল। তারা বিজয়ী বলেই হয়তো, মানুষের দল তাদের পক্ষই নিল। আমার কথা কেউ শুনল না, আমার ব্যথা কেউ বুঝতে চেষ্টা করল না। আমার সততার কেউ কোন মূল্য দিল না।’
তিনি আরও লিখেছিলেন, ‘কখনো মনে হতো আমরা বড় সুখী/ কখনো মনে হতো আমরা বড় দুঃখী/ কখনো মনে হতো আমরা বড় শান্ত/ কখনো মনে হতো আমরা বড় অশান্ত…এ জীবনের কাছ থেকে আমরা কী চেয়েছিলাম/ কী পেয়েছি/ কী পাইনি/ তার হিসাব-নিকাশ করে আর লাভ নেই…আমরা সবাই এক একটা পাগল।’
জহির রায়হান তার ‘পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ’ প্রবন্ধে লিখেছেন, “পাকিস্তানের গত তেইশ বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল, পাকিস্তান কখনো জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা শাসিত হয়নি।...পাকিস্তানের এই মৃত্যুর জন্য শেখ মুজিবুর রহমান ও তার দলও দায়ী নয়।" ‘অক্টোবর বিপ্লব ও সোভিয়েত চলচ্চিত্র’ প্রবন্ধে লিখেছেন, “আধুনিক সভ্যতার সবচেয়ে স্মরণীয় অবদান হচ্ছে দুটো। একটি সিনেমার জন্ম। অপরটি সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্ম। দুটোই বিপ্লব। একটা চারুকলার ক্ষেত্রে, অন্যটা সমাজব্যবস্থার ক্ষেত্রে।" এই প্রবন্ধ দুটোতে জহিরের ভাবনার ছাপ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
জহির রায়হানের অন্তর্ধান নিয়ে রহস্য চলছিল বহুবছর। ভোরের কাগজের এক সময়ের তরুণ স্টাফ রিপোর্টার জুলফিকার আলি মাণিক এ রহস্যভেদের কাজটি করেছিলেন ১৯৯৯ সালে, যার রিপোর্ট প্রকাশিত হয় সেই বছরের পহেলা সেপ্টেম্বর। তার প্রতিবেদনে অমীমাংসিত বিষয়টি উপসংহারে আসে, প্রমাণিত হয় জহির রায়হান নিখোঁজ নন, গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী সামরিক এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যের জবানিতে এবং মাঠপর্যায়ে তাদের সনাক্তকরণে বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে উঠে এসেছে। পাশাপাশি উঠে এসেছে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষোভের কথাও। এতদিন পর বিষয়টি প্রকাশ করার বিষয়ে সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সৈনিক আমির হোসেন বলেন, “কেউ জিজ্ঞেস করেনি আমাকে, মুক্তিযুদ্ধের কথা তো এখন কেউ শুনতেই চায় না। তাই ভুলে যেতে চেয়েছি যে আমিও মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম।”
জহির রায়হানের ছেলে অন্য রায়হান লিখেছেন ‘পিতার অস্থির সন্ধানে’। এ লেখা পিতাকে খুঁজে ফেরা এক পুত্রের দীর্ঘপথ পরিক্রমার গল্প। তার মতে, “মূল ঘটনা চাপা পড়ে গিয়েছিল বিভ্রান্তি আর অর্ধসত্য ঘটনার মধ্যে। তবে জহির রায়হানসহ ৩০ জানুয়ারির ওই যুদ্ধের মধ্যে পড়া বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনা কিংবা পুলিশের সদস্যদের প্রায় সবাই শহীদ হয়েছিলেন, এটা সত্য। সে সময় সঠিকভাবে তদন্ত করলে নিশ্চয় ২৯ বছর ধরে জহির রায়হানের ঘটনাকে একটি মিস্ট্রি বানিয়ে রাখা যেত না। জহির রায়হানের পরিবারের সদস্যদের অনেকেরই দৃঢ় ধারণা, মিরপুরের ওই ঘটনার পেছনে রয়েছে পরিকল্পিত চক্রান্ত। জিয়াউল হক লোদীর মেয়েও মনে করেন, এই ঘটনার আড়ালেও ঘটনা ছিল।”
