ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি ‘চিকিৎসা না পেয়ে’: মেয়র তাপস

মেয়র বলছেন, রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বাসায় গিয়ে চিকিৎসা করাতে বলা হয়েছে। পরে রোগীর পরিস্থিতি আরো বেশি খারাপ হয়েছে। এতে বেড়েছে মৃত্যু।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2024, 12:05 PM
Updated : 20 March 2024, 12:05 PM

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যু হার বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে ‘যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ার’ অভিযোগ এনেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

বুধবার দুপুরে ভূতের গলি সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এই মন্তব্য করেন।

এক প্রশ্নের মেয়র বলেন, “যে বিষয়টা সবচেয়ে পীড়াদায়ক তা হলো যে, গত বছর মৃত্যুর হার খুবই বেড়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষেত্রে আমরা বলেছি, স্বাস্থ্যসেবাকে আরো নিশ্চিত করতে হবে।

“গত বছর কিছু বিষয় আমরা লক্ষ্য করেছি, রোগীদেরকে প্রাথমিক পর্যায়ে বলা হয়েছে হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বাসায় গিয়ে চিকিৎসা করলেও চলবে।

“পরবর্তীতে দেখা গেছে সেই রোগীর পরিস্থিতি আরো বেশি খারাপ হয়েছে। পরে তিনি যখন ভর্তি হয়েছেন, তখন দেখা গেছে তাকে সেভাবে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া যায়নি। এতে করে মৃত্যুর হার বেড়ে গেছে।”

মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে সভায় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশে ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। এর মধ্যে ১৭০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ আক্রান্ত ১০০ জনের মধ্যে দশমিক ৫৩ জন মারা গেছেন।

একই সময়ে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ লাখ ২৮ হাজার ৫৯০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ১০৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা শতকরা শুন্য দশমিক ০৪ শতাংশ।

অর্থাৎ ব্রাজিলের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর হার বেশি ১০ গুণ, ভারতের তুলনায় বেশি ৬ গুণ।

একই বছর ভারতের ৯৪ হাজার ১৯৮ জন আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৯১ জনের। মৃত্যুর হার শুন্য দশমিক শুন্য ৯ শতাংশ।

মেয়র তাপস পৃথিবীর অনেক দেশের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলেন, “ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারাবিশ্বে বিশেষ করে, যে সকল দেশে মৌসুমী বৃষ্টি হয় তথা বর্ষা প্রবণ অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এইডিস মশা বেশি হয়।

“সেসব দেশের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে আমরা দেখেছি, তাদের তুলনায় আমাদের ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে, আমাদের দেশে রোগীরা স্বাস্থ্যসেবাটা সঠিকভাবে পাচ্ছে না।”

২০১৯ সালে ঢাকা শহরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৫ হাজারের মত হলেও মৃত্যু হয়েছিল ২০০ এর নিচে।

গত বছর ঢাকা শহরে রোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার। কিন্তু মৃত্যু ১ হাজার ৭০০ এর বেশি।

মেয়র বলেন, “পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট যে, স্বাস্থ্যসেবাকে আমাদের আরো গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা রোগীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করব। সে বিষয়ে সিটি করপোরেশন পর্যাপ্ত কাজ করছে। আমাদের পরিধি অনেক বৃদ্ধি করেছি।

“আমাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সময় বৃদ্ধি করেছি। আমাদের কর্মীরা আসলে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে কি না, কর্মপরিকল্পনা পরিপালন করছে কি না ইত্যাদি বিষয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে তদারকি করছি। সে ক্ষেত্রে আমরা মনে করি, আমাদের প্রয়াস বা কর্মপরিকল্পনা ঠিক আছে। কিন্তু আমাদেরকে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে করে একটি মৃত্যুও না ঘটে।”

গত বছর শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়েছে এবং অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছে জানিয়ে মেয়র বলেন, “এটা অত্যন্ত পীড়াদায়ক। আক্রান্ত ও মৃত্যু হার কমাতে আমাদেরকে যৌথভাবে আরো সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।”

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে আরো বেশি কঠোরতা দেখানো হবে বলেও জানান মেয়র তাপস।

ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আওলাদ হোসেন, ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামান, প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানসহ কর্মকর্তা ও কাউন্সিলররাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ইফতার বিতরণ

পরে মেয়র তাপস পুরান ঢাকার শ্যামপুরে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করতে যান।

১৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বাবুলের সৌজন্যে ওয়ার্ডের আওতাধীন ২১টি মসজিদের ১৫০ জন ইমাম, মুয়াজ্জিন, খতিব ও খাদেমের মধ্যে ২৫ কেজি চাল, ৩ কেজি করে পোলাওয়ের চাল ও চিনি, ৫ লিটার সয়াবিন তেল, ২ কেজি করে মসুর ডাল ও ছোলা, ১ কেজি খেজুরসহ ২৪ ধরনের ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

শ্যামপুর এলাকায় ৫৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মাসুদের সৌজন্যে ২ হাজার ৫০০ বাসিন্দার মাঝে ৫ কেজি চাল, এক কেজি করে চিনি ও ডাল, এক লিটার তেল সহ ৮ ধরনের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন।