বর্তমানে গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন সেই অভিনতা।
Published : 26 Apr 2024, 12:21 PM
অবশেষে খোঁজে পাওয়া গেল ‘আম কাঁঠালের ছুটি’ সিনেমায় ‘মইন্না’ চরিত্রে অভিনয় করা সেই লিয়নকে। তার খোঁজ পেতে তিন দিন আগে ফেইসবুকে পোস্ট করেছিলেন নির্মাতা মোহাম্মদ নূরুজ্জামান।
‘লিয়ন, তোকে খুঁজছি’ শিরোনামে ওই পোস্টে এই নির্মাতা জানিয়েছিলেন, একটা পুরস্কার কমিটি থেকে ফোন করে তার কাছ থেকে লিয়নের ফোন নম্বর চেয়েছে।
লিয়নকে ‘আম কাঁঠালের ছুটি’ সিনেমায় যুক্ত করেছিলেন ‘আদিম’ খ্যাত নির্মাতা যুবরাজ শামীম। সেই যুবরাজও জানতেন না, লিয়ন কোথায় আছেন। লিয়নের কাছের বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে তার পরিবারের সঙ্গে যাদের সখ্যতা ছিল; তাদের কাছেও খোঁজ করেছেন। কিন্তু পাওয়া যায়নি লিয়নকে।
বুধবার নির্মাতা যুবরাজ শামীমের ফেইসবুকে অন্য একটি আইডি থেকে যোগাযোগ করেন লিয়ন। জানান, গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকায় থাকেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সকালে ‘মইন্না’র সাথে গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকায় গিয়ে সাক্ষাৎ করেন নির্মাতা নূরুজ্জামান ও যুবরাজ শামীম।
লিয়ন আহমেদ পেশাদার কোনো অভিনয়শিল্পী নন। থাকতেন টঙ্গীর এক ঘুপচিতে। ২০১৭ সালের একেবারে শুরুর দিকে সিনেমাটির দৃশ্য ধারণ শেষ করেন নির্মাতা। করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর দিকেও যোগাযোগ ছিল তার সাথে। কিন্তু তার কিছুদিন পরই লাপাত্তা হন লিয়ন।
‘আম কাঁঠালের ছুটি’ নির্মাতা মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন, “২০১৭ সালে সিনেমার শুটিং শেষ হওয়ার পর খুব একটা টঙ্গী এলাকায় যাইনি বলে ওর সাথে আর দেখা হয়নি। পরে ডাবিংয়ের জন্য ও নারায়ণগঞ্জে এসেছিল, কিন্তু বয়ঃসন্ধিকালের স্বাভাবিক নিয়মে কন্ঠস্বর বদলে যাওয়ায় ওর সংলাপে কন্ঠ দেয় মুন্না নামের আরেক ছেলে। সেটাই ছিল ওর সাথে শেষ দেখা।”
লিয়নকে কেন খুঁজছিলেন নির্মাতা
গেল বছর মোহাম্মদ নূরুজ্জামান পরিচালিত 'আম কাঁঠালের ছুটি' সিনেমাটি সীমিত সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। দেশে-বিদেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবেও দেখানো হয়।
নির্মাতা নুরুজ্জামান বলেন, “সিনেমা মুক্তির আগেও ওর সাথে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। একটা অসমর্থিত সূত্রে জেনেছিলাম, লিয়ন ময়মনসিংহে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। ভেবেছিলাম পোস্টার, পত্রিকা, টেলিভিশন কিংবা ইউটিউবে নিজের ছবি দেখে লিয়ন হয়ত যোগাযোগ করবে।”
২০২০ সালের পর থেকে টঙ্গীতে আর কেউ দেখেনি লিয়নকে। প্রায় চার বছর ধরে সে কোথায় আছেন, কেমন আছেন; জানে না কেউ। ‘আম কাঁঠালের ছুটি’ সিনেমাটি যখন বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে ডাক পাচ্ছিল, তখন থেকেই লিয়নের খোঁজ করছিলেন নির্মাতা নূরুজ্জামান। কিন্তু কোথাও তার হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না।
এবার এই সিনেমাটি 'মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার ২০২৩' এ তিনটি বিভাগে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছে। সেরা নির্মাতা, সেরা চলচ্চিত্র এবং সেরা অভিনেতা- এই বিভাগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনাটি ঘটল ‘সেরা অভিনেতা’র মনোনয়ন পেয়েছেন সেই লিয়ন আহমেদ।
‘আম কাঁঠালের ছুটি’ সিনেমায় প্রধান চরিত্র বলতে ‘মইন্না’ চরিত্রটি। গ্রামের ডানপিটে এক বালক। বয়স ১১ কিংবা ১২। এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্যই লিয়ন পেয়েছেন সেরা অভিনেতার মনোনয়ন।
এই বিভাগে লিয়ন ছাড়াও দুজন গুণী অভিনেতা পেয়েছেন চূড়ান্ত মনোনয়ন। একজন ‘ফ্রাইডে’ ওয়েব ফিল্মের জন্য নাসির উদ্দিন খান, অন্যজন ‘বাবা, সামওয়ান’স ফলোয়িং মি’র জন্য শহীদুজ্জামান সেলিম।
দেওয়া হলো স্মার্ট ফোন
বৃহস্পতিবার গাজীপুরের বোর্ডবাজার সংলগ্ন এলাকায় লিয়নের সাথে সাক্ষাৎ করেন নির্মাতা নূরুজ্জামান ও যুবরাজ শামীম। এসময় লিয়নকে দেয়া হয় একটি স্মার্ট ফোন। যেন আর যোগাযোগে সমস্যা না হয়। ‘সেরা অভিনেতা’ হিসেবে মইন্না চরিত্রটির চূড়ান্ত মনোনয়ন প্রাপ্তির সংবাদ ছাপা হওয়া পত্রিকাটিও লিয়নের জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন নির্মাতা নূরুজ্জামান।
লিয়ন জানান, মহামারীর সময় জীবিকার তাগিদে টঙ্গী ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে গিয়েছিলেন। পরে থিতু হন গাজীপুরের বোর্ডবাজারে। বর্তমানে সেখানে তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তাকে খোঁজ করার বিষয়টি পরিচিত একজনের মারফত জানতে পারেন। পরে যুবরাজ শামীমের সঙ্গে অন্য একটি আইডি থেকে যোগাযোগ করেন।
নির্মাতা নুরুজ্জামান বলেন, “বহুদিন পর লিয়নের সাথে দেখা। লম্বায় আমাকে ছাড়িয়ে গেছে, গোঁফ-দাড়িও বেশ পরিপুষ্ট। তবে স্বভাবে আগের সেই শিশুসুলভতা এখনও মুছে ফেলতে পারেনি। সেই প্রথম দিনের মতোই কাচুমাচু চেহারা আর সারা শরীর দিয়ে কথা বলার প্রবণতা রয়ে গেছে। জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে এসেও লিয়নের সারল্য বিন্দুমাত্র টোল খেয়ে যায়নি দেখে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগল।”
এ মুহূর্তটিকে ভীষণ আনন্দ আর তৃপ্তির বলেও মন্তব্য করেন নূরুজ্জামান।