গাছেরা যে কীভাবে কাঁদে আমি জানি না। আমার দাদুর নাম আখরেম। গাছেরা কীভাবে কাঁদে, তিনি আমাকে তা দেখিয়েছিলেন।
Published : 23 Dec 2017, 10:46 AM
সেটা ছিল অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ। শীতকাল। কনকনে ঠাণ্ডা পড়ছিল আগের রাতে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা ঘর থেকে বের হলাম। সময়টা ছিল সকাল।
দাদু বললেন, ‘ফেদ্রা, তুমি আজ সকালে কী দেখতে চাও?’
আমি সবকিছু সতর্কতার সঙ্গে দেখতে লাগলাম। অস্পষ্ট, চিন্তিত আর নীরব লাগছিল চারপাশ। শুধু সূর্যই তখন আমার কাছে উজ্জ্বল হয়ে দেখা দিল।
আমি দাদুকে বললাম, ‘দেখো দাদু, সূর্য কেমন জ্বলজ্বল করছে।’
‘হুম’ বলে দাদু একমত হলেন। বললেন, ‘আর কিছু ? ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখো।’
আমি চারদিকে লক্ষ্য করলাম। কোথাও দরকারি কিছু দেখতে পেলাম না। দাদু মুচকি হেসে তার ঘন ধূসর দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে সামনের গাছগুলোর দিকে তাকালেন। আমি তাকে অনুসরণ করলাম। রাতের তুলনায় সেগুলোতে বেশ পরিবর্তন দেখলাম।
আমি বললাম, ‘চেরি গাছে অনেকগুলো হলুদ পাতা দেখা যাচ্ছে।’
দাদু আবারও মুচকি হাসলেন। যুবকের মতো জ্বলজ্বল করছে তার চোখ। প্রথমে তিনি একটা গাছ দেখলেন। তারপর অন্য গাছের কাছে গেলেন।
আমাকে কাছে ডেকে বললেন, ‘খুব গভীরভাবে দেখো এটা।’
চেরি গাছগুলো দেখতে লাগলাম আমি। সেগুলো বেশ লম্বা ও তরতাজা। এগুলো আমার বাবা দুই-তিন বছর আগে কোথা থেকে যেন কিনে এনেছিলেন। রাস্তার ধারেই সেগুলো রোপন করেন তিনি।
আমি দাদুকে বললাম, ‘দেখো দেখো, শিশিরগুলো কেমন করে ওই লম্বা গাছগুলোর পাতার উপর পড়ছে।’
‘এগুলো শিশির নয় ফেদ্রা, ওগুলো কান্না।’ বলেই ব্যাখ্যা করতে আরম্ভ করলেন দাদু। আমিও দাদুর সঙ্গে যোগ দিলাম।
দাদু: তুমি এটাকে কীভাবে দেখো ফেদ্রা? গতরাতে প্রথমবারের মতো বরফ আঘাত হেনেছে। দেখো গাছের পাতাগুলো কেমন কালো হয়ে গেছে।
আমি: দেখছি দাদু।
আমি খুব তাড়াতাড়ি জবাব দিলাম, যাতে করে দাদু তার গল্পটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
দাদু: এই পাতাগুলো কেমন ঠাণ্ডায় জমে আছে। এগুলো এখন আর নরম হবে না। তারপর যখন সূর্য আলো ফেলবে তখন বরফ গলতে থাকবে এবং গাছগুলো কাঁদতে থাকবে।
আমি দাদুকে বাধা দিতে পারলাম না। বরং দেখলাম, হ্যাঁ, সত্যিই তো গাছগুলো কাঁদতে আরম্ভ করেছে।
আমি: তারা কি অনেক সময় ধরে কাঁদবে দাদু?
দাদু: এখন আর বেশি কাঁদবে না তারা। শিগগিরই পাতাগুলো হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে যাবে। তারপর বরফগুলো তাদের ঢেকে ফেলবে।
দাদু লম্বা গাছটার কাছে গেলেন, একটা ভেজা পাতা তুলে নিলেন হাতে। আমি লক্ষ্য করলাম দাদু দীর্ঘক্ষণ আর হাসছেন না।
আমি বুঝতে পারলাম দাদু খুব দুঃখ পাচ্ছেন। আহারে! গ্রীষ্মকাল এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল!
গল্পটি বেলারুশের শিশুতোষ গল্প সংকলন ‘দি হোয়াইট স্টোর্ক ইন দি স্কাই’ থেকে নেওয়া। এর মূল লেখক পাভেল কভালিওভ।
অলঙ্করণ- শিল্পী সমর মজুমদার