“সব মিলিয়ে আপনাদের দাবি-দাওয়াগুলো পূরণে আমরা ১২ সপ্তাহ সময় চেয়েছি।“
Published : 08 Mar 2025, 11:40 AM
তিন মাসের মধ্যে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরাম।
শনিবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে এসে কর্মবিরতি শুরু করা চিকিৎসদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক চিকিৎসক সায়েদুর রহমান।
এ সময় তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সম্মতিপত্র আসার পর তারা প্রক্রিয়া শুরু করবেন।
দাবি পূরণে সময় চেয়ে চিকিৎসক সায়েদুর রহমান বলেন, "এই কাজটি শেষ করতে ২০ থেকে ২৫ কার্যদিবস লাগবে। সব মিলিয়ে আপনাদের দাবি-দাওয়াগুলো পূরণে আমরা ১২ সপ্তাহ সময় চেয়েছি। এখানে দুটি মন্ত্রণালয় জড়িত আছে। আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ের সম্মতি নিয়ে কাজটা করছি। বিষয়টি নিয়ম মেনে করতে হচ্ছে।"
এরপর কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন চিকিৎসারা।
বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরামের পক্ষে চিকিৎসক মোহাম্মদ আল আমিন এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান গণমাধ্যমের সামনে বলেছেন আগামী ১২ সপ্তাহের মধ্যে সাড়ে সাত হাজার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের জন্য সহকারী, সহযোগী ও অধ্যাপক পদে সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টির মাধ্যমে প্রমোশনের ব্যবস্থা করা হবে। আগামি ৫ থেকে ৬ সপ্তাহের মাঝে প্রথম ফাইল এর প্রমোশনের কাজ সম্পন্ন করবেন। সরকারের এই প্রতিশ্রুতিতে চলমান কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়েছে।”
এছাড়া আশ্বাস দেওয়া ১২ সপ্তাহের মধ্যে যদি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে ফের কর্মবিরতিতে যাওয়া হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।
বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরামের পক্ষে চিকিৎসক মোহাম্মদ আল আমিনের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা এসেছিল শুক্রবার।
সেই কর্মসূচি অনুযায়ী পদোন্নতি ও সব ধরনের বৈষম্য নিরসনের দাবিতে সকালে তিনদিনের কর্মবিরতিতে নামে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরাম।
কর্মসূচি অনুযায়ী শনিবার ১০টা থেকে টানা তিন দিন সরকারি হাসপাতালে দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করার কথা ছিল চিকিৎসকরা। দাবি আদায় না হলে মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণ দিবস কর্মবিরতিতে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
তবে জরুরি বিভাগের সেবা এই কর্মসূচির আওতামুক্ত রাখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরাম।
শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে চিকিৎসকদের অবস্থান নিতে দেখা যায়।
কর্মবিরতিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা, জরুরি সেবা চলবে
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরামের দাবিগুলো হল, চিকিৎসা শিক্ষার মানোন্নয়ন ও এমবিবিএস ডিগ্রির বৈশ্বিক স্বীকৃতি বজায় রাখতে পদোন্নতিযোগ্য সব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অতি দ্রুত ও ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি নিশ্চিত করা। অন্তঃ ও আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করা। তৃতীয় গ্রেড পাওয়া সব যোগ্য চিকিৎসককে নির্দিষ্ট সময় পর দ্বিতীয় ও প্রথম গ্রেডে পদোন্নতি দিয়ে ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করা।
বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরামের সদস্য সচিব চিকিৎসক মো. বশির উদ্দিন শনিবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, তাদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে শুক্রবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী চিকিৎসক সায়েদুর রহমানের সঙ্গে তারা বৈঠক করেছেন।
“ তিনি দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন।"
চিকিৎসক নেতা বশির উদ্দিন বলেছিলেন রোববার সব হাসপাতালে কর্মবিরতি চলবে এবং তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে অবস্থান নিবেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি জানিয়েছিল, দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করে চিকিৎসকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। নইলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা দীর্ঘস্থায়ী সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শনিবার থেকে তিন দিনের কর্মবিরতির ঘোষণা আসে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের আরও কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকেও।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন, সোসাইটি অব সার্জনস অব বাংলাদেশ, সোসাইটি অব নিউজরোলজিস্ট অব বাংলাদেশ, সোসাইটি অব প্লাস্টিক সার্জনস অব বাংলাদেশ, এসোসিয়েশন ফর দি স্টাডি অব লিভার ডিজিজেস বাংলাদেশ দ্য চেস্ট অ্যান্ড হার্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সোসাইটি অব কোলন অ্যান্ড রেক্টাল সার্জনস এ বিষয়ে পৃথক বিবৃতি দিয়েছে।
নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের বহির্বিভাগে ভাঙচুর
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দুই ঘণ্টার কর্মবিরতির কারণে কিছু হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা বন্ধ ছিল। এতে রোগীরা দুর্ভোগে পড়েন।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের বহির্বিভাগে ভাঙচুর করেছেন রোগী স্বজনরা।
ওই হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক চিকিৎসক হুমায়ুন কবির হিমু শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কর্মবিরতির কারণে লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তারা চিকিৎসকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায়।
“রোগীর লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে নিনসের অভ্যর্থনা কক্ষ ভাংচুর করেছে। এ সময় কয়েকজন চিকিৎসকের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়ায় রোগীর স্বজনরা। তারা ক্ষিপ্ত হয়ে চিকিৎসককে হেনস্তা করতে যায়।”