জহির রায়হানের আরেক ছেলে অনল রায়হান প্রশ্ন তুলেন, “১৯৭২ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রেস ক্লাবে জহির রায়হান এক প্রেস কনফারেন্সে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পেছনের নীলনকশা উদঘাটনসহ মুক্তিযুদ্ধের সময়ে অনেক গোপন ঘটনার নথিপত্র তার কাছে আছে, যা তিনি প্রকাশ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই করে নেওয়া অনেক মন্ত্রীর মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বিতর্কিত ভূমিকা নিয়েও তিনি ডকুমেন্টস সংগ্রহ করেছেন বলে কনফারেন্সে বলেছিলেন। এই হুমকিই তার জীবনের জন্য পাল্টা হুমকি হয়েছিল কিনা, আজ কে বলবে? ...এসব পুরোনো খবরের পাতাগুলো ওলটাতে ওলটাতে মনে হবে এক জীবন্ত মানুষের জন্য রাষ্ট্র, পত্রিকা বা মানুষজনের চিন্তার অন্ত নেই। কিন্তু এসব ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলো না কেন এবং তা নিরুত্তর রয়ে গেল কেন?”
‘আমাদের কালের নায়কেরা’ বইয়ের ভূমিকায় এর সম্পাদক মতিউর রহমান লিখেছেন, “জহির রায়হান বাংলার সেই বিরল কথাশিল্পী, চলচ্চিত্রকার ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী, যিনি মানুষের মুক্তির প্রেরণায় তার সৃজনশীল হাত এবং প্রবল পদাতিক সত্তা একই সঙ্গে সক্রিয় রেখেছেন। সাহিত্যজীবনের শুরুতেই ‘ওদের জানিয়ে দাও’ কবিতার মধ্য দিয়ে তিনি সাম্রাজ্যবাদী-উপনিবেশবাদী শক্তিকে জানাতে চেয়েছেন- তিনি তাদের বিরুদ্ধে, গণমানুষের পক্ষে কথা বলতে এসেছেন।”
মতিউর রহমান জহির রায়হানকে ‘অমর একুশের মানসসন্তান’ বলে অভিহিত করেছেন। ‘একুশের গল্প’, ‘আরেক ফাল্গুন’ কিংবা ‘একুশে ফেব্রুয়ারী’ উপন্যাস অথবা ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্র পরিচালনার মধ্য দিয়ে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে বেঁধেছেন অমর ধ্রুবপদে। তার মতে ‘একুশের গল্প’ এবং ‘আর কত দিন’ উপন্যাসের তপু তো আসলে জহির রায়হানই!
তথ্যসূত্র:
১. মুক্তিযুদ্ধের শেষ রণাঙ্গন: জহির রায়হান অন্তর্ধান রহস্যভেদ, জুলফিকার আলি মাণিক, সুবর্ণ প্রকাশনী, ২০০২
২. পিতার অস্থির সন্ধানে, অনল রায়হান, সাপ্তাহিক ২০০০, অগাস্ট ১৯৯৯
৩. স্মৃতিসংগ্রহ, রাবেয়া খাতুন, কথাপ্রকাশ ২০১৫
৪. আমাদের কালের নায়কেরা, সম্পাদনা মতিউর রহমান, প্রথমা ২০১১
৫. জীবনের একটু আগুন চাই, মতিউর রহমান, সাপ্তাহিক একতা, ৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৮
৬. হঠাৎ বাবার পঁচিশ পাতায়, অনল রায়হান, অনুপম প্রকাশনী, ২০১৫
৭. পরিচয়, কলকাতা থেকে প্রকাশিত পত্রিকা, জুলাই ১৯৭১
৮. তরঙ্গ, সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ৫০তম বার্ষিকী স্মারক, ১৯৬৭