ভুলটা কোথায় তা জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, “আমরা এটাকে স্বাভাবিকভাবে এবং মৌসুমি দৃষ্টিভঙ্গিতে নিয়েছি যে, এ বছর ডেঙ্গু এসেছে, পরের বছর আসবে না।”
Published : 10 Jul 2023, 01:27 AM
ডেঙ্গুর বিস্তার ঠেকাতে না পারাকে প্রশাসনিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখতে চান সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন।
মহামারী ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ের এই বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে বলেছেন, ডেঙ্গু এখন আর মৌসুমি রোগ হয়ে থাকবে না। শীত কমে আসায় এখন সারা বছরই ডেঙ্গু থাকবে। কিন্তু এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রশাসনিক সতর্কতা নেই বলে আক্ষেপ করেছেন তিনি।
রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোচনা অনুষ্ঠান ইনসাইড আউটে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, সবাই মিলে পরিকল্পিত উপায়ে লড়াই করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কলকাতা এর উদাহরণ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফেইসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সম্প্রচার করা হয় ইনসাইড আউটের এই সর্বশেষ পর্বটি।
গত দুই দশক ধরেই দেশে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে, তবে গত পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছর পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
চলতি বছর এরই মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার রোগী, মৃত্যুর সংখ্যা ৭৩। এবার বর্ষা আসার আগে থেকেই রোগীর সংখ্যা বেশি।
এ পরিস্থিতিকে ‘জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মুশতাক হোসেন।
তিনি জানান, ডেঙ্গুর যে চারটি ধরন আছে, তার প্রতিটিই বাংলাদেশে সক্রিয়।
তিনি মনে করেন, স্বাস্থ্য প্রশাসন ও নগর কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতিকে ‘গা ছাড়া ভাবে’ দেখছে। এ কারণেই এ অবস্থা।
মুশতাক বলেন, “সরকারের উচিত এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া। এটাকে মহামারীর মত পরিস্থিতি হিসাবে মোকাবেলা করা।”
এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে শহর থেকে গ্রাম- সবাইকে একীভূত করে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “সরকারের সমন্বিত পদক্ষেপের কমপক্ষে পাঁচ বছর চালাতে হবে, যাতে আমরা ডেঙ্গু থেকে মুক্ত হতে পারি।”
ডেঙ্গুর বিস্তার যেভাবে হয়েছে, তা স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য ‘উদ্বেগজনক ও খারাপ লক্ষণ’ মন্তব্য করে মুশতাক হোসেন বলেন, “পরিস্থিতি দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে। যেভাবে ২০১৯ সালে আমরা দেখেছি, এরপর বিস্তার তেমন ছিল না।
“মৃত্যুর সংখ্যা সেই সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ ছিল। গত ২০২২ সালে ২০১৯ সালের মৃত্যুর সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যায়। এ বছর আমাদের ধারণা, আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ২০২২ সালকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।“
‘গুরুত্ব না দেওয়ার’ ফল
প্রতি বছর একই চিত্র কেন- এই প্রশ্নে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা বলেন, “আমরা এটাকে স্বাভাবিকভাবে এবং মৌসুমি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছি যে, এ বছর ডেঙ্গু এসেছে, পরের বছর আসবে না। হ্যাঁ, এটা ঠিক অতীতে আমরা দেখেছি, কোনো বছর ডেঙ্গু মহামারী বা বিস্তারের পর পরের এক বা দুই বছর হয় না।”
কিন্তু ডেঙ্গুর ধরন বেড়ে যাওয়ায় সে পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ার কথা তুলে ধরে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, “২০১৯ সালের আগের বছরগুলোতে মানুষের মধ্যে কেবল এক ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাস ছিল। সেক্ষেত্রে তারা একই ভাইরাসের অন্য ধরন দ্বারা আক্রান্ত হয়নি। কিন্তু বর্তমানে একাধিক ধরন ছড়িয়ে পড়ছে।
“২০২২ সালে আমরা দেখেছি, ডেঙ্গু ভাইরাস-১, ২, ৩ ও ৪ সব ধরন ছড়িয়েছিল। এই বছরও সবগুলো ছড়াচ্ছে। মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায়, যখন এক ব্যক্তি দুইবার দুই ধরনের ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়। তারা এক ধরনের ভাইরাস দ্বারা দুইবার সংক্রমিত হয় না। তবে, তারা দুই ধরনের ভাইরাস দ্বারা দুইবার, তিন ধরনের ভাইরাস দ্বারা তিনবার সংক্রমিত হতে পারে।”
মহামারী মোকাবেলায় বাংলাদেশ অতীতে সমন্বিত পদক্ষেপ নিয়ে সফল হওয়ার উদাহরণ টেনে মুশতাক হোসেন বলেন, “১৯৬০ এর দশকে বাংলাদেশে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব হয়েছিল, প্রচুর মানুষ এই রোগে মারা গেছে। পরে সরকার ও জনগণ ম্যালেরিয়া মোকাবেলায় খুব আন্তরিক হয়, রোগ প্রতিরোধ ও ভেক্টর বা মশা নিয়ন্ত্রণে। আমরা সফল হয়েছিলাম।”
ডায়রিয়া, কলেরা, ফাইলেরিয়ার মত রোগের ক্ষেত্রে সমন্বিত পদক্ষেপের কারণে সফল হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য বিভাগ, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ প্রত্যেকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে এসেছে। তাহলে আমরা কেন বাংলাদেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না?”
সরকারি পদক্ষেপের অপর্যাপ্ততা নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “প্রথম বিষয় হচ্ছে, এটা যে গুরুতর সমস্যা, তার রাজনৈতিক স্বীকৃতি থাকতে হবে। যাতে সরকারে সব অঙ্গ আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসে।… কিন্তু এটাকে তারা এখন রুটিন ও স্বাভাবিক কাজ হিসাবে নিয়েছে।”
মুশতাক বলেন, “ডায়রিয়াও বাংলাদেশে বড় সমস্যা ছিল। কিন্তু এটা এখন মৌসুমি হয়ে গেছে। এটা সময় সময়ে আসে, আমরা যথাযথভাবে পদক্ষেপ নিই।
“ডেঙ্গু ডায়রিয়ার মত নয়। এটা দিনকে দিন বড় সমস্যায় পরিণত হচ্ছে। এটা বিস্ফোরণের মত ছড়িয়ে পড়ছে। এটা কেবল সংখ্যাগতভাবে ছড়াচ্ছে না, জ্যামিতিক হারেও বাড়ছে। সুতরাং এটাকে মহামারীর গুরুত্ব দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে।”
‘এভাবে চলবে না’
ডেঙ্গু মোকাবিলায় সিটি করপোরেশন যেভাবে কাজ করছে, সেই কৌশলে তারা সফল হতে পারবে বলে মনে করেন না মুশতাক হোসেন।
শহর ছাড়িয়ে ডেঙ্গু গ্রামেও ছড়িয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, “বাংলাদেশের ৮০-৯০ শতাংশ জেলা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে।
“এইডিস মশার বংশবিস্তারের সুবিধাজনক পরিস্থিতি প্রতিটি শহর ও গ্রামেই রয়েছে। সুতরাং কেবল সিটি করপোরেশন এটা করতে পারবে না। তারা জোর চেষ্টা চালাচ্ছে ঠিক, কিন্তু তারা রুটিন কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে।
“তারা কী করছে? প্রতি ওয়ার্ডে মাত্র ১২-১৩ জন কর্মী আছে। তারা সকালে ও সন্ধ্যায় জীবাণুনাশক ছিটায়। এই স্প্রে করা হচ্ছে রাস্তায়, এটা ঘরেও পৌঁছানো উচিত। তাদেরকে বড় বড় ভবনে যাওয়া প্রয়োজন।”
ভুল কোথায় হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা করে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির পিএইচডি ডিগ্রিধারী এই গবেষক বলেন, “কমিউনিটিকে জানানো বা সম্পৃক্ত না করলে এই কাজ কেবল সিটি করপোরেশন কর্মীদের দ্বারা কোনোভাবে সম্ভব হবে না। সুতরাং এখানে গণআন্দোলন দরকার, সিটি করপোরেশনের বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি হাজার শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবককে সম্পৃক্ত করতে হবে।
“মাত্র দুদিনের প্রশিক্ষণ দিয়েই কার্যকর স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলা যায়। তাহলে তারা মশা নিয়ন্ত্রণে অসাধারণ কাজ করতে পারবে। তারা বাসায় বাসায় যাবে, যারা দেখবে কারও জ্বর রয়েছে কি-না, তাদেরকে হেলথ সেন্টারে আসতে বলবে।“
কমিউনিটি পর্যায়ে উদ্যোগ নিলে মশা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা দেওয়ার কাজও সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি।
