শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে সত্যজিৎ রায়ের ‘গ্যাংটকে গণ্ডগোল’ অবলম্বনে নির্মিত ওয়েব সিরিজ ‘সাবাশ ফেলুদা’, সেখানে ফেলুদার ভূমিকায় থাকছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।
Published : 04 May 2023, 02:29 PM
সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী চরিত্র ফেলুদার ভূমিকায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর সব্যসাচী চক্রবর্তীকে দেখা বাঙালি দর্শক সেই একই চরিত্রে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে মানতে পারবে? এ অভিনেতা জানাচ্ছেন, তিনি আশাবাদী।
পরমব্রত অভিনীত ওয়েব সিরিজ ‘সাবাশ ফেলুদা’ অবশেষে মুক্তি পেতে যাচ্ছে, যা নির্মিত হয়েছে সত্যজিৎ রায়ের গ্যাংটকে গণ্ডগোল অবলম্বনে।
এ সিরিজের টিজার প্রকাশের পর থেকেই সোশাল মিডিয়ায় আলোচনা শুরু হয়েছিল, ভক্তদের অনেকেই বলছিলেন, ফেলুদা চরিত্রে পরমব্রতকে ঠিক মানাচ্ছে না। মুক্তির একদিন আগে তার জবাব দিয়েছেন এ অভিনেতা।
আনন্দবাজারে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, অনেকের কাছে ফেলুদা হিসাবে তাকে ‘বেমানান’ মনে হলেও কাজ দেখার পর সেই ধারণা বদলাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
“এটার জন্য আমরা কিন্তু প্রস্তুত ছিলাম। বাঙালির কাছে সেন্টিমেন্টাল বিষয় খুব বেশি নেই। যা আছে, তার মধ্যে একটা অবশ্যই সত্যজিৎ রায় এবং ফেলুদা। যাদের কাছে থেকে নেতিবাচক মন্তব্য এসেছে, তাদের মধ্যে তিন ধরনের গোষ্ঠী রয়েছে।”
পরমব্রতর ভাষায়, প্রথম গোষ্ঠীর দর্শক হলেন তারা, যারা ‘সত্যিই জেনুইন’।
“তারা শুধু সমাজমাধ্যমেই নয়, সর্বত্র রয়েছেন। যাদের খারাপ লাগা যেমন আছে, তেমনই ভালো লাগাও আছে। নতুন একটা কাজ নিয়ে কৌতূহল, উৎসাহ রয়েছে।
“এদের পাশাপাশি রয়েছে দ্বিতীয় গোষ্ঠী। যারা হয়তো কোনো এক অভিনেতাকেই তাদের স্মৃতির মণিকোঠায় বসিয়ে রেখেছেন। কিংবা বইয়ের পাতা থেকে পড়ে কল্পনায় এক বিশেষ ছবি এঁকে রেখেছেন। ফলে সেই ছবির সঙ্গে আমায় মেলাতে পারছেন না। তাই স্বাভাবিকভাবেই একটা রেজ়িস্ট্যান্স তৈরি হচ্ছে। এদের দিকটাও আমি সত্যিই বুঝি। হয়তো সিরিজ়টা দেখার পর এদের ধারণা বদলেও যেতে পারে।”
আর তৃতীয় গোষ্ঠী কারা? পরমব্রত বলছেন, যারা শুধুই ‘নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য’ সব ব্যাপারেই কোনো না কোনো মতামত দেন।
“এত নেতিবাচক মন্তব্য সত্যিই ভালো লাগতে পারে না। তবে এমন একটা কাজ করতে গেলে এগুলো যে হবে, সেটা জেনেই এগোতে হয়।”
এ অভিনেতা স্পষ্ট করেই বলেছেন, এতদিন ধরে অভিনয়, পরিচালনা আর প্রযোজনা করার পর সব রকম পরিস্থিতির জন্য ‘একটা নার্ভ তৈরি হয়ে গেছে’ তার। তারপরও সময়ে সময়ে তাকেও দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়।
“যেহেতু আমি অনেক ধরনের কাজ একসঙ্গে করি, তাই নিজেকে এসবের থেকে একটু দূরে রেখে পুরো বিষয়টা দেখার অভ্যাস করে ফেলতে পেরেছি।”
সত্যজিৎ রায় নিজে ফেলুদাকে নিয়ে দুটো সিনেমা বানিয়েছিলেন। তার পরিচালনায় সোনার কেল্লা এবং জয় বাবা ফেলুনাথ চলচ্চিত্রে ফেলুদার ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। অনেক দর্শকের মনে ফেলুদা বলতে এখনও সৌমিত্রের চেহারাই আসে।
সত্যজিতের ছেলে সন্দীপ রায় পরে ফেলুদার গল্প নিয়ে বানিয়েছেন বাক্স রহস্য, বোম্বাইয়ের বোম্বেটে, কৈলাসে কেলেঙ্কারি, টিনটোরেটোর যীশু, গোরস্থানে সাবধান, রয়েল বেঙ্গল রহস্য আর ডবল ফেলুদা। এসব সিনেমায় প্রদোষ চন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদা হয়েছেন সব্যসাচী চক্রবর্তী। অনেক দর্শকের মতে, ফেলুদা চরিত্রটিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে পেরেছেন সব্যসাচী।
সন্দীপ রায় ২০১৪ সালে বাদশাহী আংটি বানিয়েছিলেন ফেলুদা চরিত্রে আবীর চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে। পরে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ২০১৭ সালে ‘তিনটি গল্প’ নিয়ে একটি সিরিজ পরিচালনা করেন, সেখানে নিজেই ফেলুদা হিসেবে আবির্ভূত হন।
সে প্রসঙ্গ ধরে আনন্দবাজার জানতে চেয়েছিল, ‘সাবাশ ফেলুদা’য় কেন পরমব্রত নির্মাতার ভূমিকায় এলেন না।
ওয়েব সিরিজ ‘সাবাশ ফেলুদা’র টিজার প্রকাশ
উত্তরে এ অভিনেতা বলেন, “সেসময় ওটিটি সেভাবে শুরুই হয়নি। একদমই জিরো বাজেটে সিনেমাটি করেছিলাম। এখন আবার যখন আমরা প্রযোজনার দায়িত্ব নিলাম, সেই সাথে জি ফাইভের মত একটা প্ল্যাটফর্ম এগিয়ে এল, তখন আমাদের মনে হয়েছিল, এমন কাউকে পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া উচিত যিনি থ্রিলারে সিদ্ধহস্ত।
“সেই কারণেই অরিন্দমদার (অরিন্দম শীল) কথা আমরা ভাবি। এই মুহূর্তে আমি ফেলুদার মত একটা কাজে অভিনয় আর পরিচালনা একসঙ্গে করতে চাইনি। ভবিষ্যতেও আর করব না। তাই স্ক্রিপ্ট লেখার সময়ও আমি একদমই ছিলাম না। আমার ভূমিকা এখানে শুধুই এক জন অভিনেতার।”
‘সাবাশ ফেলুদা’য় পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তোপসে হয়েছেন ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়। আরও অভিনয় করেছেন ঋত্বিক চক্রবর্তী। অরিন্দম শীলের পরিচালনায় নির্মিত এ সিরিজ শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জিফাইভে।