সচেতনতামূলক প্রচার ও বিজ্ঞাপন যথেষ্ট হলেও বাস্তবিক অর্থে তার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান ড. মুশতাক হোসেন বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলেছে, যোগাযোগ যথেষ্ট নয়, কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করতে হবে, রিস্ক কমিউনিকেশন অ্যান্ড কমিউনিটি এনগেজমেন্ট।”
কলকাতাকে অনুসরণের পরামর্শ
ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশের মত ডেঙ্গুর ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা গেলেও তাদের সমন্বিত উদ্যোগে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে চলে আসার কথা তুলে ধরেন মুশতাক হোসেন।
তিনি বলেন, “কলকাতায় তারা মানুষকে সফলতার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছে। আমাদের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়েরও বিস্তৃত পরিকল্পনা ছিল। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার পর তারা খুব ভালো একটা গাইডলাইন তৈরি করেছে। কিন্তু এটার বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
“উচু থেকে পাড়া-মহল্লা পর্যন্ত সব জায়গায় সরকারের বিভিন্ন অংশকে তারা সম্পৃক্ত করেছে। তারা প্রস্তাব করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি হবে, যাতে সরকারের ১৫টি অঙ্গের প্রতিনিধি থাকবে। পাশাপাশি সুশীল সমাজ, ধর্মীয় নেতাসহ অন্যদেরকে নিয়ে।”
একই ধরনের কমিটি সিটি করপোরেশন থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত করা এবং স্বেচ্ছাসেবকদের কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
মুশতাক বলেন, “ওয়ার্ডগুলোকেও জোনভিত্তিক ভাগ করা হয়েছে। এসব কমিটি স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে পারবে, এমন বিধানও রাখা হয়েছে। ফলে পাড়া-মহল্লায় সব জায়গায় মশক নিধন কিংবা রোগ প্রতিরোধে যথেষ্ট উদ্যোগ লক্ষ্য করা গেছে।
“এটা যদি বর্তমানেও কাজ করে থাকে, তাহলে এটা মশা নির্মূল এবং ডেঙ্গু মোকাবেলার ক্ষেত্রে কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে ভালো উদাহরণ। সরকার যদি রিসোর্স না দেয়, তাহলে কাজ করবে না। অর্থনৈতিক, জনশক্তিগত এবং লজিস্টিকস রিসোর্চ এক্ষেত্রে রয়েছে। সুতরাং, যদি রিসোর্স না থাকে তাহলে পরিকল্পনা কোনো কিছুই না।”
তিনি বলেন, “আমি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে বলব, আপনারা সারা বাংলাদেশে এই ধরনের কমিটি কেন করছেন না? অন্তত যে ৫৫-৫৭ জেলায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, সেখানে এসব কমিটি করা দরকার। প্রত্যেক কমিটি সেখানে সক্রিয় হওয়া দরকার।
“তারা হয়ত বলতে পারে, আমাদের বাজেট নাই। জনস্বাস্থ্যের এমন সমস্যার ক্ষেত্রে বাজেটের সংকট কেন হবে?” সুতরাং আমি শুরুতে যেটা বলেছি, সরকারকে প্রথমে স্বীকার করতে হবে এটা জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা। এটা মোকাবেলার জন্য যা প্রয়োজন সবকিছু বরাদ্দ করতে হবে।”
ডেঙ্গু কেন সারা বছরের রোগ?
আগে বছরের একটা নির্দিষ্ট মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও এখন সারা বছরই এইডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ থাকে বলে রোগটি বছর জুড়েই থাকবে বলে সতর্ক করেন মুশতাক হোসেন।
তিনি বলেন, “কর্মক্ষেত্র, বাসা ও সড়কের পরিচ্ছন্নতা আমরা নিশ্চিত করিনি। শহর ও গ্রামকে পরিষ্কার রাখতে না পারার ব্যর্থতা প্রথম কারণ। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন, আমাদের দেশ ও বিশ্বের তাপমাত্রা উষ্ণ হচ্ছে।
“এমনকি শীতকালেও তাপমাত্রা এমন নিচে নামছে না যে, মশা ডিম পাড়তে পারবে না। ফলে ডিম পাড়ার উপযুক্ত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা সেখানে রয়েছে। এ কারণে এইডিস মশার সংখ্যা শীতকালেও কমে আসছে না।”
তিনি বলেন, “কেবল বৃষ্টির পানি নয়, আমরা দৈনন্দিন কাজ, নির্মাণকাজ, কারখানার কাজ প্রভৃতিতে পরিষ্কার পানি ব্যবহার হয়। আমরা বোতলের পানি খেয়ে অর্ধেক রাস্তায় ফেলে দিই, পলিথিন ব্যবহার হয়।
“বৃষ্টির পানি ছাড়াও এসব পানি প্লাস্টিকের পাত্র, প্লাস্টিকের বোতল ও পলিথিনে জমা থাকে। ফলে, এইডিস মশা তাদের ডিম ছাড়ে এবং বাচ্চা হয়। সুতরাং তাপমাত্রা, আমাদের বাসস্থান ও কর্মক্ষেত্র পরিষ্কার রাখতে ব্যর্থতা এবং পরিষ্কার পানির প্রাপ্যতা- এসব চলমান থাকায় পুরো বছরজুড়ে মশা জন্মানো চলতে থাকে এবং বছরজুড়ে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়।”
সারা বছর পর্যবেক্ষণে থাকুক মশা
আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বছরে কেবল তিনবার এইডিস মশার জরিপ করছে। কিন্তু এইডিস মশা অব্যাহত পর্যবেক্ষণে থাকা উচিত।
আইইডিসিআরের মাধ্যমে পৃথক পর্যবেক্ষণ চালু রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, মশা কীটনাশকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী শক্তি গড়ে তোলে। এ কারণে কীটনাশকের বিরুদ্ধে মশার প্রতিরোধ ক্ষমতাও সারা বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
“যাতে আমরা মশার বংশবৃদ্ধির ভালো চিত্র পেতে পারি এবং আক্রান্ত মানুষকে উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা দিতে পারি।”
‘ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা হোক তিন ভাগে’
ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় হাসপাতালগুলো এখন হিমশিম না খেলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে পরিস্থিতি পাল্টাতে পারে বলে সতর্ক করেছেন মুশতাক হোসেন।
তিনি বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করতে হবে, যাতে প্রাথমিকভাবে তারা রোগীকে সেখানে নিয়ে মশারীর ভেতরে আলাদা করে রাখতে পারে এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল জরুরি ও গুরুতর রোগীদের জন্য থাকে।
“এর মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে এটা কমিউনিটি পর্যায়ে দেখভাল করা হবে এবং শিশু, গর্ভবতী নারী ও বয়োঃবৃদ্ধ, ও অসংক্রামক রোগে আক্রান্তদের পর্যবেক্ষণে রাখার সুযোগ তৈরি করতে হবে হাসপাতালে। যাতে তারা গুরুতর অবস্থার দিকে গেলে দ্রুত আইসিইউতে স্থানান্তর করা যায়। রোগীদের তিনভাগে ভাগ করে আমরা চিকিৎসা দিতে পারি।“
অক্টোবর পর্যন্ত এই ব্যবস্থা চালু রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “কেবল ঢাকা শহর নয়, বাংলাদেশের সব জেলাকে এভাবে প্রস্তুত করতে হবে, যাতে প্রত্যেক রোগীকে সংশ্লিষ্ট লোকজন দেখভাল করতে পারে। মশারির ভেতরে নিয়ে আসা এবং চিকিৎসার আওতায় আনতে পারলে, মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা কমানো যাবে।”
মুশতাক হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতি, তাতে হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগী মোকাবেলা করতে পারবে। মুগদা হাসপতালে দ্বিগুণের বেশি রোগী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, ঢাকা মেডিকেল, মিটফোর্ড, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ড এখনও ফাঁকা আছে।”
“আমরা কেবল হাসপাতালের তথ্য পাই। দেখা যাবে, হয়ত হাসপাতালে একজন রোগী আছে, আবার ২০-৩০% হাসপাতালে বাইরে থেকে যাচ্ছে। কারণ, তাদের হয়ত অবস্থা অত গুরুতর না হওয়ায় তারা হাসপাতালে আসছেন না।”
ডেঙ্গু ছাড়া আর কোনো ভয় আছে?
এই প্রশ্নে ড. মুশতাক চিকুনগুনিয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
তিনি বলেন, “২০১৭ সালে বাংলাদেশে চিকনগুনিয়ার মহামারী ছড়িয়ে পড়েছিল। ইতোমধ্যে ৬ বছর পার হয়েছে। পরের বছর বা তারপরে হয়ত চিকনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব আবার হতে পারে।
“এইডিস মশার মাধ্যমে জিকা ভাইরাসও ছড়ায়। ইয়েলো ফিভার আফ্রিকাতে পুরো বছর থাকে, ভারতেও এটা ধরা পড়েছে। এটা বাংলাদেশেও যে কোনো সময়ে আসতে পারে, কারণ এই ভাইরাসের ভেক্টরও এইডিস মশা